আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আর সেই সুযোগ ব্যবহার করে বিদেশে বসে হুকুম জারি করে, ঐ বিদেশ থেকে ধরে এনে ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশে শাস্তি দেব ঐ কুলাঙ্গারকে। কেউ ছাড় পাবে না।
উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে তার দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ দেশের জনগণ আগামীতেও নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগণের সেবা করে যাব।’ ‘এবার নৌকা জিতবেই’ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৪ নভেম্বর বিকালে রাজধানীর আরামবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ-কথা বলেন।
মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন এবং নর্দান রুটে এমআরটি লাইন-৫ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোনো সময় তফসিল ঘোষণা করা হবে উল্লেখ করে তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলেন, আগামী নির্বাচনে কাকে নমিনেশন দেওয়া হবে সেটা আমরাই ঠিক করে দেব। যাকে নমিনেশন দেব ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে, যেন আবার আমরা এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
তিনি বলেন, এখনও অনেক উন্নয়ন কাজ বাকি। সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ, অগ্নিসন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদীরা ক্ষমতায় এলে এদেশকে আর টিকতে দেবে না। সে-জন্যই জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে সকলকে ঐক্যবব্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা ও উন্নয়ন দিতে। এই নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য তিনি সকলের প্রতি বিশেষ করে ঢাকাবাসী মানুষের প্রতি তার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, এই নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছিলাম বলেই তো এত উন্নতি হয়েছে, সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখেন।
তিনি তার দল যাকেই মনোনয়ন দেয় তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে ঢাকাবাসীর প্রতিশ্রুতি কামনা করলে সকলে দুই হাত তুলে সমস্বরে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি সকলের দোয়া চেয়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা দলের সবাই ঐকবদ্ধ থাকবেন এবং ঘাতকের দল, সন্ত্রাসী দল বিএনপি এবং যুদ্ধাপরাধীর দল জামাত- এরা যেন এদেশের মানুষকে আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে। অত্যাচার করতে না পারে। তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে।
আগুন সন্ত্রাসীদের শাস্তির আওতায় আনার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যারা এর মধ্যে জড়িত, কারা হুকুমদাতা, সে দেশে থাকুক আর বিদেশিই থাকুক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আর সেই সুযোগ ব্যবহার করে বিদেশে বসে হুকুম জারি করে, ঐ বিদেশ থেকে ধরে এনে ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশে শাস্তি দেব ঐ কুলাঙ্গারকে। কেউ ছাড় পাবে না।
বারবার তাকে হত্যার প্রচেষ্টায় তিনি ভীত নন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি এবং বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই আবার পাওয়ারও কিছু নেই। একটাই লক্ষ্য- এই দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। আরও বক্তৃতা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। স্থানীয় সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেননও বক্তৃতা করেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী সভায় সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি মতিঝিল প্রান্তে এমআরটি লাইন-৫ এর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যেটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল।
তিনি আগারগাঁও প্রান্তে এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন শেষে টিকেট কেটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল প্রথম মেট্রোরেল যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, ডিসিসির দুই মেয়র, সংসদ সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন বেসমারিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং কর্তব্য পালনরত সাংবাদিকবৃন্দ মেট্রোরেলে তার সহযাত্রী হন।
বিদেশিদের কাছে বিএনপির দৌড়-ঝাঁপ ও নালিশের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কথায় কথায় বিদেশের মানুষের কাছে নালিশ করে। কারণ, দেশের মানুষের কাছে ঠাঁই নাই। সে-জন্য বিদেশে নালিশ করাটাই তাদের একটা বদ অভ্যেস।
আজকে বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা তা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবই, বলেন তিনি।
কোভিড-১৯ পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দাভাবের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি জানি এখন মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, সারাবিশ্বেই এটা বেড়েছে। তার জন্য সরকার পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছে এবং ১ কোটি মানুষ এটা দিয়ে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সুলভে ক্রয় করতে পারছে। পাশাপাশি, কৃষিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বর্তমান সরকারই ’৯৬ সালে ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে তিন-দফায় বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৩০০ টাকা করে দিয়েছে। কিন্তু আজকে যে শ্রমিক অসন্তষ হয়েছে এতে উসকানি রয়েছে। কেননা মজুরি বৃদ্ধির জন্য সরকার ইতোমধ্যে মজুরি কমিশন করে দিয়েছে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে; কিন্তু, এজন্য তো ধৈর্য ধরতে হবে।
বিএনপিকে ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার সাবধানবাণী উচ্চারণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। আর এটি যদি বন্ধ করতে না পারে, কীভাবে বন্ধ করাতে হয় তা আমাদের জানা আছে। এটি আমরা ছাড়ব না।
২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামাতের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংস করাই যেন তাদের একটি উৎসব। এই হলো বিএনপির চরিত্র।
তিনি ২৮ অক্টোবর পিটিয়ে ও কুপিয়ে পুলিশ হত্যা, পুলিশ হাসপাতালে হামলা, অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরসহ মহিলা আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা করে নারী নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে ঢাকাবাসীসহ সমগ্র দেশবাসীর প্রতি এদের আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দরকার হলে যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকে কোনো জিনিসপত্র-খাদ্যপণ্য আসতে দেয় না। সেখানেও বাধা দেয়। কাজেই আমি তাদের সাবধান করে দিচ্ছি। ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ আর এইদিকে জনগণের ভোট। আমার বাবা-মা ভাই, আমার ছোট রাসেলকেও তো হত্যা করেছিল। ভেবেছিল জাতির পিতার রক্তের আর কেউ কোনোদিন ক্ষমতায় আসবে না। খালেদা জিয়া তো বলেছিল, ১০০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আল্লাহর রহমতে ওই কথা তাদের বেলায় ফলে গেছে। আর আওয়ামী লীগ এই চার চারবার ক্ষমতায় আছে। ইনশাআল্লাহ আগামীতেও জনগণ নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগণের সেবা করে যাব।
জাতির পিতা যে দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই তাদের একমাত্র কাজ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।