Wednesday, October 4, 2023
বাড়িকূটনীতিদুই দেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে

দুই দেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে

উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দুই দেশের জনগণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহী। পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাসে, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বাংলাদেশ মিশনের চ্যান্সারি কমপ্লেক্সের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু হয়। তবে আমাদের সম্পর্কের শুরু ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুর্কি জেনারেল ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়ের মধ্য দিয়ে। পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাসে, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের সম্পর্কের শিকড় অনেক গভীরে।
দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের জনগণের দ্বিপক্ষীয় সুবিধার জন্য বাংলাদেশ তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে আগ্রহী। তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া এই নীতিই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নই দেখেননি, তিনি ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সংঘাতমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নও দেখেছেন। মানব কল্যাণে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার ওপরও গুরুত্বারোপ করে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।
রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য তুর্কি জনগণ ও দেশটির সরকারকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট ও তুর্কি ফার্স্ট লেডিকে ধন্যবাদ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সব ধরনের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ। আমি মনে করি, প্রায় তিন বছর হতে চলেছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। আমি মনে করি, এই ইস্যুতে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের আমন্ত্রণে আঙ্কারা সফরের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণে তুর্কি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এই ভবনটি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আবক্ষ ভাস্কর্য ও একটি শহিদ মিনার ধারণ করে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটা জানতে পেরে খুব খুশি যে এই কমপ্লেক্সের চমৎকার একটি মিলনায়তনসহ সব ধরনের সুবিধা রয়েছে। আমি আঙ্কারায় এই নতুন দূতাবাস কমপ্লেক্সটি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় আমি খুশি।’ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাবুসগলু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আল্লামা সিদ্দীকী। অনুষ্ঠানে নির্মিত চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নিয়ে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এ সময় গণভবন প্রান্তে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। ২০১২ সালে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্সের নির্মাণ শুরু হয়। সে-সময় এ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ভবন নির্মাণ শেষ হয়। বাংলাদেশ দূতাবাসের চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গত ১৩ সেপ্টেম্বর তুরস্কে যান।
জানা গেছে, চ্যান্সারি কমপ্লেক্সের মূল বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে- চ্যান্সারি ভবন, দূতাবাসের আবাস, ‘বিজয় ১৯৭১’ নামে ২২৯ আসনের হাই-টেক মিলনায়তন, স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক সিস্টেম, মসজিদ, জিমনেসিয়াম, বাংলাদেশি পণ্য প্রদর্শন কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধুর রেফারেন্স সমৃদ্ধ বই, বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত পাঠাগার। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তি এবং শহিদ মিনারও রয়েছে কমপ্লেক্সে।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য