Monday, October 2, 2023
বাড়িনবম বর্ষ,দ্বাদশ সংখ্যা,নভেম্বর-২০১৯দুর্নীতিবিরোধী অভিযান : সুশাসন প্রতিষ্ঠাই লক্ষ্য

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান : সুশাসন প্রতিষ্ঠাই লক্ষ্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে দেড় মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগে অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বহু সংখ্যক গা ঢাকা দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। কয়েকজন সংসদ সদস্যসহ সন্দেহভাজন অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাদের বিদেশ যাত্রার ওপর। ইতোমধ্যেই দুর্নীতিবাজদের মধ্যে হৃদকম্পন শুরু হয়েছে।
স্বয়ং রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতির প্রকোপ বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, অবৈধ উপায়ে রাতারাতি যারা ধনী হয়েছে, যারা দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় জমিয়ে তুলেছে, দৃষ্টিকটু বিলাসী জীবনযাপন করছে এবং সমাজে মানুষে মানুষে ধনবৈষম্য সৃষ্টি করছে, তাদের কাউকে ছাড়া হবে না। ‘আমি ঘর থেকেই শুরু করেছি…।’ কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানে কে কোন দলের, কে কতটা ক্ষমতাবান তা বিবেচনা করা হবে না। তিনি এ-কথাও বলেছেন, কিছু লোক ‘মনস্টার’ অর্থাৎ দানব হয়ে উঠেছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ সারাদেশের জনগণের মধ্যে বিপুল উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। খোদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যারা তাদের অনৈতিক-অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দল/সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে, তাদের কেউ কেউ ধরা পড়ছে, আবার কেউ কেউ গভীর শঙ্কার মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আছে। জনগণ প্রশংসা করলেও বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো কিন্তু বলছে উল্টো কথা। তারা প্রশংসা তো দূরের কথা, এই অভিযানকে ‘লোক দেখানো’ বলছে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে সংকীর্ণতা, দলবাজি, বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা এবং নেতিবাচকতার ব্যাধি পুরো রাজনীতিকেই কলুষিত করছে, বিএনপি-গংদের কর্মকাণ্ড তারই বহিঃপ্রকাশ। দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করাই তাদের একমাত্র কাজ।
তবে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে কার্যকর অবস্থান নেওয়ার জন্য যে নৈতিক শক্তি ও সাহস নেওয়া দরকার, বিএনপি’র তা নেই। যে দলের মাথায় পচন, অর্থাৎ পরিষ্কার করে বলা যায়, যে দলের নেত্রী (খালেদা জিয়া) নিজে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হয়ে জেল খাটছে, যে দলের এক নম্বর ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুই নম্বরি কাজের জন্য অর্থাৎ মানিলন্ডারিং, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, সে-দলের পক্ষে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপ সমর্থন করা তো প্রায় অসম্ভব। যে দলের জন্ম দুর্নীতির পঙ্কে, দুর্বৃত্তায়ন ও অবাধ পুঁজিবাদী লুণ্ঠনকে যে দল প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল, তাদের কাছে আর যা-ই হোক দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে তাদের সমর্থন বা প্রশংসা পাওয়া অসম্ভব!
প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে কোনো নাটকীয়তা প্রদর্শন অথবা স্টান্টবাজির বিরুদ্ধে। বিষয়টি এত সহজ নয়। দুর্নীতির শেকড় অনেক গভীরে। কিছু লোককে গ্রেফতার বা শাস্তি দিয়েই রাতারাতি দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সাথে আঁটঘাট বেঁধেই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছেন। এই অভিযানকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়াই তার লক্ষ্য। এই লক্ষ্য হাসিলের জন্যই তিনি নিজ দলকে কলুষমুক্ত করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। অনেকে বিশেষত গণমাধ্যমগুলো একে ‘শুদ্ধি অভিযান’ বলছে। আমি মনে করি কোনো দলবিশেষকে ‘শুদ্ধ’ করা এই অভিযানের একমাত্র লক্ষ্য নয়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমাজ থেকে, দেশ থেকে দুর্নীতির মহামারী রোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। আওয়ামী লীগের নৈতিক শক্তি আছে বলেই, প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় কাজটি ‘নিজ ঘর’ থেকে শুরু করা হয়েছে। তবে ব্যাপারটা এমন নয় যে, আওয়ামী লীগেই কেবল দুর্নীতি আছে, অথবা আওয়ামী লীগ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, তাই দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে। বাস্তবতা হচ্ছে নজিরবিহীন উন্নয়নের সুবাদে কিছু লোক, একটি শক্তিশালী কর্পোরেট চক্র রাতারাতি অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন-লুটপাটের সকল সীমা লঙ্ঘন করেছে। স্বভাবতই দুর্নীতিবাজরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় এই অকাম-কুকাম নির্বিঘ্নে করা যাবে মনে করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে বেছে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের কোনো দল নেই, আদর্শ নেই। অতএব দলমত নির্বিশেষে যে বা যারাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত পর্যায়ক্রমে তাদের সবাইকে পাকড়াও করা হবে। যে যত শক্তিধর হোন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে ননÑ শেখ হাসিনা এই বার্তাটিই দেশবাসীকে দিয়েছেন। এ-কারণেই আমরা এই দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে ‘আওয়ামী লীগের ভেতর শুদ্ধি অভিযান’ বলতে চাই না; আমরা এই অভিযানকে দেশ-সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতিকে দুর্নীতিমুক্ত-কলুষমুক্ত করার অভিযান বলেই মনে করি। এটা করতে পারলেই দেশে সুশাসনের ভিত্তি সুসংহত হবে।
এটি কোনো আকস্মিক অভিযান নয়। গত সাধারণ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহারে জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স’-এর অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিলেন। অনেকেই তখন এটাকে কথার কথা মনে করেছে। এখন ঘটনাবলি প্রমাণ করছে, শেখ হাসিনা দেশবাসীকে কোনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেননি। আর তিনি যখন কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে হলেও তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। কোনো ভয়-ভীতি বা রক্তচক্ষুই তাকে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন থেকে বিরত রাখতে পারবে না। জনগণ পক্ষে থাকলে অজেয়কে জয় করা সম্ভব। শেখ হাসিনার বর্তমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানেও বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ তার সাথে আছে।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য