Monday, October 2, 2023
বাড়িদশম বর্ষ,একাদশ সংখ্যা,অক্টোবর-২০২০প্রণব মুখার্জির স্মৃতি আজও অম্লান

প্রণব মুখার্জির স্মৃতি আজও অম্লান

ড. এ কে আব্দুল মোমেন : ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সদ্য প্রয়াত প্রণব মুখার্জির কথা বাংলাদেশে উঠলেই একটি কথা সকলে এক বাক্যে বলেনÑ বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। এই খ্যাতির পেছনে বহু ঘটনা রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকালে, স্বাধীনতা-পরবর্তী নানা বিপদে-আপদে যাকে বাংলাদেশের মানুষ পাশে পেয়েছে, তিনি প্রণব মুখার্জি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও অন্যতম অভিভাবকের মতো ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সঙ্গে যে সকল নেতার নাম জড়িয়ে আছে, তাদের প্রায় সকলেই প্রণব মুখার্জির কাছে নানাভাবে ভালোবাসা, মমতা, আদর ও প্রশ্রয় পেয়েছেন। প্রণব মুখার্জিকে ভারতের সেরা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ভারতের মানুষই অভিহিত করতে চান। তিনি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও সরকারের বিভিন্ন স্তরে নিষ্ঠার সঙ্গে বহুকাল কর্তব্য পালন করে ধীরে ধীরে দায়িত্ব ও ভালোবাসার সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছেনÑ এ-কথা সকলের জানা। সে-আলাপে আজ আর যেতে চাই না। অনেক বড় বড় রাজনীতিক প্রণব মুখার্জিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছেন। কাগজে লিখছেন। আমি যদি এই মহান নেতা ও ভালো মানুষের অবর্তমানে, তার প্রস্থানের ক্ষণে আমার সঙ্গে থাকা স্মৃতিটুকু আলোয় না আনি, তবে অবিচার হবে।
টুকরো টুকরো বেশ কিছু স্মৃতি জমে আছে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে, যাকে আমি দাদা বলে ডাকতাম। পরবর্তীতে তিনি আমার বড় ভাই সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বন্ধু ছিলেন। প্রথম সাক্ষাতেই আমি প্রণব মুখার্জিকে দাদা ডেকেছি, তিনিও ছোট ভাইয়ের মতো আমাকে কাছে টেনেছেন। বড় ভাই-ছোট ভাই সম্পর্কের বাইরেও নানা ফোরামে, নানা ঘটনায় তার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলাপ করতে গিয়ে বিস্ময়ে ভেবেছিÑ কী গভীরভাবে তিনি ভালোবাসেন বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের গণমানুষের উন্নতির চিন্তা তিনি করেছেন সব সময়। বাংলাদেশের মানুষের বিপদের দিনে পাশে দাঁড়িয়ে তিনি এ প্রমাণ রেখে গেছেন।
সম্ভবত ১৯৭৩ সালের ঘটনা, প্রণবদা ঢাকায় এলেন। আমি উনাকে ঢাকা শহর ঘুরে দেখাই। তাকে আমার খুব পছন্দ হয়ে যায়। তিনি পুরান ঢাকার নবাবপুর, মিটফোর্ড ও জগন্নাথ কলেজ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি অনেক জায়গায় যেতে চাইলেন। উনাকে গাড়িতে করে নিয়ে গেলাম, আমি ছিলাম চালকের আসনে, উনি আমার পাশের সিটে। ওয়ারি র‌্যাংঙ্কিং স্ট্রিট, ইসলামপুর, নবাবপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দেখালাম তাকে। চলতে চলতে তিনি নানা বিষয়ে আলাপ করলেন। অনেক কথাই হৃদয়ে গেঁথে গেল। খুব পছন্দ হলো। কখনও নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অনেক প্রশংসা করলেন। কথায় কথায় এও বললেন, আপনারা খুব ভাগ্যবান। দেশ স্বাধীন হয়ে খুব ভালো হয়েছে, আপনারা যারা মেজর ছিলেন তারা জেনারেল হয়ে যাবেন, যারা ছোটখাটো চাকরি করতেন, তারা সেক্রেটারি হয়ে যাবেন। নতুন অনেকে অনেক দায়িত্ব পাবেন। ওনার এসব আলাপ অনেক ক্ষেত্রেই সত্য হয়েছিল।
পরের বছর আমি ভারত সফরে যাই। সে-সময়ে আমি তখনকার বাণিজ্যমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করি। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঊঝঈঅচ সম্মেলনে আমরা দিল্লি যাই। ভারতে পৌঁছার পরপর বিমানবন্দরে আকস্মিকভাবে প্রণব মুখার্জির সাথে দেখা হয়ে গেল। উনি তখন ভারতের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী। সেই হিসেবে উনি আমাদের রিসিভ করতে এসেছেন। আমরা তখন বিমান থেকে নামব। তখন বিমান থেকে বের হওয়ার জন্য দুই দিকে সিঁড়ি ছিল। একটা উচ্চপর্যায়ের (আপার ক্লাসের) লোকদের জন্য, আরেকটি সকলের জন্য ইকোনমি ক্লাস।
বঙ্গবন্ধু সরকারের তখনকার নিয়ম ছিল, বিদেশে যাতায়াতকালে কোনো মন্ত্রী যদি প্রতিনিধি দলের নেতা না হতেন, তবে তিনি আপার ক্লাসে যেতে পারতেন না ব্যয় কমানোর জন্য। আমাদের মন্ত্রী প্রতিনিধির দলের নেতা ছিলেন। তবে নেতা হলেও আপার ক্লাসে যেতে হলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হতো। মন্ত্রী অনুমতি চাননি। তখন আমাদের মন্ত্রী ছিলেন প্রতিনিধি দলের নেতা, উপনেতা ছিলেন ড. আশরাফুজ্জামান। ড. আশরাফুজ্জামান আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। আমাদের সঙ্গে আরেকজন ছিলেন। তিনি মহিউদ্দিন সাহেব; পরিকল্পনা কমিশনের টেকনিক্যাল এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রামপ্রধান। আমরা এই ক’জন গেলাম ঢাকা থেকে। সেখান থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন ভারতে আমাদের তৎকালীন হাইকমিশনার ড. এমআর মল্লিক সাহেব। কিন্তু ড. মল্লিক সাহেব আমাদের রিসিভ করে চলে গেলেন, পুরো সময় থাকতে পারলেন না। কারণ, ওনার সম্ভবত নেপালে ডিউটি ছিল।
তখন ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন আতাউল হুদা। ওখানে আমাদের সাথে ছিলেন কমার্শিয়াল কাউন্সিলর কামরুল হুদা। আশরাফুজ্জামান সাহেব ও মহিউদ্দিন সাহেব আপার ক্লাস দিয়ে গেলেন। এশিয়ান ফাউন্ডেশন উনাদের টিকিট ও থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করে। মহিউদ্দিন সাহেব আমাদেরও বলেছিলেন আপার ক্লাসে যেতে; কিন্তু আমরা তা নেইনি। আমরা ইকোনমি ক্লাসের সিঁড়ি দিয়ে সবচেয়ে শেষে নামলাম। প্রণব বাবু আমাদের রিসিভ করলেন। আমরা সকলে একসাথে হাঁটছি, তখন প্রণব বাবু আমার পাশেই হাঁটছেন। তিনি বললেন, “ত্যাগী লোক না থাকলে কোনো দেশ স্বাধীন হয় না। মিনিস্টার সাহেব আপার ক্লাসে আসতে পারতেন, অথচ তিনি তা করেননি। এ থেকেই বোঝা যায়, যোগ্য নেতার অধীনে যোগ্য লোকরাই কাজ করছেন। কেউ ঠেকাতে পারবে না তোমাদের দেশের উন্নতি।” পরের দিন বিজ্ঞান ভবনে আমাদের অনুষ্ঠান। সেখানে আরও অনেকেই ছিলেন। ঊঝঈঅচ-এর সহ-সভাপতি পদের জন্য বাংলাদেশ একজন প্রার্থী। আশরাফুজ্জামান সাহেব ঠিক করলেন যে, আমরা বিভিন্নজন বিভিন্ন দেশের রিসেপশনে যাব। এবং সেখানে গিয়ে আমাদের দলনেতার স্বপক্ষে ক্যাম্পেইন করব। আমাকে পাঠানো হলো নাউরু রিপাবলিকের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে। নাউরু রিপাবলিক কোন দেশ তখনও জানি না। কী তাদের ব্যবসা এবং অস্ট্রেলিয়ার পাশে কত উন্নত দেশ; তার সম্পর্কেও ধারণা ছিল না। তখন গুগলও ছিল না যে, তথ্য পেতে পারি। যাই হোক, অগত্য যেতেই হলো। তারা আমাকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে গ্রহণ করলেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে তারা আমাকে খুব মান দিলেন। স্বয়ং নাউরুর রাষ্ট্রপতি ড. রবার্ট ডি হোমারের সঙ্গেও আমার আলাপ করিয়ে দিলেন। বিরাট দেহ, উঁচু ও লম্বা অনেক। তিনি আমাদের দেশের পরিস্থিতি জানতে চাইলেন। আমি বললাম, দেশ স্বাধীন হলো মাত্র ক’বছর। দেশের অবকাঠামো নতুন করে নির্মাণ করতে হচ্ছে। যোগাযোগের জন্য রাস্তাঘাট, রেলপথ তৈরি করতে হচ্ছে। পুনর্গঠনে সরকারকে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। এরপর আবার ভয়াবহ এলো বন্যা; যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের বন্যা বেশ ভয়ানক ছিল। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকও মারা যায়। সব শুনে নাউরুর রাষ্ট্রপতি আমাদের সহযোগিতা করার কথা বললেন। এটাও বললেন, তারা ৩ মিলিয়ন ডলার দেবে। আমি তখন তাজ্জব হয়ে গেলামÑ ওই সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার সাহায্য-সহায়তার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধি দল থেকে আমাকে যখন নাউরুর প্রতিনিধি দলে পাঠানো হলো, তখনও আমি দেশটির নাম শুনিনি, আর এখন এত বড় সুখবর। নতুন এই দেশ থেকে এত ডলার পাওয়া যাবে তা আমার ধারণার বাইরে ছিল।
পরে জেনেছি, নাউরু রিপাবলিক দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের মাইক্রোনেশিয়া অঞ্চলের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ-রাষ্ট্র। এটি মনে হয় বিশ্বের ক্ষুদ্রতম দ্বীপ-রাষ্ট্র। মাত্র ২১ বর্গকিলোমিটারের এ দেশটিও আমাদের খুব বেশি আগে স্বাধীন হয়নি। ১৯৬৮ সালে স্বাধীনতা অর্জনকারী এ দেশটি একমাত্র দেশ, যার কোনো রাজধানী নেই। দেশে সেই সময়ে লোকসংখ্যা মাত্র ৪ হাজার। তবে তারা ফসফেট বিক্রি করে যথেষ্ট ইনকাম করে। নাউরুর প্রতিনিধি দল আমাকে জানালেন যে, তাদের প্রেসিডেন্ট একজন সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী। এবং তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদম মালিক। আমি তাদের জানালাম যে, তারা আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন করলে আমরাও তাদের প্রার্থীকে সমর্থন দেব।
রিসেপশন শেষ করে ফিরে এসে দেখি আমার মন্ত্রী ও সঙ্গী-সাথী তখনও ফিরেননি। তখন নিচে হোটেলের লবিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। ওই হোটেলে ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকাদের কি যেন অনুষ্ঠান ছিল, একে একে দিলীপ কুমার, হেমা মালিনী এবং আরও অনেক নামিদামি লোকেরা আসছেন-যাচ্ছেন। যার জন্য লবি ভর্তি লোকজন। আমার মন্ত্রী মহোদয় এলেন রাত ১০টার দিকে। সাথে সাথে সুখবরটি দিলাম এবং এবং সরাসরি উনার রুমে গেলাম। তাকে সুখবর দিলাম যে, নাউরু আমাদের বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা দেবে। আমার সাথে মন্ত্রী মহোদয়সহ প্রতিনিধি দলের সবাই খুশি হলেন। তবে আমাদের দিল্লিস্থ উপ-হাইকমিশনার আতাউল করিম সাহেব বললেন যে, নাউরু তো বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি, আমরাও দেইনি। সুতরাং, তাদের অনুদান কীভাবে নেব। আমার বস তখন বললেন, “চলেন সারনিয়াবত সাহেবের রুমে যাই।” ওই সময় বাংলাদেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রব সারনিয়াবত সাহেব দিল্লিতে একই হোটেলে অবস্থান করছিলেন। উনার রুমে গিয়ে উনাকে সুখবরটি জানালে তিনি বঙ্গবন্ধুকে ফোন করলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, তিনি স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছেন এবং কী কী করতে হবে তা আপনারা করেন।
পরদিন সকালে দিল্লির বিরাট বিজ্ঞান ভবনে প্রণবদার সঙ্গে আবার দেখা হলো। আমি আনন্দের সাথে তাকে ঘটনাটি জানাই। তিনি জানতে চাইলেন, সহায়তার অর্থ তারা কীভাবে দেবে। এই তথ্য আমার কাছে নেই বলায় তিনি ফের বললেন, চেকের মাধ্যমে দিতে পারে। তিনি বললেন, চেক যদি প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর উপস্থিতিতে দেয়, তবে আরও ভালো হয়। আমরা তখন নাউরুর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বললাম, তোমরা যে আমাদের অর্থ সাহায্য করতে চাও তা শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর উপস্থিতিতে করলে ভালো হয়। তারা জলদি করে চেক তৈরি করে নিয়ে এলো, আমাদের আগ্রহ অনুযায়ী এবং প্রণবদার পরামর্শে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সামনেই নাউরুর প্রেসিডেন্ট আমাদের চেক হস্তান্তর করলেন। এ ঘটনা আজও আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী নাউরুর রাষ্ট্রপতি ও আমার মন্ত্রীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তারা চেকবিনিময় করেন; পেছনে আমি এবং প্রধানমন্ত্রীর সিল্কের শাড়ির আঁচল আমার গায়ের ওপর বারবার পড়েছে এবং পাশেই প্রণবদা।
আরেকটা ঘটনা, আমি তখন আমেরিকায়। প্রণবদা এসেছেন শুনে তার সাথে দেখা করতে যাই। একটু পরিচয় দিতেই চিনে ফেললেন এবং বারবার মাথা নাড়িয়ে সালাম গ্রহণ করলেন। জানতে চাইলেন কী করছি এবং পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিলেন।
তিনি ভারতের ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি পাওয়ায় ধন্যবাদ দিয়ে চিঠি লিখি এবং পরবর্তীতে আবার সাক্ষাতের সুযোগ হয়।
আমি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সর্বপ্রথম ভারত সফরে যাই ২০১৯ সালে। ওই সফরকালে আমি তার সঙ্গে দেখা করি। তাকে মনে করিয়ে দেই ১৯৭৩ সালের আমাদের প্রথম সাক্ষাতের কথা এবং ১৯৭৪ সালের অমর বাণীÑ “দেশ স্বাধীন হয় না ত্যাগী লোক না হলে।” দেখলাম, তিনি পুরনো সেসব দিনের কথা অনায়াসে মনে করতে পারলেন, কিছুই ভুলে যাননি। তিনি সেসব দিন থেকে স্মৃতিচারণ করলেন। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলেন, আমার বড় ভাই ও তার বন্ধু আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথা। জানতে চাইলেন, অবসরে তিনি কেমন আছেন, সময় কাটছে কীভাবে? আমিও প্রবীণ এই নেতাকে বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আমার ভাইয়ের সম্পর্কে জানালাম। বললাম, তিনি এখন বই পড়ছেন, লিখছেন, অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিকথা। তিনিও জানালেন যে তিনি বই লিখছেন এবং নিজের ৩টি বই উপহার দিলেন। আমি তাকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দাওয়াত দিলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে গ্রহণ করলেন। তবে বললেন, ইদানীং শরীর ভালো যাচ্ছে না। সাক্ষাৎ শেষে যখন উঠব, দাদা আমাকে বললেনÑ বাংলাদেশের যে কোনো প্রয়োজনের কথা যেন আমি তাকে জানাই, তিনি সাধ্যমতো সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন। বুঝলাম, বাংলাদেশের মানুষকে তিনি ব্লাঙ্ক চেক দিলেন। তার লেখা ৩টি গ্রন্থ আমাকে উপহার হিসেবে দিলেন বেরিয়ে আসবার ক্ষণে। সেদিনের কথা শুধু নয়; বরং তার সঙ্গে যতবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছেÑ তার সবটুকুই স্মৃতিতে এখনও অমলিনÑ ভাস্বর হয়ে আছে, থাকবে।
প্রণব দাদা বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। আমাকে অনেক উপদেশ দিয়েছেন। তিনি দেখতে অধ্যাপকের মতো। তার মতো মানুষের চলে যাওয়া ভারতের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। তার প্রস্থান বাংলাদেশের জন্য শোক ও দুঃখের কারণ। তিনি জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত বাংলাদেশকে ও বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবেসে গেছেন। তিনি আরও বহুকাল থাকলে বাংলাদেশের মানুষ তার প্রজ্ঞা ও ভালোবাসা থেকে উপকৃত হতো।

লেখক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুনশ্চঃ সতর্কবাণী
পরবর্তী নিবন্ধকবিতা
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য