উত্তরণ ডেস্ক: ভারতের কলকাতায় গ্রেফতার হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক পলাতক খুনি রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেমউদ্দিন খান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেছেন, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি, নিশ্চিত হওয়ার পরই এ-বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে সরকার। ভারতের গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেমউদ্দিন খানকে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনায় তার আস্তানা থেকে আটক করা হয় এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, যা করোনাভাইরাসের কারণসহ জটিলতার কারণে গোপন রাখা হয় বলে কলকাতার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের দাবি।
গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য ধানমন্ডির ৩২নং বাড়ির নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করে এই খুনি মোসলেমউদ্দিন। দীর্ঘদিন মোসলেমউদ্দিন খান পশ্চিমবঙ্গের গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। ওই এলাকায় ‘ডাক্তার দত্ত’ নামে পরিচিত ছিল এবং ‘ইউনানী ফার্মাসী’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে আয়ুর্বেদ ও হোমিও চিকিৎসা করত। ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের ডাক্তার দত্ত নামের পরিচয় দিয়ে প্রায় চার দশক ধরে বসবাস করছিল মোসলেমউদ্দিন। সপরিবারে জাতির পিতার আরেক খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ কলকাতার পার্কস্ট্রিট থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর মাত্র ১৩ দিন আগে ঢাকায় গ্রেফতার হয়ে পরে ফাঁসি কার্যকর করার ঘটনার পর আরেক খুনি মোসলেমউদ্দিন খানের গ্রেফতারের খবরটি জানা গেল।
ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক খুনি রিসালদার মোসলেমউদ্দিনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার বনগ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়েছে। গত ৪০ বছর ধরে তিনি সেখানেই বসবাস করতেন বলে জানা গেছে। গত ১১ এপ্রিল ফাঁসি কার্যকর হওয়া আরেক খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ ছিল মোসলেমউদ্দিনের। বঙ্গবন্ধুকে সরাসরি গুলি করে হত্যাকারী জঘন্য খুনি রিসালদার মোসলেমউদ্দিন গোয়েন্দাদের হাতে আটক হয়েছে। এমন একটি তথ্য জানা গেলেও কাদের হাতে আটক হয়েছে সে-ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মোসলেমউদ্দিন ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে আটক থাকতে পারে এমন তথ্য জানা গেলেও কোনো কর্মকর্তা নিশ্চিত করে কিছু বলছেন না।
ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেমউদ্দিন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানায়। খুনি মোসলেমউদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দারা। এরপরই গোয়েন্দারা তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। তবে হঠাৎ করেই পশ্চিমবঙ্গে নিখোঁজ হন মোসলেমউদ্দিন। উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর রেলস্টেশন এলাকায় অপরিচিত কিছু ব্যক্তির সঙ্গে তাকে সর্বশেষ দেখা যায়। দীর্ঘদিন মোসলেমউদ্দিন গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। ওই এলাকায় ‘ডাক্তার দত্ত’ নামে পরিচিত ছিল এবং ‘ইউনানী ফার্মাসী’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে আয়ুর্বেদ ও হোমিও চিকিৎসা করতেন। ওই এলাকায় প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছিল মোসলেহউদ্দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডে যে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা অংশ নেয় তার মধ্যে রিসালদার মোসলেমউদ্দিন অন্যতম। গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করে মোসলেমউদ্দিন খান। এরপর অন্য খুনিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেনা প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাকে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অন্য খুনিদের সঙ্গে তিনিও দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। তার কয়েক বছর পর চলে আসে ভারতে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে খুনি মোসলেমউদ্দিন।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২নং বাড়িতে হানা দেওয়া দলটির সামনের সারিতে ছিল মোসলেমউদ্দিন। অনেকের দাবি, মোসলেমউদ্দিনই গুলি করে হত্যা করেছিল বঙ্গবন্ধুকে। গ্রেফতারের পর ফাঁসি কার্যকর হওয়া খুনি মাজেদকে জেরা করে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা মোসলেমউদ্দিনের ভারতে অবস্থানের তথ্য পান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত যে ছয় আসামি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল, তাদের মধ্যে মোসলেমউদ্দিন একজন। ওই ছয়জনের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ৭ এপ্রিলে গ্রেফতার হওয়ার পর গত ১১ এপ্রিল মধ্যরাতে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মাজেদ পরিচয় গোপন করে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতায় পালিয়ে ছিল। তার মতো মোসলেমউদ্দিনও ভারতে পালিয়ে ছিলেন এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে তাকে আটক করা হয়ে থাকতে পারে বলে ভারতীয় বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্রে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি।
ডা. দত্ত ছদ্মনাম নিয়ে দীর্ঘ সময় এই এলাকায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে কাজ করত ওই ব্যক্তি। তাকে সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়েছে। ফাঁসির আগে মাজেদ জেরায় কবুল করে তার কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কনট্রাক্ট। সেই কনট্রাক্টের সূত্র ধরেই বঙ্গবন্ধুর অপর খুনি তৎকালীন সেনাকর্মী মোসলেমউদ্দিনের গোপন ঠিকানার সন্ধান পায় বাংলাদেশ সরকার। এরপর দ্রুত প্রতিবেশী দেশটির সরকার ও সেই অঙ্গরাজ্যের পুলিশের সঙ্গে যৌথ অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়। মোসলেমউদ্দিন নিজের নাম পাল্টে ডা. দত্ত নাম নিয়ে দীর্ঘ সময় পশ্চিমবঙ্গে ছিল। তার আনাগোনা ছিল উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ঠাকুরনগরে। তবে এ-বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সরকার কিছুই বলেনি।
উচ্চপদস্থ কূটনৈতিক অফিসার : মুজিবুর রহমানকে খুনের ঘটনার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবির্ভাব হয় সেনাকর্তা জিয়াউর রহমানের। তিনি হন রাষ্ট্রপতি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে চাকরি মিলেছিল। মোসলেমউদ্দিন পরে তেহরান ও জেদ্দার দূতাবাসে চাকরি পায়।
পলায়ন : ১৯৯০-এর দশকে প্রথমবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তারপরেই আত্মগোপনে চলে যায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। মোসলেমউদ্দিন থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়।
গোয়েন্দারা বিভিন্ন সূত্রে জেনেছেন, মোসলেমউদ্দিন ও মাজেদ ভারতে আত্মগোপন করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে মোসলেমউদ্দিন। ২০১৮ সালে সে বাংলাদেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কয়েকদিন ছিল বলেও জানা গেছে।
সূত্র : জনকণ্ঠ
এবার আটক মোসলেমউদ্দিন : বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ ঘাতক সিঁড়িতে নিজ হাতে জাতির পিতাকে গুলি করে হত্যা করে
আরও পড়ুন