Wednesday, October 4, 2023
বাড়িউত্তরণ প্রতিবেদনপ্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শেষ না দেখে ছাড়বেন না

প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শেষ না দেখে ছাড়বেন না

উত্তরণ প্রতিবেদন: আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তের জন্য পুরো আওয়ামী লীগ বদনামের ভাগিদার হতে পারে না। আওয়ামী লীগের ইমেজকে যারা ক্ষুণ্ন করছে, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অ্যাকশন শুরু হয়েছে। তিনি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শেষ না দেখে ছাড়বেন না। এসব গুটিকয়েক দুর্বৃত্তদের স্থান আওয়ামী লীগে হতে পারে না। দলকে পরিচ্ছন্ন ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে গুটিকয়েক এসব লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে, এই লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। ক্যাসিনো, মদ, জুয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে তারও শেষ হবে। জড়িত কেউই রেহাই পাবেন না।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিনিয়র নেতারা এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ‘উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার তুমি, তুমিই বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সারাদেশে যখন প্রশংসিত হচ্ছে তখন বিএনপি এই চরম সত্যকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। ভালো কাজ বলেই এটি নিয়ে তারা সমালোচনা করছে। তারা চায় না দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় এসে সব মদ, জুয়া নিষিদ্ধ করছিলেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তা চালু করলেন। সে-সময় পানের দোকানদারও মদ বিক্রি করত। জিয়া মদের লাইন্সেস জাতীয়করণ করেছিল, সেই সময়ে হাউজি থেকে শুরু করে জুয়া খেলার সূত্রপাত্র হয়। এখন তো কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসছে। যারা ধরা পড়েছে সবাই বিএনপির সৃষ্টি।
তিনি বলেন, কোনো অপকর্মকারীকে দলে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী দিনরাত অনেক কষ্ট ও পরিশ্রম করে দেশের যে উন্নয়ন ও অর্জন করেছেন- সেটা গুটিকয়েক অপরাধীর জন্য ম্লান হতে দিতে পারি না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার জন্য সংগ্রাম শুরু করেছেন। শেখ হাসিনার জন্যই আজ বিশ্বে দেশ সম্মানের সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে। বিশ্বের যে কোনো জায়গায় উন্নয়ন ও অর্জন নিয়ে কথা বলতে গেলে বাংলাদেশের নাম অনায়াসে চলে আসে। চলে আসে শেখ হাসিনার নাম।
উপদেষ্টা পরিষদের অপর সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, শেখ হাসিনা জঙ্গি নির্মূল করেছেন। তিনি যেটা শুরু করেন, সেটা শেষ করেন। বিশ্বাস করি, আজ তিনি যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন, সেটাতেও সফল হবেন। তিনি বলেন, আজকে কিছু অনুপ্রবেশকারী দলে প্রবেশ করে আমাদের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ বিশাল রাজনৈতিক দল, কত দল এদেশে এসেছিল কিন্তু আজকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ক্যাসিনো জুয়া এগুলো আমাদের সংবিধান পরিপন্থী। সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে আছে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ, এগুলো কিন্তু জিয়াউর রহমান চালু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু একটা সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি তিনি তার লক্ষে পৌঁছবেন। জিয়াউর রহমান বলেছিলেন তিনি রাজনীতি রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে দিয়ে যাব, তিনি কঠিন করে দিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, আজকের বিশ্বে ক্ষমতাধর শুধু নন, সেরা ১০ জনের মধ্যে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। নিজ কর্মগুণে তিনি দেশে-বিদেশে সমাদৃত। বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। আর কীভাবে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা যায়- সেটাই শেখ হাসিনার লক্ষ্য।
গুটিকয়েক লোকের দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, যারা বিএনপি ও ফ্রিডম পার্টির লোকদের বৃহৎ এ দলে এনেছেন, অনুপ্রবেশে সহায়তা করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়েছে, এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। যারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মাদককারবারি তাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়েছে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও শুরু হয়েছে। কারণ এদের অপকর্মের দায়ভার আওয়ামী লীগ নেবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নের সুফল আজ প্রতিটি জনপদে পৌঁছে গেছে। বিশ্বের দুজন সফল প্রধানমন্ত্রীর একজন হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বসমাজে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, ’৭৫-পরবর্তী সময়ে এদেশের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষগুলোই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিল। জিয়াউর রহমান একটি হীনউদ্দেশ্যে বিএনপি গঠন করেছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোই তার মূল উদ্দেশ্য ছিল। আজ সেই পাকিস্তান বলছেÑ আজ আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। তিনি বলেন, বাংলার মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যুগ যুগ বেঁচে থেকে আমাদের সেবা করুন, এই কামনাই করি।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপি বলেন, বাংলাদেশে এখন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। তার সফলতায় বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
‘ক্যাসিনো, মদ জুয়া নিয়ে বিএনপির কথা বলার অধিকার নেই’ জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি বলেন, এদেশে ক্যাসিনো মদ জুয়া শুরু করেছে জিয়াউর রহমান। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে টাকা মেরে দুর্নীতি করেছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গঠনতান্ত্রিকভাবেই বিএনপি দুর্নীতিবাজ দল।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমাম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, ব্যারিস্টার মহিবুল হক চৌধুরী নওফেল এমপি, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, মির্জা আজম এমপি, আজমত উল্লাহ খান, রিয়াজুল কবির কাওছার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য