উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১০ বছরে তার সরকারের আমলে সবদিক থেকে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। বাঙালি জাতিকে শোষণ করা পাকিস্তানিরাও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছে ‘হামকো বাংলাদেশ বানা দো’। আমাদের (পাকিস্তানি) বাংলাদেশের মতো উন্নত করে দাও, সেটা তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্বের কেউ আজকে বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখে না। আজ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখেই দেখতে হয় যে, বাংলাদেশও পারে।
গত ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৬-১৭ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ থেকে আমরা বাংলাদেশকে মুক্ত করেছিলাম, তারা (পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী) একসময় বলেছিল, বাংলাদেশের মানুষ গরিব, ওটা (বাংলাদেশ) একটা বোঝা ছিল, চলে গেছে (স্বাধীন) ভালো হয়েছে। অথচ আজকে তারাই বলতে বাধ্য হয়, আমাদের বাংলাদেশের মতো উন্নত করে দাও।
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আজকে উন্নয়নের যে গতি, সেটা যেন কখনও থেমে না যায়। স্বাধীন বাংলাদেশ যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছে, সে সম্মান ধরে রেখে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করতে চাই। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সবসময়ই ব্যবসায়ীদের পাশে আছি। আমরা ব্যবসা করতে আসিনি। ব্যবসায়ীদের সবরকম সহযোগিতা দিয়ে দেশ যেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয় সেই ব্যবস্থাই সরকার করছে।
দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশের প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবে, তাদের কাজে আমরা সহযোগিতা করব। রপ্তানি আরও বাড়াতে নতুন নতুন পণ্য সংযোজন এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানের জন্য রপ্তানিকারকদের আহŸানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম ও এফবিসিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। রপ্তানি ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বেগম ফাতিমা ইয়ামিন।
দেশের রপ্তানি খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অনুষ্ঠানে ২৮টি ক্যাটাগরিতে ৬৬টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৬-১৭’র ২৯টি স্বর্ণ, ২১টি রৌপ্য এবং ১৬টি ব্রঞ্জ ট্রফি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড’ টানা ষষ্ঠবারের মতো শ্রেষ্ঠ রপ্তানিকারক হিসেবে ২০১৬-১৭ সালের রপ্তানি স্বর্ণ ট্রফি জয় করে। ‘জাবের অ্যান্ড জুবায়ের লিমিটেড’ ২০১৭ সালের সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের জন্য আরও একটি স্বর্ণ ট্রফি লাভ করে। অনুষ্ঠানে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণের ওপর একটি ভিডিও চিত্রও প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যগণ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং শিল্প সংস্থার প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিসহ বিদেশি কূটনীতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রপ্তানিকারকদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা যে পণ্য রপ্তানি করছি, সেখানে আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আমাদের নতুন নতুন পণ্য সংযোজন করতে হবে রপ্তানির ক্ষেত্রে। পণ্য সংযোজনের জন্য আমাদের বহুমুখীকরণ করতে হবে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর কোন্ কোন্ দেশে কোন জাতীয় পণ্যের চাহিদা বেশি সেদিকটায় বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নতুন পণ্য, নতুন দেশ। এই নতুন দেশে নতুন পণ্য খুঁজে যাতে বের করতে পারি আর রপ্তানি করতে পারি, আমাদের বাজারটা যাতে আরও সম্প্রসারিত হয় সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংক ঋণ নিতে গেলে অনেক উচ্চহারে সুদ দিয়ে ঋণ নিতে হয় ডবল ডিজিটে। ইতোমধ্যে আমরা নির্দেশ দিয়েছি এটা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। কিছু কিছু ব্যাংক মেনেছে, কিছু কিছু ব্যাংক এখনও মানেনি। তবে সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তাদের যা যা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সেটাও আমরা করে দিচ্ছি। কাজেই এটাকে আমরা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে চাই।
ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার উদ্যোগের কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি, যাতে করে বিনিয়োগটা সহজ হয়। তাছাড়া বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিষয়ও সহজ করে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু যাতে অটোমেশনের মাধ্যমে হয় সেই পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কাজ করছেন তারা। যখনই আমরা বিনিয়োগের কথা বলি, তখন বলি একটা দক্ষ যুব সমাজ আছে। এই যুব সমাজই আমাদের শক্তি। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে দেশে ও বিদেশে কাজে লাগবে। সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নিচ্ছি।