Sunday, September 24, 2023
বাড়িSliderগঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব

গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব

বরাবরের মতো এবারও গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদ আয়োজন করেছে ২১ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১১ দিনব্যাপী গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব-২০২২। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ৪ হাজার শিল্পীর অংশগ্রহণে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয় এই আয়োজন। শাহ সোহাগ ফকির-এর প্রতিবেদন-

বাংলাদেশ ও ভারত পাশাপাশি দুই দেশের রয়েছে সাংস্কৃতির মিল। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক পর্ষদ আয়োজিত এ উৎসব উদ্বোধন করেন নাট্যকার আতাউর রহমান। উৎসবের মধ্য দিয়ে মানুষের মাঝে বন্ধন গড়ে ওঠে মন্তব্য করে উদ্বোধক আতাউর রহমান বলেন, এই উৎসব বাংলাদেশ ও ভারতের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দুই দেশের নতুন প্রজন্ম নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতি দায়িত্ববোধে আবদ্ধ হওয়ার অঙ্গীকার সামনে রেখে বরাবরের মতো এবারও এই আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রীর বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে এ উৎসবের যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, একইসঙ্গে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রেও এ উৎসবের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। রামেন্দু মজুমদার বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন রুখে দিতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ পথ হারাবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পী ও কলাকুশলীদের পদচারণায় রঙিন হয়ে ওঠে শিল্পকলা 
একাডেমি প্রাঙ্গণ। যা হয়ে ওঠে দুদেশের সংস্কৃতি বিনিময়ের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।

গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন আসাদুজ্জামান নূর, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মামুনুর রশীদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী শাহ আলম সারোয়ার এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য ও সঞ্চালনা করেন উৎসব পর্ষদের সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান।

উৎসবের উদ্বোধনী সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয় থিয়েটার প্রযোজিত নাটক ‘পোহালে শর্বরী’। সুরেন্দ্র বর্মার মূল রচনা থেকে এটি অনুবাদ করেছেন অংশুমান ভৌমিক, নির্দেশনা দিয়েছেন রামেন্দু মজুমদার। একই সন্ধ্যায় পরীক্ষণ থিয়েটার মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় পুলিশ থিয়েটারের নাটক ‘অভিশপ্ত অগাস্ট’। রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদুর রহমান।
এছাড়াও অন্যান্য দিনের আয়োজনের মধ্য ছিল দলীয়ভাবে কবিতা ‘আমার পরিচয়’ আবৃত্তি করে বিন্দু শিশু সংগঠন। পথনাটক পরিবেশন করে বাংলা নাট্যদল। বহ্নিশিখার প্রযোজনা ‘কুঞ্জ সাজাও গো’ নৃত্যনাট্য, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর প্রযোজনা ‘ফকির আলমগীরের কণ্ঠের গান’। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে ঢাকা পদাতিকের প্রযোজনায় কাজী চপলের নির্দেশনায় সংগৃহীত কাহিনির নাটক ‘পাইচো চোরের কিচ্ছা’ মঞ্চায়িত হয়। ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে (বাংলাদেশ মহিলা সমিতি) খোরশেদুল আলমের নির্দেশনায় মমতাজউদ্দীন আহমদ রচিত নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ মঞ্চায়ন হয়। জাতীয় নাট্যশালায় নাসির উদ্দীন ইউসুফের নির্দেশনায় সেলিম আল দীনের রচিত ‘নিমজ্জন’ প্রযোজনা করে ঢাকা থিয়েটার। স্টুডিও থিয়েটার হলে অপেরার প্রযোজনা ‘হাত বাড়িয়ে দাও’ অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও প্রতিটি মঞ্চে নাচ, গান, আবৃত্তি ও নাটকের আয়োজন চলে আসছে। প্রায় প্রতিটিতে নানা বয়সের, শ্রেণি-পেশার দর্শম-শ্রোতার উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। উৎসবে সকল বয়সের সংস্কৃতিপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে দুটি চত্বর।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ৫টি মঞ্চসহ উন্মুক্ত মঞ্চে যথারীতি অনুষ্ঠান হয়। গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন, পরীক্ষণ থিয়েটার হল, স্টুডিও থিয়েটার হল ও সংগীত আবৃত্তি ও নৃত্য মিলনায়তন এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের উৎসবে ভারতের ৪টি দল, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ৪০টি নাট্যদলসহ মোট ৪৪টি মঞ্চ নাটক প্রদর্শনী এবং সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্য মিলনায়তনে ১৮টি সংগীত, আবৃত্তি ও নৃত্যদল ও উন্মুক্ত মঞ্চে ৯টি পথ নাটক, ১৫টি আবৃত্তি সংগঠন, ১২টি সংগীত সংগঠন, ৭টি নৃত্য সংগঠন, ১০টি শিশু দল এবং একক আবৃত্তি ও একক সংগীত পরিবেশনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, উৎসবে মঞ্চ নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি, সংগীত, পথ নাটক, যাত্রাপালায় ভারত ও বাংলাদেশের মোট ১১১টি দল অংশ নেয়। উন্মুক্ত মঞ্চের সাংস্কৃতিক পর্ব প্রতিদিন ৪.৩০ থেকে ৬.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং মঞ্চ নাটক প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয়।
গঙ্গা-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন গঙ্গ-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের সদস্য সচিব, নাট্যজন আকতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করবেন গঙ্গ-যমুনা সাংস্কৃতিক উৎসব পর্ষদের আহ্বায়ক, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পী ও কলাকুশলীদের পদচারণায় রঙিন হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। যা হয়ে ওঠে দুদেশের সংস্কৃতি বিনিময়ের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদ্রোহে জর্জরিত মিয়ানমার
পরবর্তী নিবন্ধআমনের শিষ এখন দুলছে
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য