Wednesday, October 4, 2023
বাড়িউত্তরণ প্রতিবেদনজননেতা মোহাম্মদ নাসিম পরলোকে

জননেতা মোহাম্মদ নাসিম পরলোকে

উত্তরণ প্রতিবেদন: আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪-দলের সমন্বয়ক, খাদ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোহাম্মদ নাসিম এমপি আর নেই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ব্রেইন স্ট্রোকে সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছিল সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের জীবন। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আট দিন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ১৩ জুন বেলা ১১টা ১০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি … রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন পুত্রসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত, শুভাকাক্সক্ষী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
পিতা জাতীয় চার নেতার একজন শহিদ এম মনসুর আলীর রাজনীতির ধারায় অবিচল থাকা সাহসী ও আপসহীন রাজনীতিক মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অঝোরে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে ফোন করেন মোহাম্মদ নাসিমের জ্যেষ্ঠ পুত্র তানভির শাকিল জয়কে।
আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে দলটির যে কয়েকজন নেতাকে রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকায় দেখা যায়, তাদের একজন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি ১৪-দলের রাজনৈতিক তৎপরতায়ও ছিলেন সামনের কাতারে।
মোহাম্মদ নাসিম সংসদে ষষ্ঠবারের মতো সিরাজগঞ্জ-১ আসনের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য থাকার পাশাপাশি ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন প্রবীণ রাজনীতিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪-দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম এমপি। সোবহানবাগ জামে মসজিদে এবং বনানী কবরস্থান মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পৃথক দুটি নামাজে জানাজা শেষে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার মধ্য দিয়ে গত ১৪ জুন বেলা ১১টায় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। সব মহলে অসম্ভব জনপ্রিয় মোহাম্মদ নাসিমকে একটু দেখতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে দুটি জানাজায় ছিল জনতার ঢল।
বনানীতে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। পরে জাতীয় ও দলীয় পতাকায় মোড়া মোহাম্মদ নাসিমের কফিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মোহাম্মদ নাসিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর সোবহানবাগ মসজিদে মোহাম্মদ নাসিমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কিছুক্ষণের জন্য মরদেহ তার ধানমন্ডির বাসভবনে নেওয়া হয়। বনানীতে জানাজা ও শ্রদ্ধা জানানো শেষে নাসিমের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাকে দাফন করা হয়। বনানী কবরস্থানেই শায়িত আছেন মোহাম্মদ নাসিমের বাবা জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলী।
জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অংগ্রহণ করেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া
জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহিদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর রাজনৈতিক জীবনের পথ ধরে তার মতোই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪-দলের সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি। এম মনসুর আলী যেভাবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে কাজ করে গেছেন, তার ছেলে মোহাম্মদ নাসিমও তেমনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সামনে থেকে লড়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ব্রেইন স্ট্রোকে গত ১৩ জুন মৃত্যু হয় মোহাম্মদ নাসিমের। তার মৃত্যুতে শোকবিহ্বল রাজনৈতিক অঙ্গন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তারা প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন নির্ভীক যোদ্ধা। তার মৃত্যু বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মোহাম্মদ নাসিমের নাম চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মোহাম্মদ নাসিম তার পিতার মতোই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও জনমানুষের নেতাকে হারাল। আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, করোনাভাইরাসের সংকটেও সে সমস্ত কাজে যুক্ত ছিল বলেই অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। নাসিমের মৃত্যু মেনে নেওয়া আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। এক শোকবার্তায় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, তার মৃত্যুতে জাতি আজ সত্যিকারের নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদ হারাল, যা সহজে পূরণ হবার নয়।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেন, সে ছিল জাতীয় নেতা, তার একটা বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ছিল। সে সংগ্রামী নেতা ছিল, জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও সংগঠনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিল। আমি মর্মাহত, বেদনাহত যে, নাসিম এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, অনেকেই ঝামেলাহীন জীবনযাপন করেছে; কিন্তু নাসিম সেটা করেনি। এখানে নানা মত, নানা পথের লোকজন আছে। সবাইকে এক জায়গায় করা, এটাতে নাসিমের অবদান ছিল অসীম, যা সে করে গেছে সফলতার সঙ্গে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে এবং বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ একজন সৎ, ত্যাগী, নিষ্ঠাবান, অনুসরণযোগ্য এক অকৃত্রিম সুহৃদকে হারাল।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যে ১৪-দলের মুখপাত্র ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম, সেই জোট এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এদেশের মুক্তিযুদ্ধে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এবং বিশেষ করে ১৪-দলের সংগ্রাম-আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন একজন অকুতোভয় যোদ্ধা। ১/১১ সেনাশাসনে জেলখানায় তার ওপর নিপীড়নের ফলে তাকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে হয়েছিল। তারই পরিণতিতে আবারও স্ট্রোক আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। এই দুঃখ আমাদের রাখার জায়গা নেই।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি, সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেছেন।
মোহাম্মদ নাসিম : এক বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ
১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় এম মনসুর আলী ও মোসাম্মত আমেনা মনসুরের ঘরে মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম। জাতীয় চার নেতার একজন এম মনসুর আলী, যিনি পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে খুন হন। গত ১৩ জুন না ফেরার দেশে চলে গেলেন মোহাম্মদ নাসিম।
মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন। ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার কয়েক বছর পর তিনি যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। এরপর ১৯৮১ সালের সম্মেলনে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুব সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৮৭ সালে দলের প্রচার সম্পাদক হন নাসিম। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে পরপর দুবার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান নাসিম। ওই সময় দলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ একটি ছিল। ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে কার্যনির্বাহী কমিটির ১ নম্বর সদস্যপদে ছিলেন নাসিম। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। টানা তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছিলেন। একই সঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের মুখপাত্রের দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৮৬ সালে প্রথম সিরাজগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। ওই একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে ছয়বার জাতীয় সংসদে আসেন তিনি। ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। মাঝে মামলার কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন নি। ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার ছেলে তানভীর শাকিল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী হন মোহাম্মদ নাসিম। পরের বছর আরও একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ডাক ও টেলিযোগাযোগের পাশাপাশি তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এরপর ১৯৯৯ সালে মন্ত্রিসভা রদবদল করা হলে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালের সরকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় তাকে রাখা হয়নি। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি করা হয় তাকে।
রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল মোহাম্মদ নাসিমের। সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন সময় নির্যাতন সহ্য করেছেন। আলোচিত এক-এগারো সরকারের সময়েও গেছেন কারাগারে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার বাবার মতোই বঙ্গবন্ধু পরিবারের আস্থাভাজন ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম।
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এর মাত্র আড়াই মাসের মাথায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার হন মোহাম্মদ নাসিম। এক-এগারো সরকারের দ্বিতীয় মাসেই আরও অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে গ্রেফতার হন নাসিম।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ-র ইন্তেকাল
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ (৭৪) গত ১৩ জুন ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। সেদিন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এর আগে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সিএমএইচ-র আইসিউই’তে ভর্তি করা হয় তাকে। পরে তার অবস্থার অবনতি ঘটে।
শেখ আবদুল্লাহ ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ মো. মতিউর রহমান এবং মাতা মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
শেখ মো. আবদুল্লাহ স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসা থেকে কোরআনে হেফজের মাধ্যমে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর একই মাদ্রাসার কওমি ধারায় পড়াশোনা করেন। ১৯৬১ সালে মেট্রিক, ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৬৬ সালে বি কম (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম কম এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রিও নেন শেখ আবদুল্লাহ।
শিক্ষা জীবন শেষে সুলতানশাহী কেকানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে আইনজীবী হিসেবে গোপালগঞ্জ জজকোর্ট ও ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে ছাত্র-জীবনেই রাজনীতির সাথে যুক্ত হন আবদুল্লাহ। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগ দেন। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিরও দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এরপর কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০-এর নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ব্যাপক নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭১ সালে মুজিব বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তবে রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়েন শেখ আবদুল্লাহ। দীর্ঘদিন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ আওয়ামী লীগের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটিতে ধর্মবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ।

পরলোকে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান গত ১৪ জুন গভীর রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গত ১৫ জুন দুপুর আড়াইটায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। সিলেট নগরীর হযরত মানিকপীর (র.) গোরস্তানে মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় তাকে। কামরানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিন দিন সিলেট সিটি কর্পোরেশন কালো ব্যাজ ধারণ এবং শোক পালন করে।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এর আগে বাদ জোহর তার নিজ বাসভবন এলাকা ছড়ারপার জামে মসজিদে প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্পসংখ্যক লোক জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। কামরান এই মসজিদের মোতাওয়াল্লি ছিলেন। জননেতা কামরানের মৃত্যু সংবাদে নগরীতে শোকের ছায়া নেমে আসে। সিএমএইচ থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে দুপুরে লাশ এসে বাসায় পৌঁছলে কান্নার রোল পড়ে। হৃদয়বিদারক এক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

১৯৭২-২০২০ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
১৯৬৯-এর উত্তাল সময়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কামরানের। ১৯৭২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান তিনি। সেই থেকে সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন। টানা ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। এরপর প্রবাস থেকে ফিরে এসে ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান কামরান। ২০০৩ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় দুবার কারাবরণ করেন। ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় নির্বাচনে লড়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন।

রাষ্ট্রপতির শোক
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে সিলেটের উন্নয়নে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান যে অবদান রেখেছেন সেজন্য মানুষ তাকে সব সময় মনে রাখবে। তার মৃত্যুতে দেশ একজন নিবেদিত প্রাণ নেতাকে হারাল।’

প্রধানমন্ত্রীর শোক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি এক শোক বিবৃতিতে বলেন, ‘স্বীয় কর্মের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা কামরান গণমানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।’ প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য