Monday, October 2, 2023
বাড়িউত্তরণ প্রতিবেদনদলের নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী : আরও দায়িত্বশীল হউন

দলের নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী : আরও দায়িত্বশীল হউন

উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং নির্বাচনী ইশতেহার পূরণে দলের নেতাদের বিষয়ভিত্তিক দায়িত্ব পালনে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি সারাদেশে দলকে সুসংগঠিত, সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এবং আসন্ন ৫টি সংসদীয় উপ-কমিটির নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্যও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের এমন নির্দেশনা দিয়ে আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে নিয়েই আওয়ামী লীগ চিন্তা ও কাজ করে। দেশের মানুষ কীভাবে একটু ভালো থাকবে সেটাই আমাদের করতে হবে। এজন্য দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীকে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে একটা আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন করে নতুন প্রজন্মের জন্য এটা তৈরি করে দিয়ে যেতে চাই। এটা যেমন আমার দলের (আওয়ামী লীগ) ও আমার উচিত, কাজেই আমরা এভাবেই করে দিতে চাই।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। সেখানে কোথায় কী প্রয়োজন, কি করলে দেশের মানুষ একটু ভালো থাকবেÑ আমাদের মানুষকে নিয়েই চিন্তা, মানুষকে নিয়েই আমাদের কাজ। সেটাই আমাদের করতে হবে। আমি আশা করি, সকলেই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। আমাদের জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই চলতে হবে। তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আমরা পূরণ করতে চাই।
দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, প্রত্যেকের যার যার বিষয়ভিত্তিক দায়িত্বটা পালন করা দরকার। নির্বাচনী ইশতেহারে যে ঘোষণা দিয়েছি, পাশাপাশি আমাদের যে পলিসি আছে, সেগুলো নিয়ে বসে আলোচনা করা। আমরা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি, কোনটা কতটুকু করা হয়েছে বা ভবিষ্যতে কতটুকু করবÑ সেই বিষয়ে আলোচনা করা।
ভার্চুয়াল আলোচনার শুরুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, ‘আমরা আমাদের সভাপতির একটা গাইডলাইন চাই। আমরা নিজেরা কিছু বিষয় আলোচনা করেছি। এর মধ্যে রয়েছেÑ আমাদের যে সকল জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে, তাদের আগামী ১৫ তারিখের মধ্যে আপনার অফিসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। আরেকটি হলো- এই সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সম্পাদককে চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শ করে ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট উপ-কমিটি গঠনের রিকমন্ডেশন তৈরি করেছি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক আপনি। আর আমরা সীমিত আকারে সাংগঠনিক কর্মসূচি এখন থেকে পালন করার জন্য তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পালন করার জন্য একটি নির্দেশনা দিচ্ছি। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আপনার (শেখ হাসিনা) জন্মদিন। এটা আমরা খুব সীমিত আকারে পালন করব। এটা প্রতি বছরই করে থাকি। আপনি না বললেও করব।’
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার জন্মদিন পালনের প্রস্তাব আমি গ্রহণ করছি না। জন্মদিন পালনের দরকার নেই। আমি এমনিতেই জন্মদিন পালন করি না। বাকিগুলোর মধ্যে সাব-কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত খুবই ভালো। এটা করা উচিত। যাতে সাব-কমিটিগুলো বসতে পারে। বিষয়ভিত্তিক সেমিনার করা, আলোচনা করা। আগামী দিনে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সেগুলো ঠিক করা। সাব-কমিটিগুলো এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নে সরকার কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রথম যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, সেটি ছিল ২০১০ থেকে ২০২০Ñ এই ১০ বছর মেয়াদি। আর নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনার মেয়াদ ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত। তাই বাংলাদেশকে আমরা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমাদের পার্টির প্রত্যেক নেতার দেখা উচিত এবং এখানে বিষয়ভিত্তিক যেটা আছে সম্পাদকম-লীর সদস্যরা দেখবেন, কীভাবে উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
করোনা মহামারির মধ্যে থমকে যাওয়া দলের সাংগঠনিক তৎপরতা আবার গতিশীল করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। করোনার কারণে অনেক জায়গায় সম্মেলন হলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এখন সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে ‘জীবন বাজি’ রেখে মানুষের কল্যাণে কাজ করায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে আমাদের কাজ। জাতির পিতা আমাদের এটাই শিখিয়েছেন, এটাই তার আদর্শ।
তিনি বলেন, আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি, যদিও যে কর্মসূচিগুলো নিয়েছিলাম তা পালন করতে পারছি না করোনাভাইরাসের কারণে। যদিও আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি, আমরা গাছ লাগাব প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায়। আর দেশের মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াব। যাতে গৃহহারা, ভূমিহীনÑ বিশেষ করে ভূমিহীনদের ভূমি ও গৃহহীনদের আমরা গৃহ নির্মাণ করে দিবো। সেগুলো আমাদের প্রত্যেক অঞ্চলে, এ-রকম যদি থাকে সেটা খুঁজে বের করতে হবে, দেখতে হবে। আমরা দলের পক্ষ থেকেও অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। তাছাড়া যাদের ভিটে আছে কিন্তু বাড়ি করার টাকা নেই, তাদেরও সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এটাও যাতে যথাযথভাবে হয় সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের এখনও অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের সংগঠনটাকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত হয়ে এসেছি। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আজকে আমাদের রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলার। আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ ভাগ টার্গেট করেছিলাম। এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৭ দশমিক ৮ ভাগ পর্যন্ত অর্জন করেছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সেটা কমে গেছে।
তিনি বলেন, তারপরও এখনো আমরা একটা ভালো অর্থনৈতিক অবস্থানের মধ্যে আছি। আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি সকল ক্ষেত্রে। প্রণোদনা দেয়ার ফলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়নমূলক কর্মকা-গুলো যথাযথভাবে চলছে। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি, সেখানে আমরা বিনিয়োগ করতে চাই। সেই জন্য আমরা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আমরা যে এগোচ্ছি, সেটা যাতে যথাযথভাবে কার্যকর হয় সেটা আমাদের দেখতে হবে, নজরদারি বাড়াতে হবে।
শূন্য হওয়া ৫টি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামনে একটা উপনির্বাচন আছে। সেই নির্বাচনে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের ওপর রয়েছে। সব জায়গায় আওয়ামী লীগের ভোট অনেক বেশি। সেখানে দল ঐক্যবদ্ধ থেকে আমাদের প্রতিনিধি যাতে নির্বাচন করেন, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, করোনার কারণে সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। তোমরা কাজ করে যাও। আমি সীমিত আকারে ভাগে ভাগে মিটিং করব। প্রথমে একটা সভাপতিম-লীর মিটিং করব। তারপর কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক করব। তারপর উপদেষ্টা পরিষদের মিটিং করব। এগুলো আলাদা আলাদাভাবে মিটিংগুলো করব। এটা আমাদের পার্লামেন্ট সেশনের পরেই আমরা শুরু করব। করোনাভাইরাস আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি করে যাচ্ছে। তারপরও আমরা আমাদের অর্থনীতিকে ধরে রাখতে পারছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এদেশটাকে আমরা সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই এবং আমরা স্বাধীন দেশ, স্বাধীন জাতি। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা চলতে চাই। তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ হোক, বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে। আমরা সেভাবেই বাংলাদেশটাকে গড়ে তুলতে চাই। আজকে তিনি নেই, কিন্তু তার আকাক্সক্ষা পূরণ করা, বাংলাদেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত শিক্ষিত আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানসম্পন্ন একটা জাতি হিসেবে বাঙালি জাতিকে গড়ে তুলব এবং বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ব- এটাই আমাদের লক্ষ্য।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য