ফারুক শাহ:
০৩ নভেম্বর : জেলহত্যা দিবস
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা জাতীয় চার নেতাকে। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় চার নেতা হলেন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামান।
এ হত্যাকা-ের আড়াই মাস আগে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয় তার চার বিশ্বস্ত সহযোগীকে। এ হত্যাকা- স্মরণে প্রতি বছর ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
০৪ নভেম্বর : সংবিধান প্রণয়ন দিবস
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। এটি একটি লিখিত দলিল। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে এই সংবিধান গৃহীত হয় এবং একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর অর্থাৎ বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী হতে এটি বাস্তবায়িত হয়।
১০ এপ্রিল ২০১৮ সালের সপ্তদশ সংশোধনীসহ বাংলাদেশের সংবিধান সর্বমোট ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। এই সংবিধান সংশোধনের জন্য সংবিধানের ১৪২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের প্রয়োজন হয়। তবে পঞ্চম সংশোধনী, সপ্তম সংশোধনী, ত্রয়োদশ সংশোধনী ও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আদেশে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছেন যে, সংবিধানের মূল কাঠামো পরিবর্তন হয়ে যায় এরূপ কোনো সংশোধনী এতে আনা যাবে না; আনা হলে তা হবে এখতিয়ার বহির্ভূত।
১০ নভেম্বর : শহিদ নূর হোসেন দিবস
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনের মিছিলে বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে রাজপথে নেমেছিলেন যুবলীগ নেতা নূর হোসেন। পরে জিপিও’র সামনে জিরো পয়েন্টের (বর্তমান শহিদ নূর হোসেন স্কয়ার) কাছে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন তিনি। নূর হোসেনের এ আত্মদান স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। তিনি হয়ে ওঠেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের এক অনন্য প্রতীক। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর ১০ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ নূর হোসেন দিবস পালিত হয়ে আসছে।
২১ নভেম্বর : সশস্ত্র বাহিনী দিবস
বাঙালি জাতিকে স্বাধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ ও প্রস্তুত করে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি সেনা, ছাত্র ও সাধারণ জনতা মিলে গড়ে তোলেন সামরিক বাহিনী। শুরু হয় দুর্বার মুক্তিযুদ্ধ।
২১ নভেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি মহান দিন। বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর থেকে। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে সম্মিলিতভাবে ২১ নভেম্বরকে সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আগে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী আলাদা আলাদাভাবে যথাক্রমে ২৫ মার্চ, ১০ ডিসেম্বর ও ২৮ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনী দিবস, নৌবাহিনী দিবস ও বিমান বাহিনী দিবস পালন করত। পরে ২১ নভেম্বরের তাৎপর্য সমুন্নত রাখতে সম্মিলিত দিবস পালনের সিদ্ধান্তটি হয়।
২৯ নভেম্বর : ফিলিস্তিন সংহতি দিবস
১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বরে ফিলিস্তিন বিষয়ক জাতিসংঘ বিশেষ কমিটির রিপোর্ট বিবেচনার ভিত্তিতে জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিক শহরের মর্যাদা দিয়ে আরব ও ইহুদি অধ্যুষিত দুটি রাষ্ট্রে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হয়। এ অনুমোদনের পূর্ব পর্যন্ত ফিলিস্তিন ছিল একটি পৃথক রাষ্ট্র। লিগ অব নেশনস-এর ম্যান্ডেট বলে যুক্তরাজ্য এ ভূখ-টি শাসন করত। সে সময় রাষ্ট্রটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লাখ, যার তিন ভাগের দুই ভাগ আরব এবং এক ভাগ ছিল ইহুদি। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এ দিনটিকে প্রতি বছর ফিলিস্তিন জনগণের সঙ্গে সংহতি পালনের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে উদযাপনের আহ্বান জানায়। ১৯৯৯ সালের ১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক ফিলিস্তিন সংহতি দিবস পালনের উদ্দেশ্যে প্রচারের জন্য সবাইকে অনুরোধ জানায়।