সম্পাদকের কথা : স্বাধীনতা মানে ‘ভাত-কাপড়-বাসস্থান’। স্বাধীনতা মানে ‘শিক্ষা স্বাস্থ্য কর্মসংস্থান’। লেখা আছে মুক্তিযুদ্ধের তিরিশ লক্ষ শহিদের রক্ত-রেখায়। লেখা আছে পবিত্র সংবিধানে। লেখা আছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে।
“আমার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারলে, এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে।” বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এর একটি অক্ষরও বিস্মৃত হননি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। দারিদ্র্য-লাঞ্ছিত বাংলাদেশ। এক সময় পরিচয় ছিল ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’, ‘ভিক্ষুকের জাতি’। জনসংখ্যার অধিকাংশের বাস দারিদ্র্যসীমার নিচে। পরনির্ভর দেশ। পিএল-৪৮০-এর খাদ্যের জন্য হাত বাড়িয়ে থাকা দেশ। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যবহার করা পুরনো কাপড়-চোপড় ‘নিক্সন মার্কেট’Ñ থেকে কম দামে সংগ্রহ করে লজ্জা নিবারণ। লক্ষ কোটি হতদরিদ্র মানুষের না ছিল নিজের জমি, না ছিল ঘরবাড়ি।
এই সেই বাংলাদেশ, যেখানে ছিল নিত্য হাহাকার, খাদ্যাভাব, মঙ্গা-দুর্ভিক্ষ। স্বাধীনতার ৫০ বছরের প্রাক্কালে সেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরি নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে আত্মনির্ভরশীল। বাংলাদেশে এখন কেউ না খেয়ে থাকে না। আমাদের এখন আর পিএল-৪৮০-এর সাহায্য দরকার পড়ে না। এই করোনাকালেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। নিক্সন মার্কেট (পুরনো কাপড়ের বাজার) এখন অতীতের বিষয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আমাদের তৈরি পোশাক না হলে এখন ইউরোপ-আমেরিকার নাগরিকদের চলে না। আমাদের দেশে ২৪ লাখ নারী-পুরুষ পোশাক শিল্পে নিয়োজিত। আমাদের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ আসে পোশাক থেকে। দারিদ্র্য দূরীকরণ শতভাগ না হলেও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যা ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। সামাজিক নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচনের নানা উদ্ভাবনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় বাংলাদেশে এখন দারিদ্র্যের লজ্জা ঘুচিয়ে উন্নয়নশীল ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। যাদের মাথা গুজবার ঠাঁই ছিল না, যারা কোনোদিন ভাবেনি তাদের নিজস্ব বাড়িঘর হবে, শেখ হাসিনার শাসনামলে সেই ভূমিহীন, গৃহহীন মুটে-মজুর-কৃষকসহ নানা পেশার হতদরিদ্র মানুষগুলো এখন আধাপাকা বাড়ি ও বাড়ির ২ শতাংশ জমির মালিক। অনেকেই অভিযোগ করেন প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গরিব মানুষ প্রবৃদ্ধির সুফল পায় না। শেখ হাসিনা সেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছেন। গৃহায়ন ও আশ্রয়ণ কর্মসূচির আওতায় সর্বশেষ ৫৩ হাজার বাড়িঘর বিনা পয়সায় হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ যাবত সর্বমোট ১ লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি ঘরবাড়ি গৃহহীনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মুজিববর্ষে আরও ১ লাখ ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।
শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে কেউই গৃহহীন থাকবে না। প্রমাণিত হয়েছে তিনি যে অঙ্গীকার করেন তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেন। বাংলাদেশের গৃহায়ন কর্মসূচির অধীনে এই যে লাখ লাখ পরিবারের বাসস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, এর দ্বিতীয় কোনো নজির আমাদের জানা নেই। আমাদের প্রতিবেশী কোনো দেশই এ-ধরনের মানবিক কর্মসূচি গ্রহণ বা বাস্তবায়ন করেননি। এটা নজিরবিহীন। কেবল গৃহ সংস্থানই নয়, এই কর্মসূচির আওতায় সদ্য ঘরবাড়িতে আধুনিক স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ সুবিধা যেমন আছে, তেমনি প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগও সৃষ্টি করা হয়েছে। এমনকি তাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এদেশে হতদরিদ্র ভূমিহীন মানুষ এটা কল্পনাও করতে পারেনি। শেখ হাসিনা তাদের কাছে নতুন জীবনদাত্রীÑমাতৃস্বরূপ। রক্তের অক্ষরে লেখা সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার এখন কথার কথা নয়। বাস্তবেও বাস্তবায়িত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর গরিব মানুষের মুখে হাসি ফোটাচ্ছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে উপহাস করার সাহস কারও নেই। বাংলাদেশ আর ভিখিরির জাতি নয়। তারা দেখিয়েছে বাংলাদেশ কেবল যুদ্ধ জয় করেনি, জয় করছে দারিদ্র্য-পশ্চাৎপদতা ও অনুন্নয়নকে। আমি গতানুগতিক পরিসংখ্যান দিলাম না। ওগুলো এখন স্বতঃসিদ্ধ জানা কথা। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে যেমন আওয়ামী লীগ তার অঙ্গীকার পূরণ করে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে, তেমনি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অঙ্গীকারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এদেশের মানুষ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।