Monday, December 4, 2023
বাড়িSliderতখন কোথায় ছিল মানবাধিকার?

তখন কোথায় ছিল মানবাধিকার?

বেঁচে থাকতে সবাই থাকে, মরে গেলে যে কেউ থাকে না এটাই তার জীবন্ত প্রমাণ। তাই আমিও কিছু আশা করি না। সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছি। এই বেঁচে থাকা যে কত যন্ত্রণার, যারা এভাবে বেঁচে আছেন তারাই শুধু জানেন।

উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যেসব দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকা-ের পর কোথায় ছিল মানবাধিকার?
আমাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল? বিচার চাওয়ার অধিকারটুকু পর্যন্ত ছিল না। বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যার ঘটনায় একটা মামলা করতে পারব না। আমরা কী বাংলাদেশের নাগরিক না? আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হলো, তখন তারা কোথায় ছিল? বরং যারা (যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা) বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে লালন-পালন করছে, আজ তাদের কাছ থেকেই আমাদের মানবাধিকারের ছবক শুনতে হয়। এটাই হলো আমাদের দুর্ভাগ্য।
শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টের পর কোনো নেতা প্রতিবাদ করতে পারল না সেই প্রশ্ন তুলে বলেন, জাতির পিতা তো অনেককে ফোনও করেছিলেন, তখন কোথায় ছিলেন তারা? ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বর ওই ধানমন্ডিতে লাশগুলো তো পড়ে ছিল। একটি মানুষ ছিল না সাহস করে এগিয়ে আসার? একটি মানুষ ছিল না প্রতিবাদ করার? কেন করতে পারেনি। এত বড় সংগঠন এত লোক কেউ তো একটা কথা বলার সাহসও পায়নি। কত  স্লোগান। বঙ্গবন্ধু তুমি আছো যেখানে আমরা আছি সেখানে, অমুক তমুক অনেক স্লোগান, কোথায় ছিল সেই মানুষগুলো। বেঁচে থাকতে সবাই থাকে, মরে গেলে যে কেউ থাকে না এটাই তার জীবন্ত প্রমাণ। তাই আমিও কিছু আশা করি না। সবাইকে হারিয়ে বেঁচে আছি। এই বেঁচে থাকা যে কত যন্ত্রণার, যারা এভাবে বেঁচে আছেন তারাই শুধু জানেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর স্বশরীরে উপস্থিত থেকে সভাপতির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার বাবা শুধু দিয়েই গেছেন, কিছুই নিয়ে যাননি। এদেশের মানুষকে স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র, পতাকা দিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। তাকে একখ- রিলিফের কাপড় দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দাফন করা হয়েছে। এদেশের মানুষকে আমার বাবা-মা শুধু দিয়েই গেছেন, কিছুই নিয়ে যাননি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। বক্তব্যে রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, তোফায়েল আহমেদ এমপি, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান।
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ইনডেমনিটি দিয়ে বিচার বন্ধ করে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়। জিয়া নিজে উদ্যোগী হয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোকে দিয়ে লিবিয়ায় খুনিদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। জিয়া হত্যাকা-ে জড়িত না থাকলে কেন খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পুরস্কৃত করবে?
এ সময় ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কথিত সুশীল বলে পরিচিত ব্যারিস্টার মইনুল বঙ্গবন্ধুর খুনি পাশা ও হুদাকে নিয়ে প্রগশ নামের রাজনৈতিক দল করেছিলেন। আর এরশাদ ক্ষমতায় এসে খুনি ফারুককে ফ্রিডম পার্টি করার সুযোগ দেয় ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করে। আর খালেদা জিয়া আরেক ধাপ উপরে। তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনে খুনি রশিদ-ফারুক-হুদাকে নির্বাচন করার সুযোগ দেয়। খুনি রশিদকে বিনাভোটে সংসদে এনে বিরোধী দলের আসনে পর্যন্ত বসায়। এরা কী করে বলবে যে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল না।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ কিন্তু খালেদা জিয়ার ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন মেনে নেয়নি। আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। এরপর ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেই আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ইনডেমনিটি বাতিলের উদ্যোগ নেই। তখনও কত হুমকি, বাধা। এ সময় কারা কারা, কোন কোন আইনজীবী খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, তাও সবাই জানে। তিনি বলেন, বিচারের রায় যাতে বিচারক ঘোষণা করতে না পারে সেজন্য খালেদা জিয়া ’৯৮ সালের ৮ নভেম্বর হরতাল ডেকেছিল। কিন্তু বিচারক অত্যন্ত সাহসী ছিলেন, বিচারের রায়ে আসামিদের মৃত্যুদ- ঘোষণা করেন। এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আবারও বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার বন্ধ করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা আবারও এই হত্যাকা-ের বিচারের কাজ শুরু করি। কিন্তু তখনও অনেক উচ্চ আদালতের বিচারক হত্যাকা-ের বিচার করতে বিব্রত হয়েছেন। কিন্তু কৃতজ্ঞতা জানাই ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি তোফাজ্জল হোসেনের কাছে। তার নেতৃত্বে উচ্চ আদালতের রায়ের পরেই আমরা তা কার্যকর করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নাম উল্লেখ না করে বলেন, যেসব দেশ মানবাধিকারের কথা বলে আমাদের ওপর স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেয়Ñ তারাই তো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। খুনি রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। খুনি নুর কানাডায় রয়েছে। যারা এসব খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের কাছ থেকেই আমাদের মানবাধিকারের ছবক শুনতে হয়। আমাদের কাছে তথ্য আছেÑ খুনি রশিদ লিবিয়া ও পাকিস্তানে যাতায়াত করে, আরেক খুনি ভারতে লুকিয়ে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের ফিরিয়ে আনতে।
পদ্মা সেতু নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিরা ভেবেছিল দুর্গম টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে কেউ যাবে না। কিন্তু এখন খুনি ও তাদের দোসররা দেখুক, প্রতিদিন বঙ্গবন্ধুর মাজারে কত মানুষের ঢল নামে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়েও আমাদের নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, পঁচাত্তরের হত্যাকা- কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের বিরুদ্ধে ছিল না, এই হত্যাকা- ছিল এদেশের স্বাধীনতা বিলুপ্ত করে পাকিস্তানের সঙ্গে লুজ ফেডারেশন সৃষ্টির চক্রান্ত। জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই খুনিদের পুরস্কৃত করেছে, ২০ হাজার যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে। জিয়ার সৃষ্ট হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি এখনও তাদের উত্তরসূরিরা চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯ বার বঙ্গবন্ধু-কন্যার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এখনও মানুষকে বিভ্রান্ত করে অপরাজনীতি করছে বিএনপি। সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
অপর প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। আজও পাকিস্তানের দাসত্বে আবব্ধ থাকতাম। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক বিশ্বের বরেণ্য নেতা। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে রক্ত দিয়ে জাতির রক্তের ঋণ শোধ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু আর কোনোদিন ফিরে আসবেন না, আর শুনতে পারব না সেই বজ্রকণ্ঠ- ‘ভাইয়েরা আমার…’। ’৮১ সালে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে দলের পতাকা তুলে দিয়েছিলাম। আজ তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।
স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুধু মুখে নয়, বাস্তবে দ্রুত কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের মাস্টারমাইন্ডদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করার দাবি জানিয়ে বলেন, আইনমন্ত্রী বলেছেন কমিশন গঠন করবেন।
আমরা মুখে নয়, বাস্তবে দ্রুত এই কমিশন চাই। ১৫ আগস্টের ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকা-ের পেছনে অনেক রহস্যময় পুরুষ রয়েছে। নেপথ্যের নায়কদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার প্রমাণ তুলে ধরে তিনি বলেন, জিয়া যদি সত্যিই মুক্তিযোদ্ধা হতো তবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, কালজয়ী ৭ মার্চের ভাষণ কেন নিষিদ্ধ ছিল? খুনিদের পুরস্কৃত করে কেন দেশকে স্বাধীনতার সব আদর্শ ধ্বংস করল? ইতিহাস কখনও এই বেইমানকে কখনও ক্ষমা করবে না। ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য