শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত
উত্তরণ প্রতিবেদন: গত ১ ফেব্রুয়ারি অবাধ, স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ২১১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত তাবিথ আউয়াল ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬১ ভোট।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডে ২৫১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩২৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৮২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
প্রথমবারের মতো ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম প্রযুক্তি) ব্যবহৃত হয়। ইভিএম-এ ভোটদান পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ হওয়ায় স্বচ্ছন্দে ও কম সময়ে ভোট দিয়েছে নগরবাসী। দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোনো প্রকার জালভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কোথাও কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোথাও উল্লেখযোগ্য কোনো অপ্রীতিকর ও সহিংস ঘটনা সংঘটিত হয়নি। সংঘাতহীন শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোট শেষে জনগণের রায়কে প্রত্যাখ্যান করলেও ঢাকা দুই সিটি নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগও দিতে পারেনি।
নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকগণ দুই সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২২টি দেশি সংস্থার মাধ্যমে ১ হাজার ১৩ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষক এবং ১০ দূতাবাসের মাধ্যমে ৭৪ বিদেশি পর্যবেক্ষক সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এদের মধ্যে ৪৬ জন সরাসরি বিদেশি নাগরিক এবং ২৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক। এই ২৮ জন বাংলাদেশি ১০ দেশের দূতাবাসে বিভিন্ন পদে কর্মরত।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি-ডিএসসিসি) নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম বলেছে, সার্বিকভাবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের অর্ধশতাধিক বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এই নির্বাচন পর্যবেক্ষক ফোরামের ভাষ্যে, মেয়র পদে নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি।

সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মাওলানা মো. আবেদ আলী কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে বলেন, সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইভিএমে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে ভোটাররা উল্লসিত।
এ দিন সকালে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা। ভোট প্রদান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইভিএম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি একটি ডিজিটাল পদ্ধতি। এর মাধ্যমে সবাই অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। তবে ইভিএম নিয়ে কেন এই অহেতুক উদ্বেগ? আমি মনে করি, এর কারণ ভোটে কারচুপি করার কোনো সুযোগ নেই। যারা দীর্ঘদিন ধরে ওই পদ্ধতিতে কারচুপি করে আসছে তারা এই নতুন পদ্ধতিতে কারচুপি করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট কারচুপি করা খুবই কঠিন। এখানে গু-ামি-সন্ত্রাসীর মাধ্যমে বিএনপি’র নির্বাচনে জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। তারা অতীতে যা করেছে, তাই করতে চাইছে। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের ওপর কখনোই আস্থা রাখতে পারে না। তারা ডিজিটাল পদ্ধতির প্রতিও আস্থাশীল নয়।
বাংলাদেশিদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দূতাবাসগুলো ‘গর্হিত কাজ করেছে’ বলে মন্তব্য করে বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) দেশিদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে গ্রহণ করে ঠিক করেনি। বাংলাদেশিরা কীভাবে বিদেশি পর্যবেক্ষক হয়?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টানা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই মানুষ এখন এর সুফল ভোগ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি এবং আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ্। ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত নিজ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া ও উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে এ রায় ঢাকাবাসীর বিজয়। আমি এ বিজয় ঢাকাবাসীর জন্য উৎসর্গ করছি। বঙ্গবন্ধু ও সব শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে এ বিজয় আমি ঢাকাবাসীকে উৎসর্গ করছি। এ বিজয় ঢাকাবাসীর বিজয়। আমার বিশ্বাস ছিল ঢাকাবাসী উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে অভূতপূর্ব সাড়া দেবে।
নির্বাচনোত্তর প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, গত ৯ মাস অনুশীলন করেছি। এতদিন একটি সুযোগ চেয়েছিলাম। নগরবাসী আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। বিভিন্ন খাতে বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের নিয়ে নগরের সমস্যা দূর করব। এটি একলা চলার পথ না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধান করব। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজ শেষ করাই হবে আমার অন্যতম লক্ষ্য। এছাড়াও নতুন ১৮ ওয়ার্ড নিয়েও কাজ করা হবে। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, সবাইকে নিয়ে মোকাবেলা করব।