সুন্দরবন বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের থেকে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ১০ হাজার ২৩০ বর্গকিলেমিটার জায়গাজুড়ে এই বন বিস্তৃত।
- ফারুক শাহ
০৩ জুলাই : জন্ম নিবন্ধন দিবস
জন্ম নিবন্ধন দিবস। নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে দিবসটি পালিত হয়। জন্মের পর সরকারি খাতায় প্রথম নাম লেখানোই জন্ম নিবন্ধন। একটি শিশুর জন্ম নিজ দেশকে, বিশ্বকে আইনগতভাবে জানান দেওয়ার একমাত্র পথ জন্মের পর জন্ম নিবন্ধন করা। নবজাতকের একটি নাম ও একটি জাতীয়তা নিশ্চিত করতে এটি হচ্ছে প্রথম আইনগত ধাপ। জন্ম নিবন্ধন প্রতিটি শিশুসহ বয়স্কদেরও একটি অধিকার। এটি নাগরিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। পৃথিবীতে একটি শিশু জন্মানোর পর রাষ্ট্র থেকে প্রথম যে স্বীকৃতি সে পায়, সেটি হলো জন্ম নিবন্ধন। দেশের অন্যান্য নাগরিকের সাথে সে সমান অধিকারে এক কাতারে শামিল হয় এই জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে। প্রথম জন্ম নিবন্ধনের অধিকার জাতিসংঘের শিশু সনদে (ইংরেজি : Convention on the Rights of the Child-CRC) স্পষ্ট উল্লেখ আছে। জন্ম নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে একটি শিশু একটি নাম লাভ করে, যা সারাজীবন তাকে একটি পরিচিতি দেয়। জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি শিশু প্রথম নাগরিকত্বও লাভ করে। জন্ম সনদ অত্যাবশ্যকীয় করার লক্ষ্যে সরকার নতুন করে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ প্রণয়ন করে। জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শিশু অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আইনটি ৩ জুলাই ২০০৬ থেকে কার্যকর করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশে এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
১৪ জুলাই : ঐতিহাসিক বাস্তিল দিবস
পৃথিবীর ইতিহাসে স্মরণীয় দিনগুলোর অন্যতম ১৪ জুলাই। ঐতিহাসিক বাস্তিল দিবস। ফ্রান্সের জাতীয় উৎসবের দিন। শুধু তাই নয়, ফরাসি বিপ্লব ও আধুনিক ফ্রান্সের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয় ফরাসি ইতিহাসের এ ঘটনাবহুল দিনটিকে।
১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্স রাজ্যের প্যারিস কুখ্যাত বাস্তিলে বিক্ষোভ (ফরাসি : Prise de la Bastille) হয়। এই বাস্তিল দুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এই বিপ্লব ছিল তদানীন্তন ফ্রান্সের শত শত বছর ধরে নির্যাতিত ও বঞ্চিত ‘থার্ড স্টেট’ বা সাধারণ মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এই বিপ্লবের আগে সমগ্র ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক ছিল মাত্র ৫ শতাংশ মানুষ। অথচ সেই ৫ শতাংশ মানুষই কোনো আয়কর দিত না। যারা আয়কর দিত তারা তেমন কোনো সুবিধা ভোগ করতে পারত না। এবং এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করত তাদের এই বাস্তিল দুর্গে বন্দী করে নির্যাতন করা হতো। ঘটনাবহুল বাস্তিল দুর্গ ছিল স্বৈরাচারী সরকারের নির্যাতন ও জুলুমের প্রতীক। একবার কোনো বন্দী সেখানে প্রবেশ করলে, জীবন নিয়ে আর ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকত না। কারাগারের ভিতরেই মেরে ফেলা হতো অসংখ্য বন্দীকে। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই নির্বাচিত প্রতিনিধি, রক্ষীবাহিনীর সদস্য এবং বাস্তিল দুর্গের আশপাশের বিক্ষুব্ধ মানুষ বাস্তিল দুর্গ অভিমুখে রওনা হয়। রক্তক্ষয় এড়াতে প্রতিনিধিরা দুর্গের প্রধান দ্য লোনের কাছে আলোচনার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব ছিল বাস্তিলে সাতজন রাজবন্দিকে মুক্তি দেওয়া। দ্য লোন সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতার ঢেউ বাস্তিল দুর্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুর্গের সৈন্যরাও ভিতর থেকে কামান দাগাতে থাকে। প্রায় ২০০ বিপ্লবী মানুষ হতাহত হয়। এরপর চারদিক থেকে উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ জনতা বাস্তিল দুর্গ ধ্বংস করে। জয় হয় সাম্য, মৈত্রী এবং স্বাধীনতার। এ বিপ্লবের হাত ধরে ১৭৯৯ সালে ফ্রান্সে আনুষ্ঠানিক রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি হয়। সূচনা হয় প্রজাতান্ত্রিক আদর্শের শাসন ব্যবস্থার। ১৭৯০ সালে প্রথম বাস্তিল দিবস উদযাপন করা হয়।
২৬ জুলাই : আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস
আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস। ম্যানগ্রোভ এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ, যা সাধারণত সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের নোনা পানিতে জন্মায়। এগুলো হচ্ছে শ্বাসমূলীয় উদ্ভিদ। জোয়ারের সময় শ্বাসমূলের সাহায্যে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ শ্বসন কাজ চালায়। এদের মূল থেকে একটা ডালের মতো চিকন অংশ মাটি ভেদ করে উপরে উঠে আসে। জোয়ারের সময় যখন মাটির উপরে পানি জমে যায়, তখন এই শ্বাসমূলগুলো পানির উপরে ভেসে থাকে। এই শ্বাসমূলগুলোর মাথায় এক ধরনের শ্বাসছিদ্র থাকে, যাদের বলে নিউমাটাপো। এদের সাহায্যেই ম্যানগ্রোভ গাছেরা শ্বাস নেয়।
ইকুয়েডরে ম্যানগ্রোভ কেটে চিংড়ি চাষ করার প্রতিবাদে ১৯৯৮ সালের ২৬ জুলাই আয়োজিত সমাবেশে একজন অংশগ্রহণকারীর মৃত্যু হয়। সেই থেকে তার স্মরণে এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। ম্যানগ্রোভ বা বাদাবনের জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখা এবং এর প্রতিবেশ সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস পালিত হয়।
পরিসংখান বিবেচনায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, এই পৃথিবীতে ১ লাখ ৮১ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বিস্তৃত ছিল। অতি সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা যায়, এই বনাঞ্চলের আয়তন ১ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটারের নিচে নেমে এসেছে। পৃথিবীব্যাপী গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও উপ-উষ্ণ (Tropical and Sub-tropical) উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ জাতীয় বনাঞ্চল দেখা যায়। ১০২টি দেশে ম্যানগ্রোভের অস্তিত্ব থাকলেও কেবলমাত্র ১০টি দেশে ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে। পৃথিবীর সব ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ৪৩ শতাংশ ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া এবং নাইজার-এ অবস্থিত এবং এদের প্রত্যেকটি দেশে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ২৫ হতে ৬০ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে।
সুন্দরবন বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের থেকে বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ১০ হাজার ২৩০ বর্গকিলেমিটার জায়গাজুড়ে এই বন বিস্তৃত। বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ৬ হাজার ৩০ বর্গকিলোমিটার। অভ্যন্তরীণ নদী ও খালসহ এই বনের আয়তন প্রায় ৬ হাজার ৪৭৪ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট বনভূমির ৪৭ শতাংশই সুন্দরবন। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এই ম্যানগ্রোভ বন গড়ে উঠেছে। এই বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী ছাড়াও অন্যান্য বৃক্ষের মধ্যে গেওয়া, পশুর, ধুন্দল, কেওড়া, বাইন ও গোলপাতা অন্যতম।