উত্তরণ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষি আমাদের উন্নয়নের সব থেকে বড় মাধ্যম। আমরা দেশের কৃষি খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা শিল্পের দিকেও নজর দিয়েছি। কারণ উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশ-বিদেশে পণ্য যেন আমরা রপ্তানি করতে পারি তার ব্যবস্থা করে কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাচ্ছি।
গত ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদত্ত এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সকল কৃষক-কৃষাণিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, তারা (কৃষক) রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করেন। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাদের (কৃষক) প্রতি আমাদের সব সময় সমর্থন রয়েছে এবং তাদের সহযোগিতা করা-এটা আমরা বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের কর্তব্য বলে মনে করে।
কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রদত্ত ভিডিও বার্তাটি ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা, গার্গল করা, গরম পানির ভাপ নেওয়া, জনসমাগমে না যাওয়া, দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং সরকার থেকে দেওয়া স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নির্দেশনাগুলো মেনে চলার জন্য দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্দেশনাগুলো মেনে নিয়ে নিজেকে আপনারা সুরক্ষিত রাখুন, অপরকে সুরক্ষিত করুন এবং এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায়Ñ তার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সবাই দোয়া করেনÑ বাংলাদেশ এই মহাদুর্যোগ থেকে যেন দ্রুত মুক্তি পেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষি আমাদের উন্নয়নের সব থেকে বড় মাধ্যম। বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা সব ধরনের মৌলিক অধিকার পূরণের জন্য জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে। তাই আমি কৃষক লীগের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের সকল কৃষক-কৃষাণি, তাদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
তিনি বলেন, কৃষকদের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা প্রথম সরকার গঠনের পর থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর যখন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা ক্ষমতা দখল করল এবং এদেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করল। সার চাইতে গিয়ে গুলিতে ১৮ জন কৃষককে জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে- এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন থেকে কৃষকদের আর কোনো কষ্টে থাকতে হয়নি। কারণ আমরা তাদের কল্যাণে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্গাচাষিরা যাতে বিনা জামানতে ঋণ পায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ ১২ টাকায় আমরা নামিয়ে এনেছি। গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ আমরা উৎপাদন করছি এবং সেই বীজ আমরা সরবরাহ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একইসঙ্গে আমরা কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণÑ যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল- আমরা সেই লক্ষ্য কার্যকর করে দিচ্ছি এবং সেখানে আমরা শতকরা ৭০ ভাগের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছি এবং আমরা কৃষি-যান্ত্রিকীকরণ করে যাচ্ছি যাতে আমাদের কৃষকরা আরও অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারে। তিনি বলেন, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সেই সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেচ কাজে কৃষক যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, সেখানেও আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং বর্তমানে সেচ কাজে আমরা সোলার-প্যানেল ব্যবহারও শুরু করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের কল্যাণে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য যাতে আমাদের কৃষকরা পায়, তার জন্য যথাযথ আমরা দাম নির্দিষ্ট করছি এবং কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি। কৃষকের গুদামে যাতে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে- কারণ যারা উৎপাদন করবে তারা খাবার পাবে না বা তাদের ছেলেমেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবেÑ এটা হতে পারে না। আমরা সে-ব্যবস্থাটাও সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগে যে সমস্ত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি এবং আমরা সেই সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এবারেও যেমন ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক তারাও সে-ধরনের সহযোগিতা পাবেন- তার জন্য একটা থোক বরাদ্দ আমরা রেখে দিচ্ছি। আমাদের দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারেÑ তার জন্য যথাযথ মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। কৃষক একটা মোবাইল ফোন ধরে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করা এবং কী ধরনের সার ব্যবহার করবেন, কতটুকু ব্যবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কি না বা কতটুকু করবেন- সে-ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সে-লক্ষ্যে তথ্যকেন্দ্রসমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর মোবাইল ফোনও আমরা সকলের হাতে হাতে আমরা তুলে দিয়েছি।
কৃষি গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি গবেষণার ওপর। ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন থেকেই কৃষি গবেষণায় আমরা গুরুত্ব দেই। আজকে গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদন- তরি-তরকারি, ফল-মূল এবং দানাদার খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য যেন উৎপাদন হতে পারে তার জন্য ব্যাপকহারে গবেষণা হচ্ছে এবং উন্নতমানের বীজ আমরা সরবরাহ করছি। যার ফলে আজকে কৃষক খুব অল্প কষ্টে অধিক পরিমাণে খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেনÑ ধান উৎপাদন করতে পারছেন, গম করছেন, ভুট্টা করছেন এবং সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন এবং তা বাজারজাত করার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি।
করোনাকালে কৃষকদের ধান কাটাসহ দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীদের তাদের পাশে দাঁড়ানোর উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের সময় যখন ধানকাটা নিয়ে সমস্যা হলো- আমি যখন আমার দলের নেতাকর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্বান করলাম, আমার ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী সকলে মাঠে নেমে পড়লেন। কৃষকের সঙ্গে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে ধান কেটে তাদের ঘরে তুলে দিলেন। আর যান্ত্রিকীকরণের জন্য হারভেস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের যন্ত্র আমরা ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দিব। আমরা চাচ্ছি আমাদের দেশের কৃষিটাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিতে এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।
কৃষকদের সহযোগিতা করা কর্তব্য
আরও পড়ুন