সাইদ আহমেদ বাবু : করোনা বিপর্যয় আমাদের সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। মানুষ সামাজিক জীব। সংঘবদ্ধতাই মানুষের ধর্ম। অথচ সামাজিক দূরত্ব তথা বিচ্ছিন্নতাই এ-সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, সর্বোপরি ধরণীর স্বার্থে এই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের সামঞ্জস্য বিধান করতেই হবে।
একটি সম্পূর্ণ অপরিচিত খামখেয়ালি জীবাণু যে সদা স্থান পরিবর্তনকারী তাকে আয়ত্তে আনতে পৃথিবীর কোনো দেশই সবকিছু ঠিকঠাক করতে পেরেছে এ-কথা বলা যাবে না। কোভিড-১৯ মহামারি পৃথিবীর সব জাতির ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। সরকার ও সমাজের সমন্বয়ে মানুষের জাগরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এই মহামারি শক্ত হাতে ও সফলভাবে মোকাবিলার চেষ্টা করছে। করোনা মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকার কিছু প্রাথমিক ও দ্রুত নিশ্চিত পদক্ষেপ নিয়েছিল, যার ফলে মৃত্যুহার নিম্নগামী ও সংক্রমণ মুক্তির হার ঊর্ধ্বগামী হয়েছে। এই মহামারি মোকাবিলায় সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টা, সমাধানের চেষ্টা, আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। এ-রকম পরিস্থিতিতে এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যে সামগ্রিক বিশ্ব পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সঠিক সময়ে তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর জন্য প্রশংসিত হয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক আঘাত মোকাবিলায় সক্ষমতাসহ বিভিন্ন সূচকের ওপর ভিত্তি করে গত কয়েক মাস ধরে ‘করোনা সহনশীল’ দেশের আন্তর্জাতিক র্যাংকিং প্রকাশ করছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। ডিসেম্বরে ব্লুমবার্গ প্রকাশিত এই র্যাংকিংয়ে ২০ নম্বরে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। ব্লুমবার্গের ‘কোভিড রেজিলিয়েন্স র্যাংকিং’-এ দেখা গেছে, র্যাংকিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলোর চেয়েও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের ধারে-কাছে নেই দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশই। এই তালিকায় ভারত-পাকিস্তানের জায়গা হয়েছে নিচের দিকে। ব্লুমবার্গের ‘কোভিড রেজিলিয়েন্স র্যাংকিং’ অনুসারে গত নভেম্বরে ২৪ নম্বরে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চমৎকার দক্ষতা দেখিয়ে এক মাসের ব্যবধানে চার ধাপ উপরে উঠে এসেছে। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণ এবং ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির নিশ্চয়তার সূচকে ভালো স্কোর গড়ে র্যাংকিংয়ে শীর্ষে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির স্কোর ৮৫.৬, দ্বিতীয় স্থানে থাকা তাইওয়ানের স্কোর ৮২.৪, এরপর রয়েছে যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া ৮১, নরওয়ে ৭৭, সিঙ্গাপুর ৭৬.২, ফিনল্যান্ড ৭৫.৮, জাপান ৭৪.৫, দক্ষিণ কোরিয়া ৭৩.৩, চীন ৭২, ডেনমার্ক ৭০.৮, কানাডা ৭০, ভিয়েতনাম ৬৯.৭, হংকং ৬৮.৫, থাইল্যান্ড ৬৮.৫, আয়ারল্যান্ড ৬৭.৩, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৬৫.৬, ইসরায়েল ৬২.৪, রাশিয়া ৬১.৭, নেদারল্যান্ডস ৬১.৩ এবং বাংলাদেশ ৫৯.২। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পরে ২৯ নম্বরে রয়েছে পাকিস্তান। তাদের স্কোর ৫৪.৮। আর ৫০.৬ পয়েন্ট নিয়ে ভারত রয়েছে ৩৯ নম্বরে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে তালিকার শীর্ষে থাকা নিউজিল্যান্ডের চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২০ সালে নিউজিল্যান্ডের প্রবৃদ্ধি যেখানে মাইনাস ৬ দশমিক ১ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের জিডিপি ৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার করোনা সংক্রমণ রোগের বিস্তার ঠেকাতে ২০২০ সালে জরুরিভিত্তিতে ২ হাজার ডাক্তার ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরও ২ হাজার ডাক্তার, ৫ হাজার নার্স ও ৫ হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায় রয়েছে। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ দ্রুত সীমান্ত বন্ধ করা, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বন্ধ করতে পেরেছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু দেশ ইউরোপ আমেরিকার চেয়ে তুলনামূলকভাবে নাগরিকদের ঘরে অবস্থান করা নিশ্চিত করতে পেরেছে।
করোনা মোকাবিলায় সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব নাগরিকদের জীবন রক্ষা ও তাদের মঙ্গলসাধন করা। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার কাঠিন্য ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা বিপদের মুখোমুখি সময়ে যেন শতগুণ বেড়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। করোনায় সমগ্র পৃথিবী থমকে গেলেও বাংলাদেশ থমকে যায়নি। করোনা মহামারির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে গেছে। করোনার মধ্যে পৃথিবীর মাত্র ২২টি দেশে পজিটিভ জিডিপি গ্রোথ হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উপরের দিকে। মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপযুক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবিলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদ-ে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক)।
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিন করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের দু-শতাধিক দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ৭টি দেশের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রশংসা করে লেখা হয়েছে, প্রায় ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানে দুর্যোগ কোনো নতুন ঘটনা নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবিলায়ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এছাড়া দক্ষতার সঙ্গে সংকট মোকাবিলা তার জন্য নতুন কিছু নয়। তার এই তড়িৎ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম’ বিষয়টিকে প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেছে। দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে প্রকাশিত হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারিতে পৃথিবীর আর কোনো রাষ্ট্রনেতাকে এভাবে জনগণের কথা বলতে ও শক্তি-সাহস জোগাতে দেখা যায়নি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সময়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে পৃথিবীর যে কোনো দেশের থেকে বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুহার সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বেলজিয়ামে মৃত্যুহার ১৫.৯, ফ্রান্স ১৪.৯, যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ১২.২, স্পেন ১১.৪, ইতালি ১৪.৫, কানাডা ৮.২, সুইডেন ৮.১, চীন ৫.৫, জাপান ৫.৩, যুক্তরাষ্ট্র ৫, ভারত ৩.০৮, অস্ট্রেলিয়া ১.৪ আর বাংলাদেশে ১.৩ (বর্তমানে ১.২৫) শতাংশ। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য এটা স্বস্তির খবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
গত ৩ মে ২০২০ বিশ্বখ্যাত অর্থনীতি বিষয়ক সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, ৬৬টি দেশের উদীয়মান অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশ থাকবে নবম স্থানে। যেখানে চীন ১০ম, ভারত ১৮তম, পাকিস্তান ৪৩তম স্থানে থাকবে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) একটি গবেষণায় মতামত দিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ হবে। অন্যদিকে ভারতে ৫, শ্রীলংকা ৪.৯, আফগানিস্তানের ৩, মালদ্বীপ ৩.৭ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২ শতাংশ হতে পারে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলোর অর্থনীতি ভয়াবহ বিপর্যস্ত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স আগের সব অর্জনকে হার মানিয়েছে। প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬.১৬ বিলিয়ন (৩ হাজার ৬১৬ কোটি) মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। করোনাকালে গত জুন মাসেই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর পূর্বে এক মাসে কখনও এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।
করোনার কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, সেই ঢেউ বাংলাদেশেও লেগেছে। করোনা সংক্রমণ রোধে জারিকৃত লকডাউনে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ, গার্মেন্টসের অর্ডার বাতিল হওয়ার খবর, শ্রমিকদের চাকরি হারানোর ভয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। কর্মহীন হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। এমনি সময়ে চারদিকে যখন অস্থিরতা ও হাহাকার বিরাজ করছিল তখনই জননেত্রী শেখ হাসিনা তার জাতির উদেশ্যে ভাষণে দেশের জনগণকে বললেন, করোনাকালে একটি মানুষও না খেয়ে মারা যাবে না। এই আওয়াজ ১৭ কোটি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছিল, মানুষ আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল। অনাকাক্সিক্ষত এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে তখনই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়কের মতো ১ লাখ ২ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। করোনা মহামারির এই সংকটে জনগণের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতদিন না এই সংকট কাটবে, ততদিন আমি এবং আমার সরকার আপনাদের পাশে থাকব। প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনার ফলে স্বস্তি ফিরে এসেছে ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তা, কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে। করোনাকালে প্রাথমিক পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার একটি মাত্র পিসিয়ার ল্যাব ছিল। পরবর্তীতে করোনা পরীক্ষার জন্য আরও ৬৮টি ল্যাব প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সকল হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকার করোনা মহামারি ও লকডাউনের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আটকেপড়া তার প্রবাসী নাগরিকদের নিরাপদে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছে।
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনা মোকাবিলায় এ পর্যন্ত মোট ৭৪টি নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০০৮ সালে তার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সুবিধা নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। দেশের নিম্নআয়ের ৫০ হাজার পরিবারকে তিনি ঈদ উপহার পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে প্রতিটি গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়নসমূহে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ নিজস্ব অর্থায়নে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়েছেন। কৃষকের ধান কেটে দিয়েছেন, করোনায় মৃত লাশ দাফন করেছেন। আজকের পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নতুন করে দেশের কৌশলগত ভূমিকা নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশের ডিজিটাল পরিকাঠামো মোকাবিলায় বিরাট ভূমিকা নিয়েছে ডিজিটাল কলাকৌশলের সফল প্রয়োগে। ফলে সরবরাহ ও পরিষেবা ক্ষেত্রে দেশের বড় প্রমাণ রেখেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটেছে অবিশ্বাস্যভাবে।
আমরা একটি আলো-অন্ধকারের যুগ অতিক্রম করছি। শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব এখন ভয়াবহ মৃত্যু উপত্যকা পার হচ্ছে। তবুও বিরূপ প্রকৃতির বিরুদ্ধে মানুষ আবারও জয়ী হতে চলেছে। চীনের হুয়ান নগরীর গবেষণাগার থেকে ২০১৯ সালে যে নীমজোড় অণুজীব ছড়িয়ে পড়েছিল, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন পর্যন্ত ১৭ লাখ লোকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সংক্রমণ ছড়িয়েছে অন্তত ৫ কোটি দেহে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা কিছু আশার বাণী শুনিয়েছেন। কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করার জন্য ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে এবং চলতি সপ্তাহের শুরুতেই ব্রিটেনে প্রথম দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার কোভিড ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে তা আনার চেষ্টা করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৩ কোটি ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ৩ কোটি ডোজ কিনতে গত ৫ নভেম্বর সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে টিকার ৫০ লাখ ডোজ পাঠাবে সিরাম ইনস্টিটিউট। ভারত থেকে টিকা এনে বাংলাদেশে সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ভারত থেকে টিকা আনা এবং দেশে টিকা দেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ৫ জানুয়ারি একনেক সভায় ভ্যাকসিন কেনার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য ৫ জানুয়ারি ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের নামে ৫০০ কোটি ৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে করোনার টিকার জন্য অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করা হলো। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এই প্রথম করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন পেল। এখন ভারত থেকে টিকার চালান পেলেই বড় আকারে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে পারবে সরকার, যা ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে নতুন আশার আলো জ্বালবে। বাংলাদেশও দ্রুত টিকা নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা করছে। টিকা আসার পরপরই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে টিকা প্রদান করা হবে।
লেখক : সদস্য, সম্পাদনা পরিষদ, উত্তরণ