উত্তরণ প্রতিবেদন: দেশে প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে সরকার। কক্সবাজারের মহেশখালীতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে মার্চ মাসেই। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনাসহ কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে সংস্থার পক্ষ থেকে। ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গত ১০ মার্চ এই প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী এবং একনেকেরও চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাবে এখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ফিডার ভ্যাসেলে (ছোট জাহাজে) পণ্য বোঝাই কন্টেইনার যায় সিঙ্গাপুর গভীর সমুদ্রবন্দর অথবা হংকং বন্দরে। মালয়েশিয়ার কেলাং এবং শ্রীলংকার কলম্বো গভীর সমুদ্রবন্দরও ব্যবহার হয় রপ্তানি গন্তব্য বুঝে। এতে রপ্তানি বাণিজ্যে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ দিন। প্রতিযোগিতামূলক দরে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন সত্ত্বেও রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে লিড টাইম। অর্থাৎ, ক্রেতার কাছে রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর পণ্য পৌঁছানোর মাঝখানের সময়টা। গভীর সমুদ্রবন্দর উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে এই লিড টাইম কমবে অন্তত ২৫ দিন। এতে বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সহজ হবে।
চট্টগ্রাম, পায়রা, মোংলাসহ দেশে বর্তমানে ৩টি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। এগুলোর কোনোটিই গভীর সমুদ্রবন্দর নয়। এছাড়া এসব বন্দরের সক্ষমতাও চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ সর্বোচ্চ ২ হাজার টিইউইএস (থেরাপিউটিক ইউজ ইগজেম্পশন্স) কনটেইনার নিয়ে ভিড়তে পারে। অথচ কলম্বো, জওহরলাল নেহরু, করাচি ও চেন্নাই বন্দরে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ীতে অধিক ড্রাফটের জাহাজের সমুদ্রবন্দর নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য উত্তম বিকল্প হিসেবে মত দিয়েছে জাইকা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি টার্মিনাল থাকবে। এসব টার্মিনালে ১৬ মিটারের ৮ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের বেশি সক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারে না। এ-কারণে মাদার ভেসেলগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না। ফিডার জাহাজে করে কনটেইনার আনা-নেওয়া করতে হয়। প্রতিদিন ৩৫০০ থেকে ৩৮০০ টিইইউএস আমদানি পণ্য কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। এখান থেকে ফিডার জাহাজ অন্যান্য বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। খালাসের অপেক্ষায় জাহাজ-জট কমবে।