বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোমনাথ বলেছেন, বাংলাদেশ থেকেও বিশ্ব কাতরে উঠে আসার মতো অনেক ইয়োগী তৈরি করা সম্ভব। এজন্য আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি জানান, প্রথমবার বাংলাদেশে এসে তার ভালো লেগেছে। আগামীতেও সুযোগ পেলে তিনি আসবেন।
অনিন্দ্য আরিফ: নয়নাভিরাম নৈপুণ্যে উপস্থিত সবাই মুগ্ধ। করতালি দিয়ে প্রতিযোগী অনুপ্রাণিত করছিলেন অভ্যাগতরা। যারা প্রথমবারের মতো ইয়োগীদের দেখেছেন; তাদের বিস্ময়ের শেষ ছিল না। এক একটি চোখ ধাঁধানো আসনের স্বপ্নাবেশময় দৈহিক ভঙ্গিমা দেখে বুদ হয়ে গিয়েছেন। ৭ বছরের বাংলাদেশের দুদে ইয়োগী সাজিয়া হোসেন অরি ও ভারতের ৯ বছরে আরোহী দে থেকে শুরু করে ৫৪ বছরের বাংলাদেশ প্রতিযোগী বাংলাদেশের ফেরদৌসী আক্তারের বিরল ভঙ্গিমার প্রদর্শনী ছিল অবিশ্বাস্য উপস্থাপনা। টুর্নামেন্টে ভারত ৩৮ জন এবং বাংলাদেশের ১৩ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছে।
৫ মে ২০২৩ ঢাকঢোল পিটানো না-হলেও ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনায় এমন অপলক চেয়ে থাকার ঝলক দেখিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বঙ্গমৈত্রী আন্তর্জাতিক আমন্ত্রণমূলক যোগা কাপের দ্বিতীয় আসর। বাংলাদেশের বিশুদ্ধ যোগা কালচার এবং ভারতের ওম যোগা কালচারের যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সংলগ্ন শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে দিনব্যাপী এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
যেখানে আয়োজনে পাঁচবারের বিশ্বসেরা ইয়োগী সোমনাথ মুখার্জি এসেছিলেন। তাই সাদামাটা আয়োজন হয়ে গেল বিশ্বমানের। একাদশ শ্রেণির সোমনাথ দেখিয়েছেন অভাবিত আসনবিন্যাস। প্রতিযোগীর ফ্রন্ট ব্যান্ডিং, ব্যাক ব্যান্ডিং; ব্যালেন্সিংসহ বিশেষ দুটি অ্যাডভান্স আসন দেখে অনেকের চোখ ছানাবড়া হয়েছে। আর প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশও জয় করলেন। আসরে চ্যাস্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন্স হয়েছেন সোমনাথ। ভারতের সোমনাথ মুখার্জি পেছনে ছিল প্রথম রানারআপ নেহা বাগ এবং দ্বিতীয় রানারআপ নিজ দেশের আরোহী দে। তবে সোমনাথ থেকে গেলেন অনেকটাই লোকচক্ষু এবং মিডিয়ার আড়ালে। অনেকেই জানলেন না সোমনাথের মতো বিশ্বসেরা ইয়োগী ৪ দিন বাংলাদেশে কাটিয়ে গেলেন।
সকালে বেলুন উড়িয়ে দ্বিতীয় আসরের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, লেখক, গবেষক এবং উত্তরণ সম্পাদক ড. নূহ-উল-আলম লেলিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হারুন, ভারতীয় হাই কমিশনের অধিপ্রতিষ্ঠান ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের যোগচারিয়া অতুল কুক্সাল।
আসরের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান সাংবাদিক আরিফ সোহেলের সভাপতিত্বে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ঘোষণাকালে প্রধান অতিথি ড. নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, যোগাচারের মাধ্যমে একজন মানুষ সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। বাংলাদেশে ইয়োগা সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এখন আর শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয়; বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় ইয়োগা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশুদ্ধ যোগা কালচারের মহাসচিব শাহনাজ পারভীন এবং ওম যোগা কালচারের মহাসচিব প্রসূণ মহন্ত। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক কমিটির সদস্য সচিব এসএম আবুল হোসেন, মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান রাশেদ আহমেদ, আপ্যায়ন কমিটির চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান এবং সদস্য সচিব কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন পলাশ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়া সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা শামীম আল মামুন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিওএ উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু, ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শামীম খান টিটু, রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুর হাসান, উত্তরণের বার্তা সম্পাদক আনিস আহামেদ, ক্রীড়াব্যক্তিত্ব মেজর [অব.] ইমরুল আলমসহ উপস্থিত অতিথিরা বিজয়ী মেডেল, নগদ অর্থ এবং সার্টিফিকেট তুলে দিয়েছেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, আগামীতেও ধারাবাহিক হিসেবে ভারতে এই টুর্নামেন্টের পরবর্তী আসর অনুষ্ঠিত হবে।
আসরে মোট ১২টি ইভেন্টের মধ্যে ট্র্যাডিশনাল ৮টি ছাড়া আর্টিস্টিক বয়েজ, আর্টিস্টিক গার্লস, রিদিমিক এবং চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন্স ইভেন্ট ছিল দারুণ উপভোগ্য। এই আসরে ভারতের ৩৮ জন ইয়োগীসহ ৮৫ সদস্যের একটি দল অংশ নিয়েছে। দিনব্যাপী প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়নদের শ্রেষ্ঠত্বে দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনের মাধ্যমে। সেখানে প্রত্যাশিতভাবে সেরাদের মধ্যে সেরা হয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোমনাথ মুখার্জি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোমনাথ বলেছেন, বাংলাদেশ থেকেও বিশ্ব কাতরে উঠে আসার মতো অনেক ইয়োগী তৈরি করা সম্ভব। এজন্য আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি জানান, প্রথমবার বাংলাদেশে এসে তার ভালো লেগেছে। আগামীতেও সুযোগ পেলে তিনি আসবেন।
লেখক : সাংবাদিক
সিঙ্গাপুর জয়; ফুটবলে স্বস্তির হাওয়া
তিন জাতি আসরে সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ ছিল ‘ডি’ গ্রুপে। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে ২৬ এপ্রিল প্রতিপক্ষ ছিল তুর্কমেনিস্তান। তাদের ৬-০ গোলে উড়িয়ে দারুণ সূচনা করে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে ৩০ এপ্রিল স্বাগতিক সিঙ্গাপুরকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে তারা। ম্যাচে জোড়া গোল করেন সুরভী আকন্দ প্রীতি।
আসরে সিঙ্গাপুরের জিলান বাসার স্টেডিয়ামে বিপুল প্রবাসী বাংলাদেশি মাঠে এসেছিল। তাদের একটুও হতাশ করেননি সাবিনা-সানজিদাদের জুনিয়ররা। দুই ম্যাচেই রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সিঙ্গাপুরের মাটির স্টেডিয়াম যেন পরিণত হয় ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে।
দ্বিতীয় বাছাইপর্ব নিশ্চিত করার আগে ম্যাচে মাঠে নামার আগে পরিষ্কার ফেভারিট ছিল সিঙ্গাপুর। বাংলার মেয়েদের ওপরও চাপ ছিল পাহাড়সম। পরের রাউন্ডে যেতে হলে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যদের সামনে। সেই ম্যাচে ৩-০ গোলে স্বাগতিকদের হারিয়ে ঠিকই সব চাপ জয় করে পরের পর্বে চলে গেল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ নারী দল।
বাফুফের অপ্রীতিকর পরিবেশ সরিয়ে স্বস্তির আনন্দময় বাতাস ছড়িয়ে দিয়েছে অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় নারী ফুটবল দল। ৩০ এপ্রিল সিঙ্গাপুরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশ স্বাগতিক সিঙ্গাপুরকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে আরেক দফা বাছাই হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় চূড়ান্ত পর্বে খেলবে ২০২৪ সালে।
প্রতিপক্ষ তুর্কমেনিস্তান এবং সিঙ্গাপুর যথেষ্ট শক্তিশালী। র্যাংকিংয়ে দুদেশই ছিল বাংলাদেশের ওপরে। সিঙ্গাপুর ১৩৪ আর তুর্কমেনিস্তান ১৩৭। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪০। তার ওপর এই মেয়েরা কোনোদিন বিদেশের মাঠে খেলেনি। কোনোদিন বিমানেই ওঠেনি। ওদের সম্বল ছিল আত্মবিশ্বাস। একাগ্রতা আর সাধনাÑ এই দুয়ের রসায়ন সাফল্য এনে দিয়েছে। অপ্রত্যাশিত স্বপ্ন জয় করে অসাধ্য সাধন করেছে মেয়েরা। দেশ থেকে আসা মেয়েরা এভাবে বিদেশের মাঠে ফুটবলশৈলী দেখিয়ে মন ভরিয়ে দেবে, তা যেন কল্পনাও করেননি প্রবাসীরা।
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশ এখন মাঠে নামা মানেই গোল উৎসব। দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে সমগ্র এশিয়াতে বাংলাদেশ তা প্রতিষ্ঠা করেছে নিজেদের। দেশে তৈরি হয়েছে নারী ফুটবলের জাগরণ। নারী ফুটবলের জাগরণের এ অধ্যায়ে মুখ্য নায়কের ভূমিকায় রয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। ২০০৯ সালে নারী ফুটবলের দায়িত্ব নিয়ে যে কাজটা নিপুণভাবে করে যাচ্ছেন ছোটন। এ জায়গাটায় আবার তিনি শুধুই একজন কোচ নন, একজন অভিভাবকও। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের পাইপলাইন বর্তমান সরকারের বঙ্গমাতা আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। ২০১০ সালে সেটি শুরুর পরই বদলে যায় মেয়েদের ফুটবলের চিত্র। বলতে দ্বিধা নেই মেয়েদের ফুটবল মানেই এখন দর্শকদের উন্মাদনা আর অনেক অনেক প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যখন গুমট হাওয়া; সে-সময়ে মেয়েরা দারুণ সাফল্য দিয়ে জানিয়ে দিল বাফুফে ভবন নয়; মাঠে চোখ ফেরাও।