উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রয়াত মার্কিন সিনেটর মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদ এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার বাবা ১৯৭২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বটগাছের চারা রোপণ করেছিলেন। বটগাছটি দুই দেশের মানুষের বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী দিনেও এই গাছ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন বহন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’
গত ২৯ অক্টোবর পাঁচ দিনের সফরে সপরিবারে তিনি ঢাকায় আসেন, সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন এবং তার সম্মানে সরকারিভাবে সংবর্ধনা আয়োজন করা এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডিকে প্রদত্ত মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। সফরকালে তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
‘আমার বাবা ১৯৭২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বটগাছের চারা রোপণ করেছিলেন। বটগাছটি দুই দেশের মানুষের বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী দিনেও এই গাছ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন বহন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গত ৫০ বছর যাবৎ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আগামী ৫০ বছরে আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, আমার বাবা বাংলাদেশের মানুষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭১ সালের গণহত্যা সম্পর্কে আমাদের অনেক গল্প শুনিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।’
গত ৩ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন’ শীর্ষক এক বিশেষ বক্তৃতা প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এবং কালচারাল অ্যাফেয়ার্স অ্যাটাচি মিস শার্লিনা মরগান-হুসেন বক্তব্য রাখেন।
কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘আমি এইমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার বটগাছটি পরিদর্শন করেছি, যেটি আমার বাবা ১৯৭২ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে রোপণ করেছিলেন। বটগাছটি দুই দেশের মানুষের বন্ধুত্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ৫০ বছর ধরে গাছটি যেমন বেড়ে উঠেছে তেমনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কও বেড়ে চলছে।’
কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘আমার বাবা যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে সে-সময় গাছটি রোপণ করেছিলেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানিরা ঐ জায়গায় থাকা বটগাছটি ১৯৭১ সালে উড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ সেখানে শিক্ষার্থীরা একত্র হতো এবং আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করত। বাবা গাছটি রোপণ করেছিলেন, যাতে শিক্ষার্থীরা আবার সেখানে জড়ো হয়ে রাজনৈতিক আলোচনা করতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি সাহসী অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। সে-সময় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আমার বাবা ১৯৭১ সালে ভারতে শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেছিলেন।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারকে ১৯৭১-এ এডওয়ার্ড কেনেডির করা দক্ষিণ এশিয়ায় সংকট শিরোনামের প্রতিবেদনের মূল কপি উপহার দেন তিনি। মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারকেও ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার নিক্সন প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জনগণ, কনস্যুলেট ও সিনেটররা সে-সময় পাকিস্তানিদের সাহায্য করার জন্য মার্কিন প্রশাসনের বিরোধিতা করেছিলেন। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডিও তাদের মধ্যে একজন ছিলেন, যিনি নিক্সন প্রশাসনের সমালোচনা করেছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৭১ সালে কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে আচরণ করার জন্য পাকিস্তান সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পিতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়রকে ধন্যবাদ জানান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে উপাচার্য বলেন, ‘সে-সময় বাংলাদেশের পক্ষে তিনি আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।’
এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডির বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এর আগে এডওয়ার্ড (টেড) এম কেনেডি জুনিয়র তার বাবার রোপণ করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনসংলগ্ন ঐতিহাসিক বটগাছটি সপরিবারে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান কেনেডি জুনিয়রকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।