ঝর্না রহমান
১.
লিটল ম্যাগাজিন ‘তৃতীয় পক্ষ’-এর সম্পাদক সালেহউদ্দীন আহমেদ চেয়ারে বসে অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন। এটাচড বাথরুম থেকে নাফিসা খন্দকারের বমি করার শব্দ ভেসে আসছে। এত জোরে ওয়াক ওয়াক করছেন, মনে হচ্ছে মহিলা বাথরুমের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবেন। নাফিসা খন্দকারের বয়স পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন। কাজেই এ বয়সের কোনো মহিলার বাথরুমে গিয়ে বমি করার শব্দের মধ্যে অন্য কোনো সম্ভাবনার ইঙ্গিত ভেসে আসবে না বলাই বাহুল্য। যদি নাফিসা খন্দকার মধ্য-বয়সের না হয়ে ইঙ্গিতময় বমি করার বয়সী হতেন, তা হলে বরঞ্চ সালেহউদ্দীন আহমেদ এখন তার বয়সোচিত ভারিক্কি ব্যক্তিত্ব আর বুদ্ধিজীবী চরিত্রের খোলস ভেঙে নাফিসার সাথে তার গ্রামতুতো দুলাভাই সম্পর্কটাকে একটু ঝালিয়ে তোলার সুযোগ কাজে লাগাতে পারতেন। এখন বাথরুম থেকে নাফিসা খন্দকারের মুখবিবরনিঃসৃত বিকট শব্দ শুনে যা মনে হতে পারে, সেটা সম্ভাবনার না হয়ে বরঞ্চ সমস্যারই হবে। অবশ্য সালেহউদ্দীন আহমেদ নাফিসা খন্দকারের এমন কোনো অসুখের কথাও জানেন না যার কারণে তার বমি হতে পারে। তিনি আসলে নাফিসার স্বাস্থ্যগত বিষয়ে তেমন কিছু জানেনও না। শুধু স্বাস্থ্য কেন, সৌজন্যমূলক পরিচিতি ছাড়া নাফিসার পরিবার বা ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কেও তেমন কিছু জানেন না, জানার কৌতূহল বা আগ্রহ কোনোটাই বোধ করেননি। নাফিসা খন্দকার তার সম্পাদিত তৃতীয় পক্ষ পত্রিকার সাথে আছেন। তাকে বলা যায় সম্পাদনা সহকারী কাম শিল্প-নির্দেশক। পত্রিকার কাজের সুবাদে নাফিসার সাথে তার বিভিন্ন সময়ে কথাবার্তা হয়, মাঝে মাঝে তৃতীয় পক্ষ পত্রিকার ব্যানারে সাহিত্যসভা বা কোনো বিশেষ বিষয় নিয়ে আলোচনা সভাও করা হয়। নাফিসা তখন সোৎসাহে উপস্থিত থাকেন। বছর তিনেক আগে বাংলা একাডেমির এজিএম-এ নাফিসা খন্দকারের সাথে পরিচয় হয়েছিল সালেহউদ্দীন আহমেদের। নাফিসা লেখালিখি করেন, পাশাপাশি একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এবং নিজেও একটি শিশুকিশোর পত্রিকার সম্পাদনা করেন। কথাবার্তার এক পর্যায়ে আবিষ্কৃত হলো, তারা দুজন একই এলাকার মানুষ এবং তার স্ত্রী নূরুননাহার লতায়পাতায় নাফিসার খালাতো বা তালাতো বোন হন। সালেহউদ্দীন দেখলেন, নাফিসা পত্রিকা সম্পাদনায় বেশ করিৎকর্মা। শুধু সম্পাদনাই নয়, সেই পত্রিকার কম্পোজ থেকে শুরু করে ইনার ডিজাইন, মেকআপ, গেটআপ, সেটআপ সবই নাফিসা করেন। এসব দেখে নাফিসার প্রতি তার আগ্রহ বাড়ে। নাফিসাকে ডেস্কে বসে কম্পিউটারের কী-বোর্ডে দ্রুত আঙুল চালাতে দেখে তার কাছে অবাক লাগে। নাফিসার ছবি আঁকা ডিজাইন করা সবই কম্পিউটারের পর্দায়! দ্রুত কাজ করেন। নাফিসার প্রযুক্তি-দক্ষতা সালেহউদ্দীনকে মুগ্ধ করে। নিজের পত্রিকার জন্য এমন একজন দক্ষ মানুষের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সালাহউদ্দীন আহমেদ সম্পাদক হলেও হাল-জমানার কম্পিউটার বিষয়ে পুরোপুরিই অজ্ঞ। এমনকি তিনি ই-মেইলও ব্যবহার করেন না। প্রয়োজন হলে ছেলে বা বউমাকে বলেন। নাফিসা বলেন, এখন তো সবই ডিজিটাল। কী-বোর্ড আর গ্রাফিক্স ডিজাইন উইন্ডোজ এসব লাগবেই। থ্রিডি ডিজাইন, এনিমেশন ড্রইংÑ এসব কাজের জন্য নানারকম সফটওয়্যার আছে! কাগজ কলম রংতুলির দিন শেষ! সালেহউদ্দীন আহমেদ হাসেন। এসব ব্যবহার তো দূরের কথা, শব্দের মানেই বুঝি না। নাফিসা বলেন, আমি শিখিয়ে দেব। একদম সোজা। হাতের পাতা ঝাঁকিয়ে তিনি বলেছেন, দূর! ঐ ডিজিটাল কাগজ-কলমে আমি লিখতে পারব না। সারাজীবন মাস্টারি করেছি হাতে-কলমে, মানে হাতে কলম নিয়ে কাগজে লিখেছি বা বোর্ডে লিখেছি। রিটায়ার্ড লাইফও পার হয়ে গেল প্রায় এক দশক। এই বয়সে এসে এসব বোতাম টিপে লেখা আমার দ্বারা হবে না! নাফিসার সাথে পরিচয়েও ততদিনে আত্মীয়তার প্রলেপ লেগেছে। নাফিসাই তাকে তুমি সম্বোধন করতে বলেছেন। একসময় নাফিসাকে আত্মীয়তার দাবিতে অনুরোধ করে তৃতীয় পক্ষ পত্রিকার সাথে যুক্ত করে নিয়েছেন।
খুব দরকার ছাড়া বাসা থেকে বের হন না সালেহউদ্দীন, হতে চাইলেও ছেলেরা বের হতে দেন না। বয়স্ক মানুষের জন্য বাইরের পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ। বিষাক্ত বিশ সালটার বেশিরভাগ দিন ঘরে বসেই কাটাতে হয়েছে। কিন্তু কাজকর্ম বাদ দিয়ে আর কত বসে থাকবেন। শুধু দেহে নয়, মনেও মরচে ধরে যাচ্ছে। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাঝেমধ্যে বের হচ্ছেন। তৃতীয় পক্ষ পত্রিকার বর্ষশুরুর বিশেষ সংখ্যাটা বের করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। নাফিসা খবর দিয়েছিলেন, নেট থেকে কিছু টেক্সট রিলেটেড ছবি নামিয়েছেন। সেগুলো থেকে কোনোটা ব্যবহার করা যাবে কি না, সালেহউদ্দীন আহমেদের একটু দেখে দেওয়া দরকার। যদি সমস্যা না থাকে তবে ঘণ্টাখানেকের জন্য একটু তার বাসায় আসতে পারলে ভালো হতো!
নাফিসার বাসায় লোকজন তেমন নেই। নাফিসা আর তার স্বামী আহসান খন্দকার। ভদ্রলোক প্রায় সালেহউদ্দীনেরই বয়সী। তাই সালেহউদ্দীন নাফিসার কথা শুনে একটু দোনোমোনো করছিলেন। বলেছেন, আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি তো বের হতে পারলে বাঁচি। কিন্তু তুমি এই করোনাকালে বাইরের মানুষ বাসায় ঢোকাবে! খন্দকার ভাই অ্যালাউ করবেন তো?
নাফিসা অভয় দিয়েছেন, কোনো সমস্যা নেই, আমাদের বাসায় তো মানুষই আমরা দুজন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হবে! স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা তো সবাই কাজ করছি!
২.
সালাহউদ্দীন আহমেদকে বেশ দূরে একটা চেয়ার দিয়ে নাফিসা হালকা রসিকতার ঢঙে হেসে বলেন, ওখানেই বসেন সালেহ ভাই। আজকে আপনি দূরের মানুষ!
হাতে স্যানিটাইজার নিয়ে সালেহউদ্দীন বলেন, আমি কাছের মানুষ ছিলাম কবে! আমি তো দূরেরই মানুষ! তৃতীয় পক্ষ!
টেবিলের ওপরে রাখা ল্যাপটপ অন করতে করতে নাফিসা হেসে ওঠেন! যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল! দূরের মানুষ থাকাই ভালো! এখন তো জীবনযাপনের স্লোগানই হচ্ছে, দূরে দূরে থাকি, মুখ ঢেকে রাখি!
নিজের মুখের মাস্কটা ভালো করে সেট করে বড় করে দম নেন নাফিসা।
-কিন্তু এই মাস্ক পরা একেবারে অসহ্য! দমই নিতে পারি না।
– উপায় নেই। হেলথ সিকিউরিটির জন্য মাস্ক তো পরতেই হবে! সালেহউদ্দীন মাস্টারি গলায় কথা বলেন।
– হ্যাঁ, তা হবে। আপনিও নিশ্চিন্তে থাকুন! আমাদের মাঝখানে ছয়ফিট নিরাপদ দূরত্ব আছে, মুখে মাস্ক আছে। হাতের কাছে তিন রকম স্যানিটাইজার আছে, পাম্প, ড্রপ, স্প্রে। কিচেনে চুলায় অষ্টমসল্লা চায়ের পানি ফুটছে। জাস্ট ছাকনিতে ঢেলে মগে লেবু মধু মিশিয়ে নিয়ে আসব। এখন চলেন, কাজে ঢুকি! ল্যাপটপটা টেনে দুজনের মাঝখানে এনে বসিয়ে দেন নাফিসা।
– দুজনের মাঝখানে এখন তৃতীয় পক্ষ আসবে, তাই না? সালেহউদ্দীন আহমেদের কথায় তরল সুর।
খিলখিল হাসিতে উছলে উঠেছেন নাফিসা খন্দকারও।
নাফিসা ল্যাপটপের স্ক্রিনে ত্রৈমাসিক তৃতীয় পক্ষ পত্রিকার মেকআপ ফাইল খুলে বসেন।
– একটু চা নিয়ে বসি কী বলেন?
– হুম, তোমার অষ্টভেষজের ঘ্রাণে তো বাসা মউ মউ করছে! ডবল মাস্কের ভেতর দিয়েও সে গন্ধ টের পাচ্ছি! তবে আমি কিন্তু চা-পানি কিছু খাব না। মুখ থেকে মাস্ক খোলার ব্যাপারে ছেলে আর ছেলের মায়ের কড়া নিষেধাজ্ঞা আছে। ওরা আমাকে বেরই হতে দিতে চায় না। কিন্তু কাঁহাতক ঘরে বসে থাকা যায় বল তো! বসে বসে শেকড় গজিয়ে যাচ্ছে! তুমি খেলে খাও, প্লিজ।
নাফিসা উঠে গিয়ে নিজের জন্য এক কাপ চা নিয়ে আসেন। চায়ের কাপে ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে কাপটা টেবিলে রাখতে রাখতে বলেন, সালেহ ভাই, আমি তো মাস্ক খুলে ফেললাম! চা তো আর মুখ ঢেকে খাওয়া যাবে না!
– অসুবিধা নেই। আমার মুখে ডবল মাস্ক আছে! কিন্তু, তোমার চায়ের ঘ্রাণে না শেষ পর্যন্ত আমার সাধনভজন সব জলাঞ্জলি দিতে হয়! সালেহউদ্দীন আহমেদের চোখে ঝিলিক। মাস্কের ধার ঘেঁষে চোখের নিচে চামড়ায় কুঞ্চন। হয়তো তিনি হেসেছেন!
– এই জন্যই তো আপনার সামনে বসলাম! যাতে আপনার লোভ লাগে!
– আমাকে তুমি প্রলুব্ধ করতে চাইছ? কথাট বলেই সালেহউদ্দীন অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে কানের দুপাশে মাস্কের ইলাস্টিক টেনে ঠিক করতে ব্যস্ত হন।
নাফিসা কাপটা নামিয়ে চট করে সালেহউদ্দীনকে এক ঝলক দেখেন। নিজের কথাটার ছোবলও টের পান। ভেষজ চায়ের কাপ থেকে সুরভিত ধোঁয়ার কু-লি পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠতে থাকে। নাফিসা ধোঁয়ার আড়ালে মুখ রেখে নিঃশব্দে চা শেষ করতে থাকেন। সালেহউদ্দীন মনোযোগ দিয়ে একটা প্রুফ দেখার জন্য মাস্কের ওপরে ভালো করে চশমা এঁটে স্ক্রিন স্ক্রল করেন।
বমির শব্দ থেমে গেছে। বাথরুম থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে বের হয়ে আসেন নাফিসা। মাথা মুখ ধুয়েছেন। টপ টপ করে পানি পড়ছে। বুক পেটের দিকের শাড়ি পুরোটাই ভিজে গেছে। দলা পাকিয়ে ভেজা শাড়ি চিপতে চিপতে বলেন, সালেহ ভাই, আপনি বসেন। আমি একটু চেঞ্জ করে আসি।
– কী হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?
নাফিসা তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুখের পানি মোছেন। খানিকক্ষণ তোয়ালেটা দিয়ে নাকমুখ চেপে ধরে রাখেন। রক্তাভ মুখ। উদ্বেগের চাপে ছলছল করছে চোখ। পাঁচ মিনিট আগেও তারা কাজের পাশাপাশি রীতিমতো আড্ডা দিচ্ছিলেন। বহুদিন পরে কাজের পরিবেশ ফিরে পেয়ে ভালো লাগছিল সালেহউদ্দীনের। লোকসংস্কৃতি বিষয়ক একটা লেখায় ভেলা-ভাসানোর ইলাস্ট্রেশন সিলেক্ট করতে গিয়ে সালেহউদ্দীন তার শৈশবের গ্রামজীবনের স্মৃতি বর্ণনা করছিলেন। দশ-এগারো বছর বয়সে ভেলা ভাসানি পূজায় পদ্মরাণী নামের এক বালিকাকে দেখে তার ভালো লেগেছিল। সেই বাল্যপ্রেমের গল্প শুনে তরুণীর মতোই খিলখিল করে হাসছিলেন মধ্যবয়সী নাফিসা। সেসব দৃশ্যের মধ্যে কোথাও নাফিসার অসুস্থতার লক্ষণ ছিল না। হঠাৎ করে নাফিসার কী হলো। একবার দরজায় কলিংবেল বেজে উঠেছিল। সালেহউদ্দীন ব্যস্ত গলায় বললেন, কেউ এসেছে বোধহয়। তবে নাফিসা উঠছিলেন না। কী-বোর্ডে আঙুল চালাতে চালাতে বললেন, যেতে হবে না। কিচেনে হালিমা আছে, ও দরজা খুলবে।
দ্বিতীয়বার বেল বেজে উঠতেই মনে হলো, নাফিসার স্বামী গায়ে রোদ লাগাতে একটু আগে ছাদে গেছেন। সাধারণত ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ মিনিট ছাদে রোদ পোহান আহসান। হয় তো কোনো কাজে আবার চলে এসেছেন! কিন্তু হালিমা দরজাটা খুলছে না কেন? বাথরুমে গেছে না-কি? প্রচ্ছদের ডিজাইনটাকে অ্যাকচুয়াল সাইজে এনে নাফিসা দেখাচ্ছিলেন, লোগোটাকে আর একটু ছোট করলে কেমন হয়?
হাতের কাজ ফেলে একটু বিরক্ত হয়েই নাফিসা উঠে গেলেন। একটু পরেই ফিরে এলেন দু-হাতে মুখ চেপে। এক ঝটকায় মাস্ক খুলে দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে হড়হড় করে বমি!
যাই হোক, আজ বোধহয় আর কাজ হবে না। নাফিসা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার বিশ্রাম নেয়া দরকার। এখন তাকে দিয়ে কাজ করানো অন্যায় হবে। সালেহউদ্দীন আহমেদ টেবিলে এলোমেলো ছড়িয়ে রাখা কাগজপত্র গুছিয়ে তোলেন।
পাঁচ মিনিট পরেই নাফিসা ফিরে আসেন। ভেজা শাড়ি পাল্টেছেন। মুখ এখনও খোলা। মুখে বোধহয় ক্রিম মেখেছেন। কারণ ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ল। নাফিসাকে এখন সতেজ দেখায়। তবে ক্রিমের জন্য হয়তো চোখমুখের ছলছলে ভাবটা আর একটু বেড়েছে। নাকের ডগা লালচে হয়ে আছে। চেয়ারে বসতে বসতে বলেন, কোথায় ছিলাম আমরা? আপনি কাগজপত্র গুছিয়ে ফেলেছেন যে? চলে যাবেন সালেহ ভাই? কাজ তো শেষ হয়নি!
সালেহউদ্দীন আহমেদ স্ক্রিনে তাকিয়ে বলেন, প্রচ্ছদটা নিয়ে কী যেন বলছিলে। তুমি বোধহয় অসুস্থ হয়ে পড়েছ। আমি ফোনে শুনে নেব। আজ না হয় থাক। আমি চলে যাই।
তিনি তার মুখের মাস্ক টেনেটুনে ঠিক করতে থাকেন। একটা সার্জিক্যাল মাস্কের ওপরে আর একটা এন নাইনটি ফাইভ। সালেহউদ্দীন আহমেদ যখন আসেন, নাফিসা তখন তাকে মাস্ক পরেই দরজা খুলে স্বাগত জানিয়েছে। নাফিসার স্বামী আহসান খন্দকারও মাস্ক পরেই সালেহ আহমেদের সাথে কথা বলেছেন। জীবনের প্যাটার্ন পাল্টে গেছে এখন। ঘর থেকে বের হতে গেলেই, এমনকি দরজা খুলে বাইরের কারও সাথে কথা বলতে হলেও সবাই এখন পর্দানশীন স্ত্রীলোকের মতো মুখে নেকাব এঁটে নিতে হয়। সৌজন্য আলাপসালাপ শেষ হলে নাফিসা আর সালেহউদ্দীন আহমেদ পত্রিকার কাজ নিয়ে বসেছেন। আর আহসান ট্যাব হাতে করে চলে গেছেন ছাদে। ছাদে রোদে বসে বসে ফেসবুক আর ইউটিউব ঘাঁটবেন, কমেডি নাটক আর জোঁকস শুনবেন। সত্তর ছুঁইছুঁই আহসান খন্দকারের ঘরে বসে দিন কাটানোর জন্য এছাড়া তেমন কিছু করারও নেই।
সালেহউদ্দীন আহমেদের কথায় নাফিসা ত্রস্তব্যস্ত হয়ে ওঠেন,
– আমি ঠিক আছি। কোনো অসুবিধা নেই।
– কিন্তু তুমি হাঁপাচ্ছো। অনেক বমি হলো মনে হয়। কী হয়েছে, খাওয়া-দাওয়ায় ঝামেলা হয়েছে? কে এসেছিল?
– না, খাওয়ার জন্য না। হঠাৎ করে গা গুলিয়ে উঠল। এখন ঠিক আছি। চলেন, কাজটা শেষ করি। দারোয়ান এসেছিল। একটা কুরিয়ার এসেছে…
নাফিসাকে কথা শেষ না করেই আবার বাথরুমের দিকে দৌড়াতে হলো। বেসিন ভাসিয়ে আবার বমি করেন নাফিসা। পেট থেকে এখন শুধু পিত্তরঙা পানি বের হচ্ছে। কিন্তু বমি থামাতে পারছেন না। নাকের মধ্যে ভয়ানক দুর্গন্ধটা লেগে আছে যেন। আবার সাবান লাগান মুখে। আবার মুখে মাথায় পানির ধারা। আবার ক্রিম।
সালেহউদ্দীন আহমেদ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি যাওয়ার জন্য তৈরি।
নাফিসা ক্লান্ত হেসে চেয়ারে বসতে বসতে বলে, সরি সালেহ ভাই, আমি বোধহয় আজ পারব না। সারাশরীর উল্টে বমি আসছে আমার!
– তা হলে তো তোমার ডাক্তার দেখানো দরকার! প্রয়োজনে হাসপাতালে যাওয়া লাগতে পারে। কী হয়েছে? কিডনি-টিডনির সমস্যা নাই তো?
– না, সেসব কিছু না। আমার দোষে এমন হয়েছে।
– তোমার দোষ? কী করেছ?
নাফিসার চোখ ছলছল করে। মুখ লাল। সালেহউদ্দীন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন। নাফিসা আঁচলের কোনা দিয়ে মুখ মোছেন। চোখ ডলে নিয়ে চশমার কাচ ভালোভাবে মুছে ফেলেন।
– কী দোষ করেছো? নাশতা খাওনি না? মেয়েরা তো তাই করে! তোমার আপাকে তো দেখি। ঠিকমতো খায় না। খালি পেটে নিশ্চয়ই গ্যাস হয়েছে। গ্যাস এখন স্টমাকের সবকিছু ঊর্ধ্বমুখী ঠেলে দিচ্ছে। নিজের দোষে এখন নিজেই শাস্তি পাচ্ছ! কী আর করবে! অন্যের দোষ হলে না হয় তাকে কষে ধমক দেয়া যেত। সালেহউদ্দীন আহমেদ হালকা গলায় বলেন।
– আমার দোষ না সালেহ ভাই! হঠাৎ তীব্র স্বরে তেতো গলায় কথা বলে ওঠেন নাফিসা।
– এই বললে দোষ তোমার! তা হলে কার?
নাফিসার ঠোঁট আবার তেতো হয়ে ওঠে। মনে হচ্ছে আবার বমি হবে। ঘ্যারঘ্যার গলায় বলেন, আমি ভুল করে ওর মাস্ক পরে ফেলেছিলাম।
– কার?
– আমার স্বামীর। ওর পলিপ আছে। মাস্কটা দুর্গন্ধে ঠাসা ছিল।
– ওহ! একজনের মাস্ক আর একজনের তো পরাই উচিত না! তার ওপর পলিপ! নাক বন্ধ হয়ে যায়, খুব ব্যাড স্মেল হয়। তুমি এ জন্য বমি করছো? আহ হা! সালেহউদ্দীন আহমেদের কণ্ঠে স্নেহের ছোঁয়া।
– কঠিন দুর্গন্ধ! আমার সারাশরীর বমি হয়ে বের হয়ে যেতে চাইছে। কিছু মনে করবেন না সালেহ ভাই! আপনি যান। নাফিসার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।
– আমি জানি! তোমার আপারও পলিপ আছে। ইথময়েডাল পলিপ। তোমাকে বলতে বাধা নেই, রাতে আমি ওর দিকে মুখ করে শুতে পারি না। দুজন দুদিকে মুখ করে শুই। এসব বেশি বয়সের সংকট। মেনে নিতে হয়। কিছু করার নেই!
– ও আমার মাস্ক পরে ছাদে চলে গেছে। নিজেরটা ফেলে গেছে ডাইনিং টেবিলের ওপর। আমারটা না পেয়ে ভেবেছি চায়ের কাপ আনতে গিয়ে টেবিলের ওপরে আমিই ভুলে রেখেছি! তৃতীয়বারের মতো মুখ চেপে বাথরুমে দৌড়ান নাফিসা।
৩.
আহসান বোকার মতো নিজের মুখ থেকে মাস্কটা খুলে চোখের ওপর দোলাতে থাকেন। বিড়বিড় করে বলেন, এটা আমার না? আমি তো মনে হয় আমার হুক থেকেই নিলাম! না তো তোমারই! লিপস্টিক লেগে আছে! ইশ ভুল করে ফেলেছি! এর পরে ডাইনিং টেবিল থেকে নিজের মাস্কটাকে একটা মরা বেড়াল ছানার মতো দু-আঙুলে চিমটি দিয়ে ধরে নাফিসাকে সান্ত¡না দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেন, এটাকে এক্ষুণি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসি! ছি ছি! কী কা-! আরও কদিন আগেই ফেলে দেওয়া দরকার ছিল!
আহসানের ভাবভঙ্গি দেখে নাফিসার হাসি পায়। কিন্তু এতক্ষণ রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিল। বমির ধকলটা কাটতেই চোয়াল শক্ত করে চুপ করে বসেছিলেন। আহসানকে এই ল্যাবেন্ডিশপনার জন্য একগাদা কড়া কথা শুনিয়ে মনের ঝাল মেটানোর জন্য মনে মনে তৈরি ছিলেন। কিন্তু সেসব কিছুই বলেননি। ছাদ থেকে আহসান নেমে এলে শুধু বলেছেন, তুমি নিজের মাস্ক টেবিলে ফেলে রেখে আমার মাস্ক পরে চলে গেছ? আমি আমারটা মনে করে পরে ফেলেছিলাম! এখন বমি করতে করতে মারা যাচ্ছি!
নাফিসা জানেন, আহসানের এই ভুল রোগের জন্য কিছু বলা যাবে না। ভুল ধরিয়ে দিলে বা কিছু বললেই ক্ষেপে যাবে। নিজের দোষ দেখতে পছন্দ করেন না। কিন্তু তিনি একই ভুল বারবার করেই যাবেন। দাঁত ব্রাশ করে পেস্টের মুখ লাগাতে ভুলে যান, বেসিনের কল খুলে চাবি বন্ধ করতে ভুলে যান, কমোড ফ্লাশ করতে ভুলে যান, চায়ে চিনি নিয়ে বৈয়মের মুখ আটকাতে ভুলে যান। বহুদিন আলমারির চাবি ঝুলিয়ে বাইরে চলে গিয়েছেন। ওয়ারড্রোবের ড্রয়ার খুলে কিছু বের করে ড্রয়ার লাগাতে মনে থাকে না, জামাকাপড় বের করে ওয়াল ক্যাবিনেটের পাল্লা খোলাই রেখে দেনÑ এ-রকম হাজারো ভুল। এমনকি স্টিলের আলমারিতে টাকা-পয়সা রাখার সিকিউরিটি ড্রয়ার খুলে রেখে আলমারিই লাগাতে ভুলে গেছেন বহুবার।
আগে আহসানের প্রতিটি ভুল ঠিকঠাক করে রাখতেন নাফিসা। বিরক্তিকর ভুলের জন্য অনুযোগ করলেও কখনও অভিযোগ করতেন না। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে আহসানের ভুলের মাত্রা আরও বাড়ছে। বয়স নাফিসারও বাড়ছে। তারও ধৈর্য কমে যাচ্ছে। ইদানীং আহসানের করা ভুলগুলো আর ঠিক করেন না। খোলা ড্রয়ার দেখলেও লাগাতে যান না, পেস্টের মুখ খোলাই পড়ে থাকে। বেসিনের স্লাইডে রেখে আসা চশমা দেখেও আনেন না। সব ঠিকঠাক পেলে ভুলের অভ্যাস ঠিক হবে না। অবশ্য অভ্যাস ঠিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, জানেন না। তবে কোনো কোনো ভুলের সাথে সমঝোতা করা যায় না। প্রায়ই আহসান ভুল করে নিজের চশমা রেখে নাফিসার চশমা চোখে দিয়ে বসে থাকেন। সকালে নাফিসার আগেই শয্যা ত্যাগ করে আহসান। দুজনের চশমার ফ্রেমের রং আলাদা, পাওয়ার আলাদা। থাকেও দু-জায়গায়। আহসানেরটা বেডসাইডে নাফিসারটা ওয়ারড্রোবের ওপরে। কিন্তু আহসান ভুল করে নাফিসার চশমা পরে ফেলেন। যখন ধরা পড়ে, বিব্রত মুখে বলেন, খেয়াল করিনি। শেপ একই রকম!
নাফিসা মহাবিরক্ত হন।
– রংও দেখতে পাও না, পাওয়ারও চোখে সমস্যা করে না? কী চোখ তোমার? লুজ করে ফেলেছে আমার চশমা!
এসব ক্ষেত্রে আবার আহসান নিক্তি দিয়ে নাফিসার কথার ওজন মাপেন, সেখানে কতখানি ক্ষোভ কতখানি উষ্মা আর কতখানি বিরক্তি আছে। ওজন একটু বেশি মনে হলেই চোখ লাল হয়ে ওঠে আহসানের। গলার স্বরে ঝাঁঝ ফুটে ওঠে- পাঁচ মিনিটেই তোমার চশমা লুজ হয়ে গেল? ইচ্ছা করে কি পরেছি? ভুল হয় না মানুষের?
রাতের খাওয়ার পরে সংসারের কাজকর্ম শেষ করে নিজের কাজ নিয়ে বসেন নাফিসা। শুতে শুতে তার বেশ রাত হয়। নাফিসা যখন শুতে যান তার অনেক আগেই আহসান শুয়ে পড়েন। নাফিসা প্রায় দিনই দেখেন আহসান ভুল করে নাফিসার বালিশে শুয়ে ঘুমাচ্ছেন। আহসান চুলে নারকেল তেল ব্যবহার করেন। তেলের কালচে ছাপ আর চিমসে গন্ধ লেগে থাকে আহসানের বালিশে। আহসানের ঘুম ভাঙিয়ে মাথার তলা থেকে নিজের বালিশটা নিতে মায়া হয়। তেলমাখা বালিশের ওপর শাড়ির আঁচল বিছিয়ে শুয়ে পড়েন। কিন্তু আঁচল ভেদ করে আসে আহসানের মেলানিন কমে যাওয়া ধূসর চুলের সাথে নারকেল তেলের মিশ্র গন্ধ। ঘুম আসতে চায় না।
একসময় আহসানের গন্ধ নাফিসাকে ভিন্নভাবে জাগিয়ে রাখত। কখনও আহসান অফিসের কাজে দু-চার দিনের জন্য বাইরে কোথাও গেলে তার মাথার বালিশটাকেই বুকে চেপে ঘুমিয়ে পড়তেন নাফিসা। বালিশের মধ্যে আহসানের গায়ের একটা নিজস্ব গন্ধ পেতো নাফিসা। রাতে আহসানের বুকের ভেতরে মুখ গুঁজে সেই গন্ধ টেনে নিতে নিতে জেগে উঠত শরীরের প্রতিটি কোষ। শয্যাজুড়ে খেলা করত কোমল উষ্ণ রক্ত আর ঘামের একটা তপ্ত তরুণ গন্ধ। দুজনে দুজনের গন্ধের আঘ্রাণ শেষ করে আরামে ঘুমিয়ে পড়তেন। সেই মুখোমুখি শয়ন, সেই ঘনিষ্ঠ শরীরী ঘ্রাণময় ঘুম কবে থেকে যেন একটু একটু করে কমে যেতে শুরু করেছে। তিনজন ছেলেপুলে মানুষ করে তাদের বিয়েশাদি দিয়ে যখন আহসান আর নাফিসা সংসারে একটু দম ফেলার ফুরসত পেলেন, তখন দেখা গেল রাতে আহসানের ঘুমোতে গিয়ে দমের কষ্ট হয়। নাফিসার অভ্যাস আহসানকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কু-লি পাকিয়ে ঘুমানো। কিন্তু আহসান তখন গায়ের ওপর সামান্য ভারও সহ্য করতে পারছেন না। আস্তে করে গায়ের ওপর থেকে সরিয়ে দেন নাফিসার হাত। একসময় একটা বালিশ জড়িয়ে ঘুমানোর অভ্যাস রপ্ত করে নেন নাফিসা।
আহসানের নিঃশ্বাসের কষ্ট প্রবল হয়ে উঠলে নাকে পলিপ ধরা পড়ে। দুই নাকই বন্ধ হয়ে থাকে তার। নিঃশ্বাস টানলে নাকের ভেতর থেকে বিশ্রী আওয়াজ বের হয়। সেই সাথে দুর্গন্ধ। রাতের বেলা সারাঘরে ছড়িয়ে পড়া নিঃশ্বাসের গন্ধ ভারি হয়ে থাকে। নাফিসা নাকেমুখে বালিশ চাপা দিয়ে খাটের এক পাশে শুয়ে পড়েন। ঘুম আসে না। কষ্টে আর ক্ষোভে জীবনকে ধিক্কার দিতে থাকেন নাফিসা। অসংখ্যবার ভাবেন অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমাবেন; কিন্তু তাতে আহসান কষ্ট পাবেন, বিব্রত হবেন। রাতে কয়েকবারই নিঃশ্বাসের কষ্টে ঘুম ভেঙে যায় আহসানের। উঠে বসে থাকেন। নাফিসা অন্য ঘরে শুলে আহসান তখন অসহায় বোধ করবেন। বয়সের সাথে সাথে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকারও বোধহয় পরিবর্তন হয়। তখন যেন দুজন দুজনের মা-বাবা হয়ে ওঠেন। প্রেম ফুরিয়ে যায়। জেগে ওঠে স্নেহমমতা। শরীরের ক্ষুধা মরে যায়। শরীর আর শরীর চায় না, চায় সেবা, যত্ন। যৌবনের রোমাঞ্চভরা দিনগুলো একসময় পাথুরে স্মৃতি হয়ে পড়ে। সেসব মনে পড়লেও তেমন কোনো আবেগ জাগে না। ধীরে ধীরে দুজনের মাঝখানে দূরত্ব বাড়ে। বিছানার দুপাশে দুজন। মাঝখানে তোষক উঁচু হয়ে ওঠে। নিজের শোয়ার জায়গাটায় একটা ঢালু ছাঁচ তৈরি হয়। সেখানে শরীরটা বেশ সেট হয়ে যায়।
আহসান ঘুমিয়ে পড়েছেন। নাকের ভেতর থেকে ঘ্রশঘ্রশ শব্দ ছড়িয়ে পড়েছে। শোয়ার আগে ঘরের ভেতর এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করেছেন নাফিসা। কিন্তু ঘরে কোনোরকম গন্ধই সহ্য করতে পারে না নাফিসা। সেটা সুগন্ধ হলেও না। জানালা দিয়ে গার্ডেন লাইটের হালকা আলো ঢুকেছে মশারির ভেতরে। আহসানের শায়িত দেহের মানচিত্রে একটা রহস্যময় কারচুপি তৈরি করেছে সেই আলো। নাকের শব্দের ফ্রিকোয়েন্সি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে নাফিসা আহসানকে মৃদু একটা ধাক্কা দেন। এতে ঘুম হালকা হয়ে যায়। তাতে নিঃশ্বাসের শব্দ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। ধাক্কা খেয়ে আহসান উঁ উঁ করে পাশ ফিরতেই দেখেন, আহসান একটা মাস্ক পরে ঘুমিয়েছেন। নাফিসা অবাক হয়ে বলেন, এই, মাস্ক পরে ঘুমিয়েছো কেন? আহসান টালুমালু চোখে তাকান। মাস্কটা টান মেরে খুলে ফেলেন।
– ও এই জন্য আমার দম আটকে আসছিল!
– হ্যাঁ, তা তো হবেই! মাস্ক পরে ঘুমাচ্ছ কেন?
– তোমার যাতে নাকের গন্ধ না লাগে। আজকে কষ্ট পেয়েছ! আমি সরি। আহসান শোয়া থেকে উঠে বসেছেন।
চোখে পানি চলে আসে নাফিসার। মাস্কটা তুলে নিয়ে মশারির বাইরে ছুড়ে ফেলেন। সকালে সালেহউদ্দীনের কাছে আহসানের ভুলের ব্যাপারটা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলার জন্য এমনিতেই সারাদিন মনের ভেতরটা খচখচ করছিল। এখন আহসানের দিকে তাকিয়ে বুক দুলে ওঠে নাফিসার।
– শোও তো! এমনিতেই দম নিতে পার না! আবার মুখোশ পরে নাকমুখ ঢেকে নিয়েছ!
– ঠিকই বলেছ, মুখোশ না থাকলেই ভালো। আরাম লাগে!
আহসান একটা আরামের নিঃশ্বাস ফেলেন। শুতে শুতে বলেন, আমি কিনারে চেপে শুচ্ছি। তুমি আরাম করে ঘুমাও।
নাফিসাও নিজের জায়গার ঢালু খাঁজের মধ্যে দেহটিকে স্থাপন করে একটা লম্বা দম টেনে নেন। খাটের মাঝখানের উঁচু হয়ে ওঠা তোশকটির ভাঁজ তারা কেউ অতিক্রম করেন না।
লেখক : কবি ও গল্পকার