রাজিয়া সুলতানা: সারাবিশ্বে যখন করোনা নিয়ে আকাশসম দুঃচিন্তা; তখন বাংলাদেশে করোনার ছিটেফোঁটাও ছিল না। কিন্তু বহির্যোগাযোগ চালু থাকায় এদেশে করোনা আবির্ভাব ৮ মার্চ। সারাবিশ্ব তখন আরও অন্ধকারে এই মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ে। ঠিক সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদৃষ্টি নিয়ে ২০২০ সালের ২৬ মার্চ জনগণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে বলেনÑ ‘আবাদযোগ্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না।’ তার এই আহ্বানে মন্ত্রমুগ্ধের মতো মন্ত্রণালয় হতে শুরু করে প্রান্তিক কৃষকেরা ঘর হতে বের হয়ে এলো। লেগে গেল সর্বোচ্চ উৎপাদন করার অভিপ্রায় নিয়ে কৃষি কাজে। কৃষির প্রতিটি সেক্টরে অভাবনীয় সাফল্য আলোকিত করল বাংলাদেশকে। তার সেই আহ্বানে রণিত হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষি খাত। করোনাকালেও নতুন এই কৃষি বিপ্লবের প্রাণোজ্জীবিত ঘোষণায় বাংলাদেশ আজ দানা জাতীয় খাদ্য, পোল্ট্রি খাত, মৎস্য খাত, গরু ও ছাগল উৎপাদনসহ কৃষির প্রায় প্রতি সেক্টরেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। করোনাকালেও পূরণ হয়েছে খাদ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা; সঙ্গে পূরণ হয়েছে পুষ্টি চাহিদাও, যা থেকে প্রায় সব মানুষ পেয়েছে দেহের সমধিক প্রয়োজনীয় আমিষ। এই আমিষ মানবদেহে বাড়াচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যে ক্ষমতার কাছে করোনার মতো ভয়াবহ জীবাণুও হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর আপেক্ষিক চিত্র তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। করোনার ফলে পৃথিবীর অনেক দেশেই কৃষি মুখথুবড়ে পড়েছে। আর সেখানে বাংলাদেশের উৎপাদন পরিমাণ বিবেচনায় বিশ্বে কৃষি অর্থনীতিতে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই তৃণমূলের কৃষিই হলো এদেশের মূল চালিকাশক্তি। সেই কৃষি খাত বেঁচে থাকার প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুষ্টি খাতে কৃষকদের অবদান বিশেষ প্রয়োজনীয় আমিষ জোগান দেওয়া বাংলাদেশের মানুষের প্রধানতম প্রাণশক্তি।
চিকিৎসা শাস্ত্রের পরিভাষায় আমিষ মানব দেহে কোষের গাঠনিক উপাদান। আর কোষ হচ্ছে জীবের মুখ্য উপাদান। সাধারণভাবে আমিষ ২০টি এমিনো এসিডের সমন্বয়ে গঠিত। আমিষ প্রধানত দুই প্রকারÑ প্রাণীজ আমিষ ও উদ্ভিজ্জ আমিষ। প্রাণীজ আমিষের প্রধান উৎসÑ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ। উদ্ভিজ্জ আমিষের প্রধান উৎসÑ ধান, গম, ভুট্টা, ডাল, সয়াবিন, বাদাম জাতীয় দানাদার শস্য। দানাশস্যে আমিষের পরিমাণ থাকে কম-বেশি ৬-১২ শতাংশ, তবে ডাল জাতীয় খাদ্যে ২০-২৫ শতাংশ, মাছে ১৮-২৫ শতাংশ, মাংস ১৬-২৫ শতাংশ, ডিম ১০-১৪ শতাংশ ও দুধে ৩-৪ শতাংশ। গুণগতমান বিচারে উদ্ভিজ্জ আমিষের চেয়ে প্রাণীজ আমিষ দেহের জন্য ভালো। কারণ প্রাণীজ আমিষে থাকে মানবদেহের প্রয়োজনীয় সকল অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড। গড়ে বাংলাদেশের একজন মানুষ প্রতিদিন প্রায় ৫০ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করে থাকেন। যা অনুমোদিত মাত্রার কাছাকাছি। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে আমিষ। এই যে অর্জন এটা আমাদের কৃষক ভাইদের অর্জন, সরকারের অর্জন, নীতি-নির্ধারকদের অর্জন। দূরদর্শী সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের অর্জন। মৎস্য ও প্রাণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় করোনাকালেও প্রাণিজ পণ্যের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। ফলে সারাদেশে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ হয়েছে।
যেসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে তার মধ্যে অন্যতম আমিষ। আমিষ জাতীয় খাবারগুলো মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তো বাড়িয়ে তোলে, সে-সঙ্গে আরও নানাভাবে শরীরকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। আমিষ শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বাড়ায়। রোগের বিরুদ্ধে শরীরে শক্তি জোগায়। শরীরের কোষগুলোকে সচল রাখে। দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। করোনা থেকে বাঁচতে মানব দেহে আমিষের বিকল্প নেই। এই মৌসুমে শরীর সুস্থ রাখতে উন্নতমানের আমিষযুক্ত খাবার খেতে হবে। এসব কারণে আমিষ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। পাশাপাশি আমাদের দেহের অস্থি, পেশি, বিভিন্ন দেহযন্ত্র, রক্ত কণিকা থেকে শুরু করে দাঁত, চুল, নখ পর্যন্ত আমিষ দিয়ে গঠিত। আমাদের দেহের কোষগুলো প্রতিনিয়তই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই ক্ষয়প্রাপ্ত স্থানে নতুন কোষগুলো গঠনে এবং কোনো ক্ষতস্থান সারাতে আমিষের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। যদি কখনও মানবদেহে চর্বি ও শর্করার অভাব দেখা দেয়; তখন আমিষ তাপশক্তি উৎপাদনের কাজ করে। রোগ সৃষ্টিকারী রোগজীবাণুকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের দেহে তাদের প্রতিরোধী পদার্থ বা অ্যান্টিবডি (ইমিউনিটি) তৈরি করে। করোনাকালে তাই করোনার মতো একটি অকোষীয় বিশেষ শ্রেণির ভাইরাস অজানা এই জীবননাশক জীবাণুর প্রতিরোধে অবশ্যই আমিষ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
কারোনাভাইরাসের যাত্রা শুরু চীনের উহান শহরে; ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। বাংলাদেশে এসেছে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। দেখতে দেখতে বছর ছাড়িয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চারদিকে ভয়ভীতি, মৃত্যুর আতঙ্ক জেঁকে বসেছে। করোনা নির্মম থাবার মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হচ্ছে প্রতিদিন। বাদ যাচ্ছে না বাংলাদেশেও। মানুষ দিশেহারা। এটা সত্যি করোনাভাইরাসের আক্রমণের পরেও মানুষ বেঁচে যায়। কারণ করোনার মৃত্যুহার ১-২ শতাংশ। একদিকে ঘরবন্দি জীবনে থেকে করোনা থেকে নিজকে নিরাপদ। আবার অন্যদিকে জীবন বাঁচিয়ে রাখতে জীবিকা নির্বাহে বাইরে যাওয়া। দুই সমীকরণের মুখে জীবন হয়ে উঠছে বিপর্যস্ত। বাঁচতে হলে খাবারের দরকার। আবার তা জোগাতে বের হওয়া দরকার। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, রাজনীতি-অর্থনীতি সবখানে করোনা নামক বিষফোঁড়া। বাংলাদেশই নয়, সারাবিশ্বের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। বিশ্ব কৃষিনীতিকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিপুল ফলনে রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশ করোনাকালেও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে অন্যতম সেরা উৎপাদক একটি দেশ।
করোনার ক্রান্তিকালেই বাংলাদেশ স্পর্শ করেছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। একই সময়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীও উদযাপিত হয়েছে। সব মিলিয়ে বিপুল উৎসবমুখর একটি পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারত। বাঙালি ঘরে ঘরে আনন্দ-উদযাপনের আলোকদ্যুতি প্রজ্বলিত হতো। কিন্তু অতিমারি করোনার ছোবলে তা সীমায়িতভাবে চলছে। তবে সরকার সবকিছুর ঊর্ধ্বে রেখেছে দেশের অর্থনীতির চাকা। তা সচল রাখতে দেশে উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর নজর দিয়েছে; ফলে বিস্ময়করভাবে দেশে বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি সরকার মানুষের পুষ্টি-চাহিদা পূরণে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রাণীজ আমিষের প্রধান উৎস মাছ, মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদনে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধ উৎপাদনে এসেছে নজিরবিহীন সাফল্য।
আমিষ হিসেবে মাছের বিকল্প অনেক কিছুই আছে। তবে বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ আমিষের একটি বিশেষ অংশের চাহিদা পূরণ করে মাছ থেকে। আর মাছ সাশ্রয়ীও। দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও রপ্তানি আয়ে মৎস্য খাতের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে মৎস্য খাতের অবদান ৩.৫০ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপিতে ২৫.৭২ শতাংশ। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে মাছ থেকে। দেশের প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি, অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। দেশের মানুষ গড়ে জনপ্রতি প্রতিদিন ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২.৫৮ গ্রাম মাছ বর্তমানে গ্রহণ করছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মৎস্য উৎপাদন বাংলাদেশ ছাপিয়ে চলে গেছে বহির্বিশ্বে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, ২০২০ সালে মিঠাপানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়, অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় এবং বদ্ধ-জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। তাছাড়া ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ। দেশ এখন মাছে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই না, মাছ থাকছে উদ্বৃত্তও। যা থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে মাছ রপ্তানি করতে পারছে। এ অর্জন জাতির জন্য গৌরবময় অহংকারের।
কৃষি উৎপাদন সাফল্যের পিছনের কথা সূচনা ১৯৭৩ সালে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। তখন থেকেই শুরু হয় মৎস্য চাষের বিপ্লব। বঙ্গবন্ধু এক ভাষণে বলেছেন, ‘মাছ হবে এ দেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ।’ জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মৎস্যবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ-নেতৃত্বে বিভিন্ন কর্মমুখী কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন আজ সফল হয়েছে। করোনাকালেও প্রধানমন্ত্রী প্রান্তিক দুঃখী চাষিদের ওপর রেখেছেন সজাগ দৃষ্টি। দিয়েছেন বাড়তি প্রণোদনা, যা বাজেট থেকেও বাদ পড়েনি। প্রায় ৫ লাখ মৎস্যজীবী পরিবারকে (বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলবর্তী জেলাসমূহে) আনা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায়। প্রকৃত মৎস্যজীবীদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তর ১৬ লাখ ২০ হাজার জেলেদের তালিকা নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলের মাঝে বিতরণ করেছেন পরিচয়পত্র। ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়ে ভিজিএফ সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে জেলে পরিবারগুলোকে। তাছাড়া মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রায় ৫০টি দেশে চিংড়ি ও মৎস্য পণ্য রপ্তানি করছেন। বৈশ্বিক আর্থিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রায় ৭১ হাজার টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে দেশে ৩,৯৮৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
করোনাকালীন সময়ে পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের অবদানও কম নয়। যদিও ডেইরি পণ্য বা মাংসের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় সীমানার খানিক বাইরে। কিন্তু পোল্ট্রি পণ্য মানুষের অনেকটা হাতের নাগালে। দেশ আজ পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ। করোনাকালীন সময়ে গত বছর পালিত হয়েছে ঈদুল আজহা। সামাজিক দূরত্ব মেনেই ভোক্তাদের কেনাবেচা করতে হয়েছে, যা সম্ভব হয়েছে সরকারের ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে। ওই সেবা পৌঁছে দিয়েছে তৃণমূলের চাষি ও ভোক্তাদের দোরগোড়ায়। তাই তো যারা হাটে যেতে পারেননি; তারা ঘরে বসেই অনলাইনে গরু-ছাগল কেনাবেচা করেছেন। এই প্রযুক্তির কল্যাণে লোকসানে পড়তে হয়নি চাষিদের। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্থানীয় খামারিদের হাঁস-মুরগি, ডিম ও দুধ কেনার জন্য স্থানীয় জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ পোল্ট্রি পণ্য বিক্রয়ের জন্য ভ্রাম্যমাণ বাজার কর্মসূচি চালু করেছেন। করোনা মহামারিতে দুধ খামারিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নির্দেশনা ছিলÑ ‘দুধ বিক্রি করতে না পারলে; তা দিয়ে প্রয়োজনে পনির এবং ঘি বানিয়ে ফেলতে হবে।’ তার এই উপদেশ উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
প্রাণীজ আমিষের পর উদ্ভিজ্জ আমিষের মূল উৎস ধান। বিশ্বে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ তৃতীয়। অতিমারি করোনাকালীন সময়েই বাংলাদেশকে পড়তে হয়েছে আম্পান, আগাম বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তারপরও বাংলাদেশে আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এটা দৃঢ় পদক্ষেপেরই ফল। পিছনে ফিরলে দেখতে পাই, দেশে করোনার প্রথম ঢেউয়ে ছিল মাঠে বোরো ধান। সৃষ্টি হয়েছিল শ্রমিক সংকট; অন্যদিকে উজান থেকে আসা আগাম বন্যার ভয়। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি, সহজে দমে যাওয়ার নয়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করে উত্তরাঞ্চল হতে শ্রমিকরা বিভিন্ন স্থানে এসে যোগ দিলেন। আর তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কৃষক লীগ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলীয় রাজনৈতিক কর্মীরা হাওড়ের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছেন কৃষকের। শুধু ধান কাটা নয়; কৃষকরা যাতে তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পান, সরকার সে-ব্যাপারেও তৎপর ছিল। সরাসরি সরকার ধার্যকৃত মূল্যে কৃষক হতে চাল ক্রয় করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা দৃষ্টান্ত। চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। চলছে মাঠের বোরো ধান কাটার মৌসুম। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক এমপির আশাবাদ বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে। গতবার সরকার কৃষক থেকে মোটা চাল কিনেছিলেন ৩৬ টাকা দরে। সরকার এ মৌসুমে তা কেনার প্রস্তাব দিয়েছে ৪০ টাকা। এ ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কৃষকদের কাজ করার প্রাণশক্তির মূলে রয়েছে সরকারের সঠিক কর্ম-পরিকল্পনা। কৃষকদের জন্য সহজশর্তে ঋণ দেওয়া প্রণোদনা চলছে আগে থেকেই। থাকছে সামনেও। সারের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সরকার শতভাগ আন্তরিক ভূমিকা পালন করেছে। সুলভে দেওয়া হয়েছে বীজ। বিশেষ করে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে দেওয়া হয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি। সেচ-ব্যবস্থাও ঠিকঠাক রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সজাগ ছিল। সব মিলিয়ে করোনাকালে কৃষি কাজের জন্য যখন যা প্রয়োজন তা হাতের নাগালে রাখার সরকারি উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ব্যাপক প্রশংসার। সরকার কৃষিবিজ্ঞানী, কৃষি-কর্মকর্তা, মাঠ-কর্মকর্তা ও কৃষকদের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধার সব রকম উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদনে দেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের ২৩৩ প্লাস দেশের মধ্যে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান দশম।
করোনা সংকট কাটিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষক আগের চেয়েও সরব। এ অবস্থা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি তাহলে বঙ্গবন্ধুর ভাষায় আমরা বলতে পারিÑ ‘আমাদের কেউই দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নয়ত দেশের কাতারে দাঁড়াব।
লেখক : শিক্ষক; পিএইচডি গবেষক, প্ল্যান্ট প্যাথলজি
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা
raziasultana.sau52@gmail.com