ইউনূস রাজনৈতিকভাবে সৎ হলে নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে এভাবে বিদেশিদের কাছে ধরনা দিতেন না। তিনি নিজেকে বাংলাদেশের সংবিধান, আইনকানুন ও বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বে বলে মনে করতেন না।
নূহ-উল-আলম লেনিন: অন্যসব নোবেল পুরস্কার নির্বাচন করে সুইডিস একাডেমি। কেবল শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কাকে দেওয়া হবে সে-ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় নরওয়েজান পার্লামেন্টারি কমিটি। নিঃসন্দেহে নোবেল পুরস্কার খুবই সম্মানজনক। ১৯০১ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। যে ৫টি বিষয়ে এ পুরস্কার দেওয়া হয়, তা হলো- পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তি। ১৯৬৮ সাল থেকে অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। অন্যগুলোতে তেমন বিতর্ক না-থাকলেও শুরু থেকে সাহিত্য ও শান্তিতে পুরস্কার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বিশেষ করে শান্তি পুরস্কারটি সবচেয়ে বিতর্কিত। এ পুরস্কারটি মূলত রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রদান করা হয়। ইতোপূর্বে এমনসব বিতর্কিত ব্যক্তিকে শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যা জগৎজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতা আইজাক রবিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন প্যারেজ, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ভেরউড অথবা সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা, এমনকি সমাজতন্ত্রের পতন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার জন্য অভিযুক্ত বিদায়ী প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় বিশ্বব্যাপী বিতর্কের ঝড় ওঠে। এ-রকম উদাহরণ অনেক দেওয়া যাবে।
২০০৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শান্তিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। যুদ্ধের বিরুদ্ধে, সংঘাত বা জাতিগত হানাহানির বিরুদ্ধে অথবা জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবদানের জন্য নয়, ক্ষুদ্র ঋণ প্রবর্তনের জন্য ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংককে যৌথভাবে ‘শান্তি পুরস্কার’ দেওয়া হয়। মার্কিন প্রভাবিত নরওয়েজিয়ান কমিটি অতীতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে বিতর্কিত অনেক ব্যক্তিকে শান্তি পুরস্কার প্রদান করেছে। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জগদ্বিখ্যাত বামপন্থি বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রকৃত যোগ্যতা নয়, বিশ্বপুঁজিবাদের স্বার্থ রক্ষার বিবেচনা থেকে প্রায়শ নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়!
সে যা হোক, আমাদের নিবন্ধিত গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল পেলে সাধারণভাবে বাংলাদেশের মানুষ খুশিই হয়েছে। উচ্ছ্বসিত ইউনূস তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের সাথে দেখা করার জন্য ছুটে যান। কিন্তু বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেননি। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ড. ইউনূসের অফিসে গিয়ে তাকে পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দিত করেন।
আমরা প্রথম ধাক্কা খেলাম, যখন দেখলাম এদেশের ঐতিহ্য অনুযায়ী এত বড় একটা অর্জনের পরও ড. ইউনূস শহিদ মিনার বা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করলেন না। অবশ্য কেউ কেউ দাবি করেন, ২০০৬ সালে ইউনূস একবার শহিদ মিনারে গিয়েছিলেন। তবে সেটাই শেষবার। দেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবী সমাজ, যারা ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বসিত হয়েছিল, তারা স্তম্ভিত হলেন। তাদের সেই বিস্ময় এখনও কাটেনি, কেননা তারা লক্ষ করেছেন, ওবামা/হিলারির বন্ধু কখনোই কোনো জাতীয় দিবস পালন করেন না, মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মৃতি স্মরণ করেন না, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, ’৭১-এর বধ্যভূমি বা শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যান না। তাকে আমরা কখনও একুশের বইমেলা বা বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠানে দেখি না। কোনো দেশপ্রেমিক ও সেকুলার মানুষ কি তা করতে পারে? আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ বা তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন তো দূরের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা ভুলেও তিনি উচ্চারণ করেন না। হয়তো বা জঙ্গিদের বা খালেদা-তারেকের সন্তুষ্টির জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় প্রতিবাদ না-করে নির্বিকার থাকেন। তিনি তো শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন, তা কেমন করে পাওয়া যায়?
২০০৬ সালেও বিএনপি ভেবেছিল ইউনূস তাদের লোক। কিন্তু তাদের এবং দেশবাসীরও মোহভঙ্গ ঘটে, যখন ওয়ান-ইলেভেনের পর চট্টগ্রামের সওদাগর-পরিবারের উচ্চাকাক্সক্ষী লোকটি ভাবলেন, হাসিনা-খালেদা নন, তিনিই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিলেন। সবাইকে জানিয়ে দিলেন, হাসিনা বা খালেদা নন, তিনিই বিকল্প! আসন্ন নির্বাচনের পর তিনিই হবেন দেশের ভাগ্যবিধাতা, প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিধিবাম, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং ডিজিএফআই-র মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় নতুন দলে যোগদানেচ্ছুদের তালিকা প্রণয়ন করতে গিয়ে দেখলেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা বাম ঘরানার কোনো দল থেকে কেউই তার দলে নাম লেখাতে আসেনি। কার্যত দেশের রাজনীতি-সচেতন মানুষ তাকে প্রত্যাখ্যান করে।
আত্মম্ভরি ইউনূস নাকে খত দিয়ে রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে আনেন।
ইউনূস চমক সৃষ্টি করতে ভালোবাসেন। নোবেল পাওয়ার পর অতি উৎসাহে গদগদ ইউনূস বলেছিলেন, ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য জাদুঘরে পাঠাবেন। তার এ স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে। দারিদ্র্য হ্রাস বা সর্বনিম্ন পর্যায়ে আনা যাবে (যেটা বর্তমান সরকার বহুলাংশে করেছে); কিন্তু জাদুঘরে পাঠানোর দাবি অলীক কল্পনা।
আশির দশকে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের সামাজিক অর্থনৈতিক ফলাফল নিয়ে সমীক্ষা করেছিলেন, বিআইডিএস-এর একটি গবেষক দল। নেতৃত্ব দিয়েছেন তখনকার তরুণ অর্থনীতিবিদ (পরবর্তীকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর) আতিউর রহমান। আমাদের ১৭টি কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে তারা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগঠনগুলোর নেতা কৃষক লীগের তৎকালীন সভাপতি রহমত আলী ও কৃষক সমিতির সভাপতি ফজলুল হক খন্দকার-সহ কৃষক নেতৃবৃন্দ আতিউরদের সাথে প্রচণ্ড দ্বিমত ও তর্কবিতর্ক করে চলে আসেন। আতিউররা ক্ষুদ্র ঋণ ও ড. ইউনূসের উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন। তারাই ড. ইউনূসের তথাকথিত সাফল্যকে ঢাকঢোল পিটিয়ে জাতির সামনে আনেন। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কৃষক নেতৃবৃন্দের মাঠ পর্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো, এটি আসলে সামন্ততান্ত্রিক মহাজনী প্রথার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। তবে ফিউডাল মহাজনী প্রথার কোনো আইনসংগত নিয়মকানুন ছিল না, সুদের হারেরও কোনো সমাজস্বীকৃত হার নির্ধারিত ছিল না। গ্রামীণ ব্যাংক প্রবর্তিত ক্ষুদ্র ঋণ ফিউডাল শোষণের জায়গায় পুঁজিবাদী ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে। এতে গ্রামাঞ্চলে ফিউডাল শোষণ দুর্বল হয় এবং নতুন ব্যবস্থায় প্রান্তিক চাষি ও ক্ষেতমজুর নারী-পুরুষের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তবে গ্রামীণ ব্যাংকের নেতিবাচক দিকগুলো প্রকট রূপে সামনে আসে। সুদের হার ও ঋণ পরিশোধের শর্তগুলো মহাজনী শোষণকে নতুন মোড়কে সামনে আনে। তবু ফিউডালইজমের চেয়ে ক্যাপিটালইজম যে অপেক্ষাকৃত মানবিক, এ সত্য সবাইকে মানতে হবে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ইতোমধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকে ড. ইউনূসের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। আইন অনুযায়ী তাকে আরএমডি পদে বহাল রাখার সুযোগ নেই। অর্থমন্ত্রী মুহিত পুরনো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ইউনূস সাহেবকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। অর্থমন্ত্রী নিজেও একাধিকবার ইউনূসের বাসা বা অফিসে গিয়েছেন। অনেক আলোচনার পর প্রথমে নিমরাজি হলেও ড. ইউনূস মুহিত সাহেবের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেন। ইউনূসের সম্মান রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তরফেও তাকে ঐ পরামর্শ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। এমনকি তার সম্মান রক্ষার্থে তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের অ্যাডভাইজার হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু ইউনূস জেদ ধরেন, তিনি এমডি পদ ছাড়বেন না। তার ধারণা ছিল, তিনি ছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক টিকবে না। আর তাকে বিদায় জানালে বা পদচ্যুত করলে গ্রামীণ ব্যাংকে বিদ্রোহ দেখা দেবে। কিন্তু সরকার মেয়াদ শেষে সময় না বাড়িয়ে তাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বিদায় জানাতে বাধ্য হয়। কোথাও কেউ বিদ্রোহ করেনি। গ্রামীণ ব্যাংকও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বহাল তবিয়তে টিকে আছে। একজন নোবেল লরিয়েট সামান্য একটি এমডি পদে চাকরি রাখতে কতটা নিচে নামতে পারেন, এটা ইউনূসের বন্ধু এবং ভক্তদেরও লজ্জিত করে। আত্মসম্মানবোধহীন ইউনূস আইনের আশ্রয় গ্রহণ করেও ব্যর্থ হন।
নোবেল লরিয়েট হলেই কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন। ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও গ্রামীণফোনের শ্রমিক-কর্মচারীরা শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করে। কর ফাঁকির এক মামলায় হেরে রায় মেনে ইউনূস নির্ধারিত করও পরিশোধ করেছেন। বাকি মামলাগুলোতে আদালতের বিচার মানলে তার মর্যাদাই বাড়ত। কিন্তু ইউনূস ধরাকে সরা জ্ঞান করেছেন।
তিনি তাবত দুনিয়ার নোবেল লরিয়েট ও বিশিষ্টজনদের মধ্য থেকে ১৭০ জনকে মোবিলাইজ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলাচিঠি দিয়ে তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে বলেছেন। এটা যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং দেশের সার্বভৌম মর্যাদার বিরুদ্ধে বিবৃতিদাতারা তা বুঝেননি। তারা বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার বিভাগকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। তাদের দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ইউনূস বিনাবিচারে পার পেতে চাচ্ছেন। কোনো অন্যায় বা আইনের পরিপন্থী কিছু না করলে তার এত ভয় কেন?
নোবেল লরিয়েট কি কোনো অন্যায় করতে পারেন না? বাস্তবতা হচ্ছে, অন্যায় করলে নোবেল লরিয়েটকেও বিচারের সম্মুখীন হতে হয়, শাস্তি পেতে হয়। দু-একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি-
বেলারুশের শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এলেস বিয়ালিয়াটস্কি-র ১০ বছরের জেল হয়েছে, কোনো আওয়াজ আছে, হৈচৈ আছে, বিবৃতি আছে? নেই, কারণ বেচারার হয়তো অনুদান দেওয়ার সামর্থ্য নেই।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসার কর ফাঁকির মামলায় আদালতে ঘুরতে ঘুরতে জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলেছেন। বিশ্বমোড়লদের কোনো আওয়াজ শুনেছেন? না শোনেননি, কারণ সেখানেও ডোনেশন নেই। আমাদের ডক্টর সাহেব অনেক ভাগ্যবান, তিনি ১৬০ জনের স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছেন। সবার এত অনুদানের সক্ষমতা থাকে না। পরে আরও ১৫ জনকে যুক্ত করেছেন।
আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করলাম, নোবেল লরিয়েটদের খোলাচিঠিটি শেষ পর্যন্ত ড. ইউনূসের বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তারা তাদের চিঠিতে বাংলাদেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দুটিকে যথার্থ হয়নি মন্তব্য করেছেন। তারা বলেছেন, আগামী নির্বাচন যেন অবাধ নিরপেক্ষ এবং বড় দলগুলোর অংশগ্রহণমূলক এবং তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেই দাবিও তারা জানিয়েছেন। খোলাচিঠির এই অংশের ভাষ্য থেকে ইউনূস সাহেবের থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে। আমরা বুঝতে পারি না, বাংলাদেশের নির্বাচনের সাথে ড. ইউনূসের মামলার কী সম্পর্ক রয়েছে। এ-কথা সুস্পষ্ট যে, খোলাচিঠিটি ড্রাফট করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। নিঃসন্দেহে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নোবেল লরিয়েটরা একত্র বসে বা অনলাইনে যুক্ত হয়ে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা করে স্বাক্ষর করেননি। তারা ইউনূসের অনুরোধে অযথা ইউনূস কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে নিয়োজিত লবিস্টদের মাধ্যমে এই খোলাচিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
ইউনূস রাজনৈতিকভাবে সৎ হলে নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে এভাবে বিদেশিদের কাছে ধরনা দিতেন না। তিনি নিজেকে বাংলাদেশের সংবিধান, আইনকানুন ও বিচার বিভাগের ঊর্ধ্বে বলে মনে করতেন না। বলতেন না যে ‘নিরপেক্ষ’ বিচারকমণ্ডলী দিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিচার করতে হবে। এই নিরপেক্ষ বিচারকমণ্ডলী কে ঠিক করবে? সংবিধানের কোন বিধি বলে এই নিরপেক্ষ আদালত গঠিত হবে। প্রচলিত এবং সংবিধানসম্মত পদ্ধতি হচ্ছে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়া। কিন্তু ড. ইউনূসের এবং কথিত নোবেল লরিয়েটদের কারোই বাংলাদেশের সংবিধান বা বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নেই। যে ব্যক্তি বাংলাদেশের সংবিধান ও বিচার ব্যবস্থাই মানেন না, প্রশ্ন হচ্ছে- সেই ব্যক্তি কি এদেশের প্রতি অনুগত?
আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে, ড. ইউনূসকে দেখে তো মনে হয় তিনি খুব প্রোপিপল মানুষ। কিন্তু কোনো জাতীয় সংকটে, তা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক বা প্রাকৃতিক হোক না-কেন, তাকে তো আমরা জনগণের পাশে দেখি না। কোনো দুর্যোগেও তিনি মানুষের পাশে দাঁড়ান না। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, কোভিডের মতো মহামারি বা জনস্বাস্থ্য, জঙ্গিবাদী তৎপরতা এবং এমনকি তার নিজের শহর চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতাসহ যে কোনো জনদুর্ভোগের সময় তিনি তার ট্রাস্ট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারতেন না, ড. ইউনূস এদেশেরই সন্তান। আমরা দেখতে চাই, আত্মম্ভরিতা ও শ্রেষ্ঠত্বের মনোভাব ছেড়ে তিনি দেশকে মাতৃজ্ঞান করবেন। দেশের প্রতি, দেশের সংবিধান, দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবেন। বাঙালি জাতির মহৎ ঐতিহ্যকে ধারণ এবং চর্চা করবেন। আরও বিনয়ী হবেন, সংকটে-দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। সাম্রাজ্যবাদের হাতিয়ার না হয়ে সকল রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি জাতীয় মূলধারায় ফিরে আসবেন। নোবেল পুরস্কারের শেষ সম্মানটুকু রক্ষা করবেন।