ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। গর্বে আমার বুক ভরে যায়। এভাবে তারা এগিয়ে গেলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বন্ধ করতে পারবে না।
উত্তরণ প্রতিবেদন
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অশিক্ষিত-মূর্খরা দেশ এগিয়ে নিতে পারেন না। ক্ষমতায় থাকাকালে খালেদা জিয়া ছাত্রদলকে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। বলেছিল, ছাত্রদল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আর আমি ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম খাতা-কলম। বলেছিলাম, পড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ না হলে কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না।’
গত ১ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে তিনি এ কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ এই ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে আবারও ছিনিমিনি খেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি। তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারা না-কি এখন গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। যাদের জন্ম মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে; জাতির পিতাকে সপরিবার হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে; সেই ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে তৈরি ঐ বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধীরা এদেশের কল্যাণ কখনও চাইতে পারে না। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়। অশিক্ষিত-মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে, সেই দেশের অগ্রযাত্রা হতে পারে না।
বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে পৌঁছানোর আগেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর, টিএসসির চতুর্দিকের দীর্ঘ পথই ছিল জনতরঙ্গ।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর অপবাদ চাপাতে চেষ্টা করতে চেয়েছে। দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি; নিজের ভাগ্য নয়। রাষ্ট্রপতির মেয়ে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। নিজেও আরও তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। কই, নিজের জন্য তো কিছু করার চিন্তা করিনি! বা আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্যও নয়।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হয়েছিল, এমনটা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বদনাম দিয়েছিল। কেন দিয়েছিল? একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য। তিনি ১০ বছর বেআইনিভাবে ব্যাংকটি চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে। সেই লোভে। বারবার আমাদের ওপর চাপ। একটি বড় দেশ বারবার চাপ দিত। কী বলত? এমডি পদে না রাখলে না-কি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারেন না। মামলায় হেরে যায়। তারপর তার বিদেশি বন্ধুদের দ্বারা, এটা বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে হয়নি, ঐ হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে তখন বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যানকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে। তখনই বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। কারও কাছে হাত পেতে নয়। আমরা সেটা করেছি। বিশ্বকে দেখিয়েছি বাংলাদেশ পারে; বাংলাদেশের মানুষ পারে। এরপরই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে গেছে।’
বিএনপি-জামাতের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ইলেকশন তাদের কথা (লক্ষ্য) নয়। তারা (বিএনপি) ভোট করতে আসে না। ভোট চায় না। ভোট পাবে না। বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনের নেতাদের সতর্ক ও সচেতন থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের বিষয়ে জনগণকে মনে করিয়ে দেবেন ওরা (বিএনপি) ভোট করতে আসে না। ভোট পায় না। ভোট চায় না। ভোট পাবে না। কারণ তারা তো লুটেরা, সন্ত্রাস। মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়। মানুষের সম্পদ-ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। তারা জঙ্গিতে বিশ্বাসী। দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি। এরা কখনও মানুষের কল্যাণ করতে পারে না।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন সময়কার সামাজিক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। গর্বে আমার বুক ভরে যায়। এভাবে তারা এগিয়ে গেলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বন্ধ করতে পারবে না।’ পেনশন স্কিম নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। বিএনপির কিছু নেতা বলছেন- এটা না-কি আমাদের নির্বাচনী ফান্ড তৈরি করার জন্য। এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে? ছাত্রলীগকে বলব, নিজের এলাকায় গিয়ে এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটাই লক্ষ্য- এ বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করব। আমার কোনো ভয় নেই। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় কেউ যাতে নস্যাৎ করতে না পারে, তোমাদের (ছাত্রলীগ) অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি তোমাদের বলব, শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি, ছাত্রলীগের মূলনীতি।’ বঙ্গবন্ধুর একটি বক্তব্যের উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রথম প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব। সঠিক নেতৃত্ব ছাড়া রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। আমি আশা করি, ছাত্রলীগের নেতারা নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলবে।’
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।
অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, ‘ওয়ান-ইলেভেন আমরা ভুলি নাই। আবারও অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সেই অস্বাভাবিক সরকার বাংলার মাটিতে আমরা হতে দেব না।’ গত ১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের আয়োজনে ছাত্র সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজ দেশে-বিদেশে কত ষড়যন্ত্র, কত চক্রান্তের খেলা! তারা জানে, এই দেশে ৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। নির্বাচনে তাকে হারাতে পারবে না। যেই জন্য ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা থেকে সরানোর চক্রান্ত করছে। নিষেধাজ্ঞা, ভিসা-নীতি প্রয়োগ করতে চাইছে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের যে মুক্তি সংগ্রামের অসম সাহসীর কাণ্ডারি, আজকে সেই কীর্তি তারা মুছে দেওয়ার চক্রান্ত করছে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক চোর অপবাদ দিয়ে সরে গেছে। নিজের টাকায় তৈরি করে প্রমাণ করেছেন- ইয়েস উই ক্যান ডু।’ এ সময় বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘জ্বালারে জ্বালা, অন্তর জ্বালা। অন্তর জ্বালায় জ্বলছে বিএনপি। জ্বলছে তারেক জিয়া। কী করে হলো পদ্মা সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল; তাদের অন্তর্জ্বালা তো থাকবে। শেখ হাসিনা করেছে, এটা তাদের অন্তর্জ্বালা। মানুষ খুশি, আর এই দলটি (বিএনপি) অখুশি। শেখ হাসিনার অর্জনে মানুষ কেন খুশি, এজন্য ব্যথার বিষজ্বালায় তারা মরছে। সেজন্য শেখ হাসিনাকে তারা চায় না। বিদেশি মুরুব্বিদের ডাকছে- হটাও শেখ হাসিনাকে। দরকার হলে আবার তত্ত্বাবধায়ক। আদালতের আদেশে যে তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে, সেটাকে তারা আবার জীবিত করতে চাচ্ছে। এটা কী হবে? শেখ হাসিনা রিজাইন করবে? সংসদ ভেঙে যাবে? এই সরকার পদত্যাগ করবে? বাংলার মানুষ যেটা চায় না, তারা কেন তা করতে চায়?’
বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে শপথ
এই সমাবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে শপথ নিয়েছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সমাবেশে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে সক্রিয় থাকা, অপশক্তি ধ্বংস ও শেখ হাসিনা প্রশ্নে আপসহীন থাকার শপথ নিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিকাল পৌনে ৪টায় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সর্বস্তরের নেতাকর্মী নিয়ে এ শপথ পাঠ করেন।
সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইন বক্তব্যের শেষে বলেন, ‘আজ আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার অনুমতিক্রমে একটি শপথ পাঠ করব। আমরা শেখ হাসিনাকে কথা দেব, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে যে লড়াই আমরা শুরু করেছি, সেটি বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীকে এ শপথে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’ এরপর তিনি শপথ পাঠ করান। এক হাত সামনে বাড়িয়ে এই শপথ পাঠ করেন সমাবেশে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা।
শপথে বলা হয়, ‘আমরা বাঙালির মহান স্বাধীনতা ও পূর্বপুরুষের পবিত্র রক্তে ভেজা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্ম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের নবরূপায়ণের রূপকার বাঙালির নির্ভরতার শেষ ঠিকানা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নামে দৃঢ়চিত্তে শপথ করছি যে, তারুণ্যের স্বপ্নের স্বদেশ, পিতার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলা এবং কন্যার পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আপসহীন, অক্লান্ত, আমৃত্যু সদা সর্বদা সচেষ্ট থাকব। আমরা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম, বঙ্গমাতার সাধনা, দেশরত্নের সাহসকে নিজের জীবন গঠনে ও সমৃদ্ধ স্বদেশ গড়তে মূলনীতি মানব। তারুণ্য লড়বে, তারুণ্য গড়বে, তারুণ্য দেশবিরোধী সব অপশক্তিকে পিতার তর্জনীর দাপটে ধ্বংস করবে। বাংলাদেশকে বিশ্ব মানচিত্রে মর্যাদাশীল করতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভূপৃষ্ঠ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াবে। জাতির পিতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রশ্নে এদেশের তরুণ প্রজন্মকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’