কৃষিরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্ধকার পেরিয়ে আলোর ঝরনাধারায় এগিয়ে চলছে সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ। সেখানে সবার আগে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে কৃষি।
ড. রাজিয়া সুলতানা : বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিতে উন্নয়ন-অগ্রগতি-অনবদ্য অবদান অসামান্য। কৃষিবান্ধব নীতি ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ফলে কৃষিজ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিশ্চিত হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা। মানুষ এখন আর অনাহারে নেই। কৃষক এখন সমৃদ্ধ স্মার্ট কৃষক। কৃষিতে স্বনির্ভর বাংলাদেশ।
অন্যদিকে বিএনপি শাসনামলে কৃষি খাতে ছিল চরম অব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন খাতে ছিল লাগাতার অধোগতি। সেখানে কৃষির উন্নয়নে আওয়ামী সরকার বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতি প্রভৃতি ক্রয়ে দিচ্ছে ভর্তুকি আর প্রণোদনা। সেখানে খালেদা-তারেক আমলে সারের অভাবে কৃষকরা চাষ করতে পারেনি। এমনকি সারের জন্য ১৮ জন কৃষককে প্রাণ পর্যন্ত দিতে হয়েছে সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর অগণতান্ত্রিক পন্থায় পোশাকি জিয়াউর রহমান তথাকথিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। যে-পথে মসনদে বসেছিলেন জিয়াউর রহমান, ঠিক সে-পথেই ১৯৮১ সালে তাকে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যুর পর স্বৈরাচারের ব্যারাকে জন্ম নেওয়া বিএনপির কূটবুদ্ধির নেতারা নিরেট ঘরনী বেগম খালেদা জিয়াকে সাইনবোর্ড বানিয়ে ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। গণ-আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে নির্বাচনে ‘বিশেষ কারসাজিতে’ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি নির্বাচিত হয়। রাজনীতি কী- তা না বুঝতেই প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য সেই খালেদা জিয়াই পূর্ণ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করেছেন দুবার। তবে কোনোবার দক্ষতার সাথে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেননি। কারণ তিনি ছিলেন রাজনীতিতে একেবারে অনভিজ্ঞ; সে-সঙ্গে শিক্ষা-দীক্ষায়ও ছিল বেজায় ঘাটতি। ফলে ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত সূক্ষ্ম কারচুপির নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমানই হয়ে ওঠেন সরকার এবং দলের সর্বেসর্বা। হাওয়া ভবনে একক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারেক দুর্নীতি, অপকর্ম, জাল-জালিয়াতি, লুণ্ঠন, লুটতরাজে হয়ে ওঠেন বিএনপি ও সরকারের শীর্ষাসনের অধিকর্তা।
পূর্ণ মেয়াদে বিএনপির শাসনামল ছিল ১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত। সে-সময়কালে বিএনপি সরকার দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই করতে পারেনি। বিশেষ করে কৃষির ধারাবাহিক অধোপতনের কথা তো বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের মতো কৃষি প্রধান দেশে, কৃষিই জাতির মেরুদণ্ড। কৃষি খাতকে অবমূল্যায়ন করে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ১৯৯১-১৯৯৫ বিএনপির শাসনামলে দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল ৪০ লাখ টন। হয়নি কৃষি এবং কৃষকের উন্নতি। কৃষি ও কৃষকের উন্নতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত দেশের উন্নতি। সুতরাং হয়নি দেশেরও উন্নতি। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদলে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। কৃষকবান্ধব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা হন প্রধানমন্ত্রী। এ-সময়কালে কৃষকরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনা, কর্মপরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাদ্য ঘাটতির দেশ পরিণত হয় খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে। তথ্যমতে, ২০০১ সালে দেশে খাদ্য উদ্বৃত্ত ছিল ৪০ লাখ টন। ইতোমধ্যে ২০০০ সালে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে সেরেস (ঈঊজঊঝ) মেডেল প্রদান করে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনাকে ‘মাদার তেরেসা’ পদক প্রদান করে সর্বভারতীয় শান্তি সংঘ। দেশের অগ্রগতি হচ্ছিল দুর্বার গতিতে। কিন্তু বিধিবাম। সূক্ষ্ম কারসাজির মাধ্যমে ২০০১ সালে বিএনপি-জামাতের সাথে জোট সরকার গঠন করে। বিস্ময়করভাবে খাদ্যে উদ্বৃত্ত বাংলাদেশ আবার পরিণত হয় খাদ্য ঘাটতির দেশে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএনপি-জামাত সরকার আমলে কৃষকদের সঠিক সময়ে বীজ, সার, সেচ সুবিধা, কীটনাশক, জীবাণুনাশক ইত্যাদি প্রদান করা হয়নি। পায়নি ঠিকঠাক ঋণ, প্রণোদনা। সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায়ে নির্দেশনা, প্রযুক্তিগত সুবিধা ইত্যাদি পৌঁছায়নি। ফলে দেশে কৃষি খাতে উৎপাদন ক্রমাগত তলানিতে নেমে আসে। দেশে হানা দেয় মঙ্গা আর দুর্ভিক্ষ। মঙ্গায় উত্তরাঞ্চলের প্রায় দেড় কোটি প্রান্তিক জনগণ অমানবিক দুরাবস্তার শিকার হন। উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশের অন্যান্য প্রান্তেও দুর্ভিক্ষের শিকার আরও প্রায় ১ কোটি মানুষ। মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলের জন্য সরকারের মঙ্গা প্রকল্পের বরাদ্দ হতেও নিলর্জ্জভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ও ৭০০ টন চাল লুট করে নিয়ে যায় ঠাকুরগাঁওয়ের বিএনপি নেতারা।
কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। সরকার যদি দেশের উন্নয়ন চায়; তবে সবার আগে দৃষ্টি দিতে হবে- দেশের কৃষক তথা কৃষির উন্নতির দিকে। কিন্তু বিএনপি আমলের সরকার এই খাতে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বিএনপির নেতাদের সৃষ্ট বিদ্যুৎ-জ¦ালানি সংকটের কারণে সেচের অভাবে ভরা মৌসুমেও ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে থাকত। ফসলের মাঠের কচি সবুজাভ চারা যখন রোদে, মৃদুমন্দ বাতাসে হেসে লুটোপুটি খাওয়ার কথা; সেখানে প্রয়োজনীয় সারের অভাবে জীবনীশক্তি হারিয়ে মনে হতো বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিএনপি আমলে সরকারের সারের উৎপাদন ক্ষমতা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও যে পরিমাণ সার উৎপাদিত হতো; তা চলে যেত বিএনপি সিন্ডিকেটের হাতে। এখানে উল্লেখযোগ্য, সরকারি ফেঞ্চুগজ্ঞ সার কারখানা হতে লাখ লাখ বস্তা সার লুট করে নিয়েছে বিএনপি নেতারা। এমনকি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে ছাত্রদলের এক নেতা নিহত হন। বিএনপি আমলে সার ব্যবস্থাপনায় ছিল আসল গলদ। বিএনপি ক্যাডারদের কারসাজিতে সার চলে যেত কালোবাজারিদের হাতে। এমনকি বিএনপি নেতারা নকল সার তৈরি করে তা কৃষকের কাছে বিক্রি করত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নকল সার কারখানা এবং আসল সার পাচারকারী ধরা পড়লেও বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হতো না। এমনকি সরকারি ভর্তুকির সারও সাধারণ কৃষককে বাধ্য করা হতো দ্বিগুণ দামে ক্রয় করতে। অধিক দামে সার কেনার ক্ষমতা আমাদের দেশের বেশির ভাগ কৃষকের ছিল না। ফলে যাদের টাকা আছে কেবল তারাই সার পেত। আর যাদের টাকা নেই; তারা দাদন ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা নিয়ে সার কিনে ফসল ফলাত। আর সেই ফসল ঘরে তোলার আগেই বিক্রি করে চড়া সুদের টাকা শোধ দিতে হতো। উৎপাদন ঠিকঠাক না হলে অনেক কৃষকের ঘরবাড়ি বিক্রি করেও দাদনখোরদের দায়দেনা পরিশোধ করতে হতো। তাছাড়া কৃষকদের জন্য ছিল না প্রচুর ঋণের ব্যবস্থা, ছিল না প্রয়োজনীয় প্রণোদনাও। যাইবা ছিল; তা নানামুখী দুর্নীতির কারণে কৃষকরা পেত না ছিঁটেফোঁটাও। ওএমএস-এর চাল-ডাল পর্যন্ত লুটে নিত বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসব কারণে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির ভয়াবহতার কারণে পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
বিএনপি আমলের ফসল উৎপাদন কম হওয়ায় আরও একটি কারণ ছিল, তা হলো কৃষকরা সঠিক মাত্রার সারের ব্যবহার জানত না। কারণ ছিল না তেমন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়াও তখন প্রান্তিক চাষিদের দোরগোড়ায় পৌঁছায়নি। ফলে তারা অনেক সময় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বা কম পরিমাণে সার ব্যবহার করত। সে-সময়কালে কৃষকদের ফসল উৎপাদনের আরও একটি বড় বাধা ছিল বিদ্যুতের ঘাটতি। বিদ্যুতের অভাবে কৃষকরা সময়মতো সেচ দিতে পারত না। ১৯৯৬ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় তখন বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল ১৬০০ মেগাওয়াট; সেখানে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪৩০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে পারেনি; বরং কমিয়েছে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩৭৮২ মেগাওয়াট। বিএনপি নেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে সেচের জন্য ডিজেল-কেরোসিন দিয়েও পাম্প চালানোর বিকল্প উপায় ছিল না সে-সময়। সার ও সেচের অভাবে বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য বিশেষ করে ধান উৎপাদনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বৃহত্তর উত্তরাঞ্চলসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ফসল উৎপাদন তখন অর্ধেকে নেমে আসে। দেশজুড়ে শুরু হয় খাদ্য সংকট। প্রতিটি জেলায় আপদকালীন খাদ্যগুদামও শূন্য হয়ে পড়ে। দেশ-জাতি রক্ষায় নিবেদিত বিভিন্ন বাহিনীর রেশনের চাল সংগ্রহ করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে সরকারকে। ঢাকার গুদামে যেখানে ৩০ হাজার টন খাদ্য মজুদ থাকার কথা সেটিও শূন্য হয়ে গিয়েছিল। আপদকালীন খাদ্য মজুদ শেষ হলে চাল আমদানির নামে শতকোটি টাকা লুটপাটের নীল নকশা করে হাওয়া ভবন সিন্ডিকেট। বাজার দরের চেয়ে অতিরিক্ত দামে তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাল কেনে। ফলে সারাদেশে ক্রমাগত বাড়তে থাকে অভাব-অনটন। কৃষকসহ দেশের সাধারণ মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। লুটেরা-দুর্নীতিবাজ খালেদা-তারেকের জুলুম-অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ বাঁচার তাগিদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোট সরকার পতনের আন্দোলনে রাজপথে নামে।
কৃষি খাতের সবচেয়ে কালো অধ্যায় বিএনপি আমলের ১৯৯৫ সালের মার্চ মাস। চলছে বোরো আবাদের ভরা মৌসুম। অথচ বিদ্যুতের অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছে না কৃষক। ডিজেল-কেরোসিনে আগুনের ঝাঁজ। কীটনাশকের দামও আকাশচুম্বি। সারের দামও চড়া। কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে সার কিনতেও পারছিল না। বিএনপি সরকারের বেঁধে দেওয়া ১৮৬ টাকা বস্তা দরের সার; কালোবাজারে ১৫০০-১৬০০ টাকায় বিক্রি করছিল বিএনপি-জামাত সিন্ডিকেট। নিরুপায় কৃষকরা নেমে আসে রাজপথে। শুরু হয় বিক্ষোভ। সেই আন্দোলন ঠেকাতে বিএনপি বেছে নিয়েছিল দমন-নিপীড়নের রাজনীতি। খালেদা-তারেকের নির্দেশে ১৫ মার্চ আন্দোলনরত কৃষকের ওপর চালানো হয় নির্বিচারে গুলি। এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের নিন্দার ঝড় ওঠে সারাবিশ্বে। কৃষকদের আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় কমপক্ষে ১৮ জন কৃষককে হত্যা করা হয়। এরপর হতে প্রতি বছর ১৫ মার্চ ‘কৃষক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ-হত্যাকাণ্ডের পরও বাংলার কৃষকরা থেমে যায়নি। সারের অভাবে চাষ করতে না পেরে তারা সাতক্ষীরা, নড়াইল, মেহেরপুর, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহীর কৃষকরা কফিন ও কাফনের কাপড় নিয়ে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেছিল। তখনও বিএনপি-সরকার তার দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে সাধারণ কৃষকের ওপর অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল।
বিএনপি আমলে লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজ শহর হতে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। অন্ধকার নেমে আসে প্রায় সারাদেশে। মোমবাতি-হারিকেন জ্বালিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে হয়। কোথাও ১২ ঘণ্টা; কোথাও ২৪ ঘণ্টা আবার কোথাওবা এক-দুই ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ আসে। ফলে কৃষক-জনতা এক হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ২০০৬ সালের ৫ মার্চ খুলনার রূপসায় বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত জনতা জোট সন্ত্রাসীদের হামলায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ ও সার সংকটের প্রতিবাদে যশোর-মাগুরা ও যশোর-খুলনা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করে বোরো চাষিরা। নওগাঁয় বিদ্যুতের জন্য ৫ হাজারেরও বেশি কৃষক ঘেরাও করে বিদ্যুৎ অফিস। ২০০৪ সালের ২৩ মার্চ যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবিরাম লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষক এবং পোল্ট্রি খামারিদের মধ্যে নাভিশ্বাস ওঠে। পোল্ট্রি ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠে; গরমে খামারের বাচ্চা-বাচ্চা মুরগিগুলো মারা যেতে থাকে। লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজে তৃণমূলের শতশত সেচপাম্প বিকল হয়ে যায়। ২০০৬ সালে বিদ্যুতের দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কানসাটে আন্দোলনরত জনতার ওপর খালেদা-তারেকের লেলিয়ে দেওয়া পেটোয়া বাহিনীর অকস্মাৎ গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হন সাতজন সাধারণ মানুষ। জোট সরকারের শেষদিকে বিদ্যুৎ না পেয়ে কানসাট এলাকার পল্লি বিদ্যুতের গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। পাঁচ মাসব্যাপী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান ১৭ জন। আহত হয় অন্তত ৬০০ মানুষ। এ ঘটনায় সারাদেশ ফুঁসে ওঠে। নিশ্চিত হয়ে যায় বিএনপি-জামাত সরকারের পতন।
সরকারি জরিপ অনুযায়ী, ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় ছিল। আজ ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। বিএনপি আমলে মোট ফসল উৎপাদন ছিল মাত্র ২ কোটি ৬১ লাখ টন। তথ্যানুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২২ সালে মোট ফসল উৎপাদন হয়েছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৮০০ টন।
কৃষিরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অন্ধকার পেরিয়ে আলোর ঝরনাধারায় এগিয়ে চলছে সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ। সেখানে সবার আগে দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে কৃষি। কৃষকদের জীবনযাত্রার মানেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। শিক্ষিত যুবকরাও কৃষিকে স্মার্ট পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। কৃষি খাত হয়ে উঠছে দেশ-জাতির প্রধানতম আশ্রয়স্থল।