উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বিএনপির পাঁচ বছরের দুঃশাসন এবং আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ মানুষ হত্যার রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতেও বিশ্বাসী নয়। আমরা যদি তাই বিশ্বাস করতাম, তাহলে এদেশে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না। কারণ, বিএনপির হাতে আমরা যে পরিমাণ হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছি তা আর কেউ হয়নি। এদেশে জঙ্গি সৃষ্টি, অগ্নিসন্ত্রাস, বোমা হামলা, মানি লন্ডারিং, এতিমের টাকা আত্মসাৎসহ হেন অপকর্ম নেই যে খালেদা জিয়া, তার পুত্রদ্বয় এবং তার দলের নেতারা করেন নি।
প্রশ্নকর্তা বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম রুমিন ফারহানার প্রশ্নের তীব্র সমালোচনা করে লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (রুমিন) একটি অনাকাক্সিক্ষত, অসংসদীয় ও অবান্তর প্রশ্ন এনেছেন। তিনি মানুষ হত্যা আর মশা মারাকে সমান্তরালে নিয়ে এসেছেন। সংসদ সদস্যের নেত্রী খালেদা জিয়ার মতো দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটালেই কি প্রশ্নকারী খুশি হতেন?
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিএনপির সংসদ সদস্য রুহিন ফারহানার প্রশ্ন ছিল- দেশে বর্তমানে মানুষ হত্যা হতে মশা মারা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রয়োজন হয়। এর লিখিত জবাবে সংসদ নেতা বলেন, রাষ্ট্র একটি যন্ত্রের মতোন। এই যন্ত্রের বিভিন্ন কলকব্জা যখন সমন্বিতভাবে কাজ করে তখনই রাষ্ট্র ভালো থাকে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্র ভালোভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের অকার্যকর হওয়ার কথা উনি (রুমিন) বলছেন। অকার্যকর রাষ্ট্রের উদাহরণ তো বিএনপিই সৃষ্টি করেছিল। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসত রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তির কাছ থেকে। প্রধানমন্ত্রী ঘুমিয়ে থাকতেন, সিদ্ধান্ত দিতেন তার পুত্র হাওয়া ভবন থেকে। মন্ত্রী-সচিবরা হাওয়া ভবন থেকে নির্দেশের অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন।
প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংসদীয় সরকার-ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকারপ্রধানের অন্যতম কাজ এবং দায়িত্ব হলো সকল মন্ত্রণালয়ের/বিভাগের কাজের সমন্বয় করা। মন্ত্রীদের কাজের তদারকি করা। জনগণ আমাকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। আরাম-আয়েসের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করিনি।
তিনি বলেন, আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। যিনি তার জীবনটাই উৎসর্গ করেছিলেন এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। তার কন্যা হিসেবে জনগণের প্রতি আমার দায়বদ্ধতার একটা আদালা জায়গা রয়েছে। আমি সেটাই প্রতিপালনের চেষ্টা করি। সেজন্যই দিনরাত পরিশ্রম করি। কোনো প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করার জন্য নয়, সকল প্রতিষ্ঠানকে আরও সক্রিয় রাখার জন্য আমি সদাসর্বদা সচেষ্ট থাকি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা এবং আমাদের জনগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে একটা মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে, জিডিপি’র প্রবৃদ্ধিতে বিশ্বসেরার জায়গায় দখল করেছে। এসব আপনাআপনি হয়নি। সকলের পরিশ্রমে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান অকার্যকর থাকলে এসব অর্জন সম্ভব হতো না।
সংসদ নেতা বলেন, প্রশ্নকর্তা বিএনপি এমপির দল, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ আমার মা, তিন ভাই এবং অন্তঃসত্ত্বা ভ্রাতৃবধূসহ আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের রক্তে রঞ্জিত হয়ে খুনিদের সহায়তায় ক্ষমতায় বসেছিলেন। জিয়াউর রহমানের প্রতিহিংসার বলি হয়ে জেলখানায় নির্মমভাবে নিহত হন জাতীয় চার নেতা। জিয়াউর রহমানই তো এদেশে হত্যা, ক্যু’র অপরাজনীতি শুরু করে। সশস্ত্র বাহিনীর শত শত অফিসার, সৈনিককে হত্যা করে। ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের সংস্কৃতি চালু করে। একটা পুরো প্রজন্মকে নষ্ট করে দেয় এই মেজর জিয়া। তাই বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যের মুখে মানুষ মারার বিষয়টি অবলীলায় চলে আসে। এটাই তো তাদের দলীয় আদর্শ। আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া যে তার (জিয়া) চেয়েও এক কাঠি সরেস, সে প্রমাণ তিনি করেছেন। হেন কোনো অপকর্ম নেই যে তিনি, তার পুত্রদ্বয় এবং তার দলের নেতারা করেন নি।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রশ্নকর্তার নেত্রী খালেদা জিয়াও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার শাসনামলের পাঁচ বছরে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি, মমতাজ উদ্দিনসহ আমাদের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে-সহ আওয়ামী লীগের পুরো নেতৃত্বকে নিঃশেষ করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় মদদে খুনের নেশায় মত্ত হয়েছিল তার দল বিএনপি।