উত্তরণ ডেস্ক: আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে দেশে ও বিদেশে বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে সরকার। বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রনেতার এটাই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্তি। স্বাধীনতার মাত্র ১১ মাসের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এ পদকে ভূষিত করেছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। আগামী ২৩ মে এ পদকপ্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্ণ হবে।
গত ১৭ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও ইউএনওদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে অন্তত ৩৫ সচিবের উপস্থিতিতে হওয়া উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৫০ সাল থেকে মানবতার কল্যাণে এবং শান্তির পক্ষে বিশেষ অবদানের জন্য বরণীয় ব্যক্তি ও সংগঠনকে শান্তি পদকে ভূষিত করে আসছে। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী জঁ ফ্রেডেরিক জুলিও কুরির নাম অনুসারে সংস্থাটি ১৯৫৯ সাল থেকে এ পদকের নামকরণ করে ‘জুলিও কুরি’ পদক।
দেশে-বিদেশে যত আয়োজন : দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। আলোচনা সভা-সংক্রান্ত উপ-কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনা অনুষ্ঠানের পরপরই থাকবে জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবে।
বঙ্গবন্ধুর পদকপ্রাপ্তির সুবর্ণজয়ন্তীর বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বড় আকারে প্রচার করা হবে। এ-সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ব্যাপক প্রচারের জন্য নানা আঙ্গিকের পুস্তিকা ও পকেট বই প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হবে। একইসঙ্গে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন ও দূতাবাসগুলোতে আলোচনা সভা, ভিডিও ডকুমেন্টারি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে বলা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিবসটি উদযাপনে ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে। এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ সব ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে বিশেষ টকশোসহ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং সাময়িকী প্রকাশের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জেলা-উপজেলায় চিত্রাঙ্কন ও কুইজের আয়োজন থাকছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হবে প্রার্থনা। দেশব্যাপী স্বেচ্ছায় রক্তদান ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
যেভাবে শান্তি পুরস্কার : চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোয় অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির বৈঠকে ১৪০টি দেশের প্রায় ২০০ সদস্যের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর জন্য পদক ঘোষণা করা হয়েছিল। তার জীবন দর্শন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কত্বের প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে এ শান্তি পদকে ভূষিত করতে একমত হয়েছিলেন সবাই। বাঙালি জাতির মুক্তির আন্দোলন এবং বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বশান্তি পরিষদ ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর পদক প্রাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশীয় শান্তি সম্মেলনের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে এ পদক তার হাতে তুলে দেওয়া হয়।