উত্তরণ প্রতিবেদন: রাষ্ট্রীয় সব অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বাধ্যতামূলক ঘোষণা করেছেন আদালত। গত ১০ মার্চ রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সর্বস্তরের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জয় বাংলা স্লোগান বলতে ও দিতে হবে। সামনে ১৬ ডিসেম্বর আছে বা পরবর্তী সময়ে যেসব জাতীয় দিবস আছে প্রতিটি দিবসে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ভাষণ বা বক্তব্যের শুরু ও শেষেও জয় বাংলা স্লোগান দিতে হবে। আদালতের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান প্রশ্নে রুলের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ, সিনিয়র আইনজীবী শফিক আহমেদ, সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, সিনিয়র আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু ও সিনিয়র আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার।
আদালতের রায়ে বলা হয় ,শুধু দেশেই না। একাত্তরে যখন মহান মুক্তিযুদ্ধ চলে তখন দেশে ও বিদেশে একটাই স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। এছাড়া পাকিস্তানেরও কিছু কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা এক হয়ে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিয়েছেন। এমনকি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে গুলি করার আগ-মুহূর্তেও এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দিয়েছে। সর্বোপরি এদেশের ধর্মনিরপেক্ষ স্লোগানেই হচ্ছে ‘জয় বাংলা’। আদেশে আদালত বলেছেন, আমরা ঘোষণা করছি যে, ‘জয় বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। সকল জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে যেন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ করেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। ‘সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পর ছাত্র-শিক্ষকগণ যেন জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
রায় ঘোষণার পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, রায়ে আদালত বলেছেন, বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে ‘জয় বাংলা’। তবে আদালত বলেছেন, তাদের (কোর্ট) সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আবেদনকারী, সকল আইনজীবীর (এ রুল শুনানিতে যেসব আইনজীবীর মতামত নিয়েছেন আদালত) আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে আদালতও একমত। কিন্তু আইন প্রণয়ন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা হাইকোর্ট বিভাগের নেই। তবে আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, রাষ্ট্র চাইলে, আইন বিভাগ যদি মনে করে সংবিধান সংশোধন করে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান করে আইনগত কার্যকারিতা প্রদান করা সম্ভব।
রিটকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ বলেন, জয় বাংলা হচ্ছে আমাদের জাতীয় প্রেরণার প্রতীক। পৃথিবীর ৬০ দেশে জাতীয় স্লোগান আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য যে আমরা আমাদের চেতনার সেই ‘জয় বাংলা’কে স্বাধীনতার এতদিন পরেও জাতীয় স্লোগান হিসেবে পাই নাই। তিনি বলেন, জয় বাংলা কোনো দলের স্লোগান নয়, কোনো ব্যক্তির স্লোগান নয়, এটা হচ্ছে আমাদের ন্যাশনাল ইউনিটি। এই স্লোগান দিয়ে একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণার নির্দেশনা চেয়ে এর আগে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী ড. বশির আহমেদ। সেই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর এই রুলের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষসহ সিনিয়র আইনজীবীদের বক্তব্য শুনেন আদালত।
আদেশে আদালত বলেছেন, আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। সকল জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উচ্চারণ যেন করেন, সে-জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পরে ছাত্র শিক্ষকগণ যেন জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আদালতের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলে নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে ৫ ডিসেম্বর থেকে এ রুলের শুনানি শুরু হয়। রুলের বিবাদীরা হচ্ছেন- মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও শিক্ষা সচিব। ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে ৫ ডিসেম্বর থেকে এই রুলের শুনানি শুরু হয়। রুলের বিবাদীরা হচ্ছেন- মন্ত্রিপরিষদ সচিব, আইন সচিব ও শিক্ষা সচিব।