সম্পাদকের কথা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকারের অর্থ বিভাগ নতুন অর্থবছরের শুরুতে সরকারি খাতে ব্যয় সংকোচনের নীতি গ্রহণ করেছে। এই লাগাম টেনে ধরা এবং ব্যয় সংকোচন আমাদের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। সরকার ভূমি অধিগ্রহণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নতুন গাড়ি কেনা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ২০/২৫ শতাংশ ব্যয় সংকোচন, নানা অজুহাতে ‘সম্মানী’র নামে অর্থ অপচয়, বিদেশ ভ্রমণ, সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব ব্যয় ও বরাদ্দ স্থগিতের মাধ্যমে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। ইতোমধ্যে, অর্থবছরের শুরুতে, নতুন বাজেট কার্যকর করার দ্বিতীয় দিনেই বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরিপত্র জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আমরা সরকারের এই সময়োচিত এবং বাস্তবোচিত পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।
এ-কথা সবাই জানেন, কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা বাংলাদেশের মতো দ্রুত বিকাশশীল দেশগুলোকে এক অভিনব সংকটের মধ্যে ফেলেছে। ২০০৯ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন অভিযাত্রা, আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ‘রোল মডেল’ করে তুলেছে। কিন্তু কোভিড, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উন্নত দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস, মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতা প্রভৃতি আমাদের উন্নয়ন যাত্রার গতিকে শ্লথ করে দিতে চাইছিল। এমতাবস্থায় অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন, অগ্রাধিকার প্রাপ্ত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন এবং জনগণকে বিশ্ব-মন্দার প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ব্যয় সংকোচন ও অর্থ ব্যয়ে লাগাম টেনে ধরা অত্যন্ত বিজ্ঞজনোচিত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
আমরা আরও সম্ভাব্য খাত অনুসন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করব, যাতে ব্যয় সংকোচন ও বাহুল্য ব্যয় কমানো যেতে পারে। আমরা অত্যন্ত বিনয়ের সাথে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ফোরামÑ জাতীয় সংসদকেও এর আওতায় আনা যেতে পারে। প্রত্যেক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরদিন থেকেই একটা মাসিক ভাতা ও যাতায়াত ভাতা ইত্যাদি পেয়ে থাকেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলাকালে সংসদ অধিবেশনে যোগদানের জন্যও একটা ভাতা তারা পেয়ে থাকেন। এছাড়া সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাগুলোতে অংশগ্রহণের জন্যও তারা ভাতা পান। প্রকৃতপক্ষে সংসদ অধিবেশনে যোগদান, আইন প্রণয়ন এবং অনুষঙ্গ হিসেবে স্থায়ী কমিটির সভায় যোগদানের জন্যই তো জনগণ তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এটা তাদের সংসদীয় কার্যক্রমের অপরিহার্য অংশ। সংসদ সদস্য হিসেবে ভাতা দেওয়ার জন্য কোনো উদ্দেশ্য তো থাকতে পারে না। অতএব, এজন্য বাড়তি ভাতা নেওয়া বা দেওয়াটা ঠিক কী না ভেবে দেখা দরকার। আমরা মনে করি, এই খাতে সরকারি খরচ অপ্রতুল হলেও, সংসদ সদস্যরা এই ব্যয় সংকোচন নীতি নিজেদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে দেশবাসী উৎসাহিত হবে। অর্থমূল্যের চেয়েও এর একটা প্রতীকী মূল্য রয়েছে।
দ্বিতীয়ত; সরকারের বিভিন্ন খাতে অপচয় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিও কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। কার্যকরভাবে দুর্নীতি হ্রাস ও অপচয় রোধ করতে পারলে এই অর্থবছরে ব্যয় সংকোচন করে যে পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে, তার চেয়ে কয়েক গুণ অর্থ সাশ্রয় সম্ভব হবে।
কৃচ্ছ্র সাধনের পাশাপাশি আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। উৎপাদনশীল খাত, সামগ্রিকভাবে দেশের প্রবৃদ্ধি-অনুকূল খাত, কম সুদে বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহের কার্যক্রম এবং মূল্যস্ফীতি রোধে সরকারের নীতি-কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কৃচ্ছ্র সাধন ও সাশ্রয়ী হওয়ার পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।