অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না, মঙ্গলও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।
উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হাওড়ের প্রধান বাহন হচ্ছে নৌকা। আর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীকও নৌকা। এ জন্য তিনি আধুনিক উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণকে আবারও ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দিতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ গড়ে উঠেছে।
তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না, মঙ্গলও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। এরা ক্ষমতায় এসে লুটপাট করে বিদেশে গিয়ে আয়েশি জীবনযাপন করে। বিএনপি-জামাত বা ২০-দলীয় জোট কখনও মানুষের কল্যাণ করতে পারে না। কাজেই এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে জেলার হাওড় অধ্যুষিত মিঠামইন সদর ইউনিয়নের হেলিপ্যাড মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ দেওয়াসহ ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী হাওড়ের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামসহ গোটা হাওড় এলাকা একসময় ছিল অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত। তখন এখানে যোগাযোগের জন্য কোনো রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ছিল না। এমন কী রিকশা পর্যন্ত চলাচল করতে পারেনি। গত ১৪ বছরে বর্তমান সরকার দেশের আর্থ-সামাজিকভাবে যে উন্নয়ন সাধিত করেছে, তা আগের ২৯ বছরেও হয়নি। গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকার কারণেই এমন উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার লক্ষ্য সামনে নিয়ে তার আদর্শে আমরা চলছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলছি। এই বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। কোনো মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে না।
রাষ্ট্রপতির ছোটভাই মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল হক নূরুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রপতির বড়ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জিল্লুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এমএ আফজাল প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ, কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি ছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সভা পরিচালনা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহজাহান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব। সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য নৌকার আদলে ৪২ ফুট দৈর্ঘ্যরে বিশাল নৌকার মঞ্চ তৈরি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওড়াঞ্চল সারাবছর সড়ক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার ১০টি উপজেলায় প্রতিরক্ষা ওয়েব প্রটেকশন এবং খাল পুনঃখনন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তাছাড়া ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়ক, ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ উজানপুর-বাজিতপুর সড়ক প্রশস্ত উন্নীতকরণ কাজ করা হবে। এছাড়া ৬টি ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ-চামড়াঘাট সড়ক, কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া-টোক সড়ক প্রশস্ত উন্নীতকরণসহ হাওড়ের প্রতিরক্ষায় ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত ও নদী ভাঙনরোধে কাজ করছে সরকার।
এ সময় তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুমানগঞ্জ জেলায় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাওড়ে উড়াল সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গে টেনে বলেন, প্রতিটি হাওড়াঞ্চল, বিল, জলাভূমি অঞ্চলে রাস্তা হবে এলিভেটেড। এর ফলে বর্ষাকালে পানি চলাচল অব্যাহত থাকবে। মাছ চলাচলে ব্যাঘাত ঘটবে না। নৌকা চলাচল অব্যাহত থাকবে। আবার মানুষের যোগাযোগে সুবিধা হবে। প্রধানমন্ত্রী কিশোরগঞ্জের কৃতী সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন প্রসঙ্গে বলেন, কিশোরগঞ্জে ইতোমধ্যে শহিদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণসহ শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে করে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন ঘটবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, আবদুল হামিদ সাহেব, যিনি রাষ্ট্রপতি। তিনি এই অঞ্চল থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। এই দুর্গম অঞ্চলে মানুষের পাশে থাকা, তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হওয়া, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন।
তিনি যখন রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন তখন তিনি ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন এই অঞ্চলে একটা সেনানিবাস করার। তার উদ্দেশ্য হলো সেনানিবাস হলে এই অঞ্চলের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে। তারই ইচ্ছা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসটা আমরা গঠন করেছি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি সে-লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিনের সফরের শুরুতে বেলা ১১টা ২২ মিনিটে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল হামিদ সেনানিবাস’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে দুপুর পৌনে ১টার দিকে সেখান থেকে তিনি রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে আতিথ্য গ্রহণ করতে মিঠামইন সদরের কামালপুরে রাষ্ট্রপতির পৈতৃক নিবাসে যান। সেখানে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতি ও তার সহধর্মিণী রাশিদা হামিদসহ পরিবারের অন্যরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।