Tuesday, December 5, 2023
বাড়িSliderপদ্মা সেতু : এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক

পদ্মা সেতু : এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক

সম্পাদকীয়: স্বাধীনতা প্রিয় বাঙালি জাতি বিশ্বের বুকে তার শৌর্য, বীর্য, সক্ষমতার প্রমাণ একবার দেখিয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে। আমরা অর্জন করেছিলাম স্বাধীন সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্র বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধ শতাব্দী পর আবার বাঙালি জাতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনায় সততা, সাহস ও সক্ষমতার আর এক যুগান্তকারী ঘটনার সাক্ষী হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে। গত ২৫ জুন দেশবাসীর স্বপ্ন জয়ের ইতিহাসে আর একটি গর্বের দিন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই শুভদিনে বঙ্গবন্ধু-কন্যার সাহসী পদক্ষেপের কৃতজ্ঞতা জানাতে এবং একটি নতুন বিজয় উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য পদ্মার উভয় পাড়ে সমবেত হয়েছিল লাখ লাখ জনতা। পদ্মা সেতু আজ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীক। কারিগরি সামর্থ্যরে প্রতীক। পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের সদিচ্ছায় ও সামর্থ্যরে বাস্তব রূপ আজ পদ্মা সেতু। প্রমত্তা পদ্মাকে বসে এনে বাঙালির স্বপ্ন পূরণের গল্পটা এত সহজ ছিল না। দেশি ও বিদেশি অনেক যড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সফলতা ছিনিয়ে আনতে হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। বিশ্বব্যাংকসহ বৃহৎ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো অলীক ও খোঁড়া যুক্তিতে প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল। যদিও কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণও হয়েছে।
কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র নায়কোচিত দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। তাই আমরা এখন গর্ব করে বলতে পারছি- ‘আমাদের টাকায় আমাদের সেতু, বাংলাদেশের পদ্মা সেতু’। দেশরতœ শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জয়ী হয়ে গর্বিত করেছেন দেশবাসীকে। বাংলাদেশ মাথানত না করে বিশ্বকে জানান দিয়েছে ‘আমরাও পারি’। উদ্বোধনী বক্তৃতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় দ্রোহের কবি, তারুণ্যের কবি সুকান্তের কবিতা- “সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী/অবাক তাকিয়ে রয়ঃ/জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়বার নয়।” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অদম্য সাহসিকতা ও দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণেই কোটি জনতার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
পদ্মা সেতুর সরাসরি সুফল পাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৩ কোটি মানুষ। যোগাযোগ, পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন এবং পর্যটন খাতে গতি আসবে। পদ্মা সেতুÑ শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বদলে দেবে না, পাল্টে যাবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিশ্বব্যাংকের মতে, পদ্মা সেতু দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াবে ১.২ থেকে ১.৭ শতাংশ পর্যন্ত। এতে জিডিপির আকার কমপক্ষে ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়ে যাবে। এই সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বাংলাদেশ।
যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে সেতুটি যেমন কোটি মানুষের আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে দেশবিরোধী কুচক্রীদের যড়যন্ত্র এখনও থেমে নেই। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার ব্যাপারেও আমাদের সজাগ থাকতে হবে। যড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ জাতির সামনে এমনভাবে উন্মোচন করতে হবেÑ ভবিষ্যতে যাতে আমাদের অগ্রযাত্রায় কেউ বাধা হয়ে না দাঁড়াতে পারে। পদ্মা সেতু আজ আমাদের জাতীয় সম্পদ, গর্বের অংশীদার। এটি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের দক্ষতার প্রতীক।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করে বর্তমান সময়ে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারিÑ বাঙালি জাতির যা কিছু শুভ, যা কিছু কল্যাণকরÑ সবই এসেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অথবা তার যোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার হাতের স্পর্শে। পিতা দিয়েছেন স্বাধীনতা, কন্যা দিলেন মুক্তি। ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’Ñ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ যেন প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালির হৃদয়ে আশীর্বাণী হিসেবে কাজ করছে।
কেবল আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেতুর অন্যতম পদ্মা সেতু নির্মাণেই শেষ কথা হচ্ছে, শেষ কথাটি হলোÑ বাংলাদেশ অতীতের পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ ঝেড়ে ফেলে আধুনিক শিল্পনির্ভর এক নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের ভিত্তি রচনা করেছে। পদ্মা সেতু হচ্ছে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক, জাতীয় গৌরবের প্রতীক এবং বাঙালি জাতির অফুরন্ত প্রাণশক্তির প্রতীক।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য