Monday, October 2, 2023
বাড়িSliderনভেম্বর ৭১

নভেম্বর ৭১

প্রতিদিন ছেলের হাতের লেখা মিলাই, প্রতিদিন দেখি কত মিল ‘দেখা’ শব্দের ‘খ’-এর সাথে, নভেম্বর মাসটা সারাজীবন ধরে চলতে থাকে, বছরের পর বছর যুগের পর যুগ। অর্ধশতাব্দী!

নাসিমা আনিস: আবুল হোসেন বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলল, শোন, পুঁটিমাছগুলো আজকেই শেষ করে ফেল না, কালকেও যেন চলে। আর ঘন ডাল আমি খেতে পারি না, কত বলব!
তা বটে, বাজারে মাছের দাম অনেক। ছ’আনায় কেনা একভাগা পুঁটিমাছ একদিনেই খেয়ে ফেলা কাজের কথা নয়। মমতাজের মাকে ডেকে বলে দিলাম অর্ধেক মাছ জ্বাল দিয়ে রাখো কালকের জন্য। জ্বাল দেওয়ার সময় একটু তেল দিও। আমার সেলাইর ক্লাস খোলা থাকলে মাঝে মাঝে লুকিয়ে আধা সের মুসুর ডাল এনে রেখে দেই কৌটায়, এ অঞ্চল তার নিবিড় তদারকির বাইরে। এ পয়সা আমার রিকশা ভাড়ার, সে-ই বেরুনোর মুখে গুনে গুনে আটআনা দেয়। নীলক্ষেত থেকে আজিমপুর লেডিস ক্লাব, কী আর এমন রাস্তা! এইটুকু হাঁটলে চারআনা বেঁচে যায়। এখন তো এসব হওয়ার জো নেই- অবরুদ্ধ সব, সবাই। মানে বাইরে আর যাওয়া নাই।
মিনিট পনেরো পরেই দরজায় কড়ার শব্দ; মৃদু, মোলায়েম। এই শব্দ নতুন, কয়েকদিন ধরে শুনি। আমিই দরজা খুলি। তপন সাহেব, চাবিটা হাতে দিয়ে মৃদু হাসেন, ধীরপায়ে চলে যান। আবার বিকালের মরা আলোয় এসে কড়া নাড়লে চেষ্টা করি আমিই খুলে দিতে, ছিটেফোঁটা আলো কোথাও কোথাও ঝিলমিল করে ওঠে কি! মাঝে মাঝে হেরফের হয় অবিশ্যি। বিকালে বেশিরভাগ সময় আবুল হোসেন বাগানে পানি দিতে যায় পাইপ দিয়ে। পাইপের কারবার, বেশ সময় লাগে তিনতলা থেকে পাইপ নামিয়ে গাছে পানি দিতে। ফেরার সময় কতকগুলো ডাঁটা, ঢেঁড়স আর পেঁপে তুলে আনে পাঁজাকোলে; একই জিনিস রোজ রোজ! এখন একই মানসিক উদ্বেগ রোজ রোজ আমাদের সবার। হ্যাঁ, কখনও কখনও একথোকা রোদলাগা মেহেদি ফুল থাকে আবুল হোসেনের হাতে, যা কী না একবোঝা পাইপের চাপে কু কু করে বটে! রাতে কোনাভাঙা গ্লাসের পানিতে মাদকতা তাকে প্রেমময় করে তোলে।
বেশিরভাগ সকালে আমার উলের মেশিনটা বন্ধ করে অপেক্ষা চলে মোলায়েম মৃদু কড়া নাড়ার। মেশিন খুলি আবুল হেসেনের জন্য, সে খুশি মনে বের হয়। ডান্ডিকার্ডটা গলায় ঝুলাতে ঝুলাতে বলে, বেশ মালা, তাই না! বলা হয়নি, আমার দুই মেয়ে আর এক ছেলে। কলেজে পড়া বড়মেয়ে খুব কবিতা লেখে আজকাল। আর ছোটমেয়েটা নিতান্তই ছোট, ওয়ানে পড়ে, এখনও কোনো কোনো রাতে বিছানা ভিজায়, আহা ও যে খুব ছোট! আর একমাত্র ছেলে ঢাকা কলেজে প্রথম বর্ষ, এপ্রিলে না-বলে চলে গেছে যুদ্ধে।
অনেক অপেক্ষা-প্রতীক্ষার পর পরশু একটা চিঠি পেয়েছি ছেলের, মানিকের হাতে পাঠানো, আফসার সাহেবের ছেলে মানিক, একসঙ্গেই গেছে ওরা। মাত্র দু-লাইন- ‘মা, চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি। বাঁচলে দেখা হবে, লড়াই চলছে মা। জুয়েল’
চিঠিটায় আমার কোনো স্বস্তি হয়নি, হাতের লেখাটা পরিচিত লাগে না। লীলা বলে, মা ভাইয়া অনেকদিন ধরে লেখে না, তাই এমন অথবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই হয়তো লিখে দিয়েছে, বোঝো না কী সময়! কিন্তু আমাকে টলাতে পারে না। আমার ছেলের হাতের লেখা আমি চিনি। যেমন সে ভালো ছাত্র তেমনি অপূর্ব তার হাতের লেখা। এ লেখা তার নয়, হতে পারে না।
আমার উলবোনার মেশিন এখন প্রায় অলস। গত বছরের কিছু কাজ পড়েছিল, সেগুলোই একটু একটু করে করি, আবার ফেলে রাখি। কখনও নতুন নতুন ডিজাইন বানাই, অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি, আবার খুলে নতুন ডিজাইন তৈরি করি… এসব চলে। আগে নতুন ডিজাইন তৈরি করে মেয়েকে কিংবা আবুল হোসেনকে দেখাতাম, এখন দেখাতে ভালো লাগে না।
আবুল হোসেনকে আমি দোষ দেই না। ছেলের চিন্তায় অস্থির। সে সব সময় বলতে চায়, ছেলেটা না-কি আমার মতো স্বাধীন আর একটু ত্যাড়া। বিয়ের পর আমি রজঃস্বলা হয়েছি, কাপড় সে-ই বেঁধে নিতে শিখিয়েছে, তাহলে ত্যাড়া হওয়ার হাত থেকে সে কেন রক্ষা করল না! সে আজও বিশ্বাস করে ছেলে আমায় অন্তত বলে গেছে। আজকাল আমি এসব অভিযোগ গিলে ফেলা শিখেছি, শীতল চোখে তাকিয়ে থেকে বলতে শিখেছি, কী যে বলেন! তারপর দুর্দান্ত অভিমান বুকে জমিয়ে রেখে মমতাজের মাকে শেখাইÑ একভাগা পুঁটি ইচ্ছে করলে কতদিন খাওয়া যায় জানো! ডাল কত পাতলা রান্না করেও মজা করা যায় জিরা রসুন ফোড়নে! আর যুদ্ধের বাজরে কম খরচ করে একটা লোককে কিছুটা স্বস্তিও দেওয়া যায়! আর নিজেকে নির্বিকার জীবনের পাঠ দিতে উঠেপড়ে লাগি, কাজ হয় না।
নিজেকে বোঝাই মানিকের দেওয়া চিঠিটা আসলে মানিকের লেখা, চিঠি আনতে ভুলে গেছে বলে বাড়িতে এসে নিজেই লিখেছে! খারাপ কিছু হলে অন্য কিছু বলত কিংবা দেখাই করত না!
আজকাল চাবিটা দিতে এলে তপন সাহেব একটু বেশিই হাসে, তারপর বলে, ছেলের খবর পেলেন!
আমি সবাইকে যেমন বলি, ছেলের ঠিক খবর পাইনি, কার একটা চিঠি…। তপন সাহেবকে তা বলি না। বলি, হ্যাঁ, ছেলে ভালো আছে, পাকসেনাদের সাথে খুব লড়াই করছে। সে তখনও হাসিটা মুখে অমলিন রাখে, চাবিটা হাতে দিয়ে চলে যায়।
আবুল হোসেন সেদিন একটা মৃগেল মাছ এনেছে, আধা সের ওজন হবে, দরজাটা আমিই খুলি। দেখি দুজনেই দরজায়। তপন সাহেব চাবিটা দেব দেব করছে; কিন্তু দিচ্ছে না। আবুল হোসেন ঘরে না ঢুকেই বলতে লাগল, ছোট ছোট টুকরা করবে, মানুষ তো মোটে চারজন, দুদিন চালাবে। আমি তাকে ঘরে ঢুকাতে চাই, মানে যা বলার ঘরে ঢুকেই বলতে পারে, দরজায় কেন! সিঁড়ির ভাঙা মাথাগুলো ধুলোয় ভরা, মাথার ওপর ঝুল মরা মাকড়সাসহ ঝুলছে, সুইপার শুভরানী কতদিন আসে না! শিববাড়িতে আর কে-ইবা ঝুঁকি নিয়ে থাকে যে ভোর হতেই ছুটে আসবে কাজে! সাতাশে মার্চে সবাই পালিয়েছি, আমরা তিন দিন জিনজিরা থেকে ফিরে এসেছি। তপন সাহেবের ওপর খুব রাগ হলো, আমাদের পারিবারিক এসব প্রাত্যহিকতা তার শুনবার দরকার কী! চাবি দিয়েই সিঁড়িতে পা রাখুক সে! আবুল হোসেন ঘরে ঢুকে গেল মাছ ঝুলাতে ঝুলাতে আর আমি চাবির জন্য অপেক্ষা করেই রইলাম। সে চাবিটা দেওয়ার সময় আজকে আর হাসি হাসি মুখ করে কিছু জানতে চাইল না।
ঘরে ঢুকে হুলুস্থূল, মাছটা ঘিরেই সব। তার আশা-আকাক্সক্ষা কীভাবে আমি উপেক্ষা করতে পারি, তা যেন সে বুঝতেই পারে না। যুদ্ধের বাজারেও সে দিব্যি মৃগেল মাছ কিনে এনেছে, সে কেবল আমার কথা ভেবে অথচ আমি মোটেই উৎফুল্ল নই!
মানিকের কাছ থেকে পাওয়া চিঠিটার বয়স দেড় মাস, সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকের চিঠি। ডান্ডিকার্ড বুকে ঝুলিয়ে আবুল হোসেন অফিসে চলে গেলে চিঠিটা নিয়ে বসি। জুয়েলের বাংলা খাতার সাথে হাতের লেখা মেলাই, একমাত্র ‘দেখা’ শব্দের ‘খ’টা মেলে আর কিছুই না। জুয়েলের মাত্রা খুব ঢেউ খেলানো, এখানে টানা।
অক্টোবরের শেষের দিকে একটু একটু ঠাণ্ডা পড়ে। আবুল হোসেন তাড়া দেয় গত বছরের কাজগুলো শেষ করতে; কিন্তু আমি রোজ বসি আর নতুন নতুন ডিজাইন আবিষ্কার করি, মূল কাজের ধার দিয়েও হাঁটি না। উলের বলগুলো মাথা ভিতর জট পাকাতে থাকে।
একদিন তপন সাহেব সন্ধ্যার ঠিক আগে। দরজা আমিই খুললাম। আমার পিছনে আবুল হোসেন। দেখি তপন সাহেবের হাতে একটা বড় কাতলা মাছ চার-পাঁচ সের তো হবেই। আমার হাতে দিয়ে বলে, আমার বন্ধু এনেছে গ্রাম থেকে, তার বউ-বাচ্চা দেশে, সে খায় মেসে। তাই আমাকে দিয়েছে।
কথাটা অবাক করার মতো। বউ-বাচ্চা দেশে তো ঢাকায় মাছ আনবে কেন! এত বড় মাছ! আমি কিছু বলার আগেই আবুল হোসেন হাস্যমুখে বলে, কী আশ্চর্য, এত বড় মাছ! ঠিক আছে, আজ কিন্তু আপনি এখানে রাতে খাবেন। তপন সাহেব লজ্জিত মুখ করে বলে, না না, আমায় দু-টুকরা ভাজি করে দেবেন, আমি ভাত রেধে খেয়ে নেব। আবুল হোসেন যেন লজ্জা পেল। – ছিঃ ছিঃ আমরা থাকতে আপনি কেন ভাত রান্না করে খাবেন! আমার তো রান্নার লোক আছে, মমতাজের মা সব রান্না করে দিয়ে যায়, আপনার ভাবী সেলাই-টেলাই নিয়ে ব্যস্ত থাকে!
ব্যাস, হয়ে গেল। বড় বড় মাছ-মুরগি আসতে লাগল। তিনবেলা খেতে আসে তপন সাহেব, আমাদের একজন এখন।
তপন সাহেব একা থাকে পাশের বাসাটায়। বাসার আসল মালিক তরফদার সাহেব, যে কী না বাসার সামনে ট্রেন্স কেটেছিল কলোনির কয়েকজনকে নিয়ে। আর সাইরেন বাজলে তিনতলা থেকে হুড়মুড়িয়ে নেমে আসত গর্ভবতী বউসমেত। কিছুদিন হলো বউ-বাচ্চাসহ গ্রামে চলে গেছেন চাকরির মায়া ছেড়ে! সাবলেট গ্রহীতা হিসেবে নয়, আসলে বাসা পাহারাদার এখন তপন সাহেব! এই অসময়ে কর্তৃপক্ষও তেমন কিছু বলছে না, ভাবছে হয়তো যুদ্ধ থামলে ফিরবেন তরফদার সাহেব।
আমার মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে; লোকটা সুযোগ পেলেই ছেলের খবর জানতে চায়, যেন এটা জানতে চাওয়া তার নৈতিক দায়িত্ব, না-হলে তার খুব অন্যায় হয়ে যাবে। আমি তার উপস্থিতিতে ভয়ে ভয়ে থাকি, এই বুঝি জানতে চায়Ñ ছেলের খবর ভালো!
ঢাকা শহরের ছোট ছোট প্রতিরোধ গড়ে তুলছে মুক্তিবাহিনী, সেসব খবর পাই বাইরের মানুষের কাছ থেকে, আশায় বুক বাঁধি। আবুল হোসেন কী তপন সাহেব কেন খবর রাখে না, না-কি এসব খবর রাখা বে-আইনি!
রাত হলে এক ধরনের আরষ্টতা আমাকে কাবু করে ফেলে। আবুল হোসেন রাতবিরাত, কখনও ভোরে উপগত হতে এলে মাথায় খুন চেপে যায়। আমি প্রায়ই চেষ্টা করি মেয়েদের ঘরে ঘুমিয়ে পড়তে; কিন্তু অর্ধেক রাতে আবুল হোসেন ধরেবেঁধে নিয়ে আসে- মেয়েরা কী একটু শান্তিমতো ঘুমাবে না!
মানিকের বাসায় যেতে যেতে ওদের বিরক্ত করে ফেলেছি, কিংবা কী জানি হয়তো বিরক্ত হয়নি। বাউন্ডারির ভিতর দিয়ে পাঁচসাত মিনিটের পথ, নীলক্ষেত এপাড়া-ওপাড়া!
বলা ভালো, তপন সাহেব এখন নিয়মিত বাজার করে দেয়, আবুল হোসেন বেজায় খুশি; কিন্তু সুযোগ পেলেই কেমন যেন একটা শ্লেষ দিয়ে আমায় কী বোঝাতে চায়। আমি বোঝার মতো অবস্থায় সবসময় থাকি না, কিংবা বুঝেও না বোঝার ভান করি, তপন সাহেবের খাওয়ার সুবাদে বেশ দুবেলা ভালোমন্দ চলছে, তাতে আমার স্বস্তিই বলা চলা।
কিন্তু তপন সাহেবের প্রতি আমার ভালোলাগাটা একটা নিদারুণ প্রহসনে রূপ নেয়! কেমন একটা ভয় তাড়িয়ে বেড়ায়। ভয়টা আমার ছেলে সংক্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে। আমি তার মধ্যে আবিষ্কার করি, সে আমার ছেলের যুদ্ধে যাওয়াটা পছন্দ করছে না। সোজাসুজি নয়, ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে। আবুল হোসেনের সাথে প্রায়ই সংগত দেয়Ñ তাই তো আবুল হোসেন সাহেব, জুয়েলের মতো ছেলে, জুয়েল সে, তাকে কেন যুদ্ধে যেতে হবে, ওর মতো ছেলের দরকার আছে না দেশের, দেশ গঠনে! চাষাভুষারা যাক, কী মূল্য আছে তাদের জীবনের! আবুল হোসেন গাড়লের মতো সায় দেয় বড় মাছের মুড়োয় কবজি ডুবিয়ে খেতে খেতে, কুৎসিত দৃশ্য!
এখন প্রতিরাতে লড়াই চলে, ধর্ষকের ভূমিকায় চলে যেতে চায় সে; কিন্তু আমার চিৎকারে নিরস্ত্র হয়, প্রতিরাতে একই ঘটনা। বড়মেয়ে কী টের পায় জানি না। একদিন বলেই ফেলে, রাতবিরাতে চেঁচাও কেন মা!
তারপর একদিন আবুল হোসেন বলেই ফেলে, তুমি তপন সাহেবের প্রেমে মজে আছ, আমাকে আর চাই না, তাই তো!
রাতের পর রাত একই কথা। আমি বলি, তাকে বলেন আর এ-বাসায় না আসতে। তাতেও সে রাজি নয়, নোলা ডুবিয়ে খেয়ে খেয়ে না-কি আমারই খুব লোভ হয়েছে, অথচ সে তাকে যেতে বলতে পারবে না। আমি বলি, কাল তবে আমিই বলব। আবুল হোসেন ধমকায়, খবরদার এ-কথা বললে খারাপ হবে!
তপন আমার ছেলের শত্রু, তাকে আমি ভাত বেড়ে খাওয়াই। এ-যন্ত্রণা কাউকে বোঝাতে পারি না। বড়মেয়ে তো প্রথম থেকেই বিরক্ত, নাম দিয়েছে রাজাকার। বাবার লোভের কথা সে জানে, কখনও মুখোমুখি হয় না তপন সাহেবের।
তারপর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আফসার সাহেব আসেন। কী কী যেন বলেন আবুল হোসেনকে, কিছুই বুঝি না; বোঝার ক্ষমতা আমার লুপ্ত হয়েছে। একটা কথা কানের কাছে বাজতে থাকে, মানিক বলে গেছে স্বাধীনতা না নিয়ে ফিরবে না।
আর তপন সাহেব হারিয়ে গেছে। মানে সে বাসা ছেড়ে চলে গেছে অথবা পাকিস্তানিরা ধরে নিয়ে গেছে। তপন মাহমুদের ভুয়া ডান্ডিকার্ড কোনো কাজে লাগেনি, কেউ জানিয়ে দিয়েছে আসলে সে তপন সাহা, মালাউন। যুদ্ধকালীন এ-পাড়ায় সাবলেট নিয়ে চাকরিটা চালিয়ে যেতে চেয়েছিল বেচারা। আমার মনে পড়ে সে আমার ‘মোকসেদুল মোমেনীন’ বইটা চেয়ে নিয়েছিল। কলেমা বল্, নামাজ কয় ওয়াক্ত, অজুর ফরজ কয়টা… তারপর প্যান্ট খুলে সারা মাঠ দৌড় করিয়ে এনে প্রভোস্টের বাড়ির পিছনে ডোবাটার ধারে শুধু একটা শব্দ, ব্যাস!
আচ্ছা গুলি করার আগে কী একবার ওর মনে হয়েছিল, সত্যিটা বলে গেল না আমাদের!
প্রতিদিন ছেলের হাতের লেখা মিলাই, প্রতিদিন দেখি কত মিল ‘দেখা’ শব্দের ‘খ’-এর সাথে, নভেম্বর মাসটা সারাজীবন ধরে চলতে থাকে, বছরের পর বছর যুগের পর যুগ। অর্ধশতাব্দী!
মানিকের কথা না বললে চলে না, সেও স্বাধীনতা হাতে নিয়ে ফিরেনি, মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসা মানিকের মায়ের হাতে নাটক সিনেমার ম্যানাস্ক্রিপ্ট, অভিনয়ে বেঁচে আছি আমরা!

লেখক : কথাসাহিত্যিক

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য