ফারুক শাহ
০২ এপ্রিল : বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি দিবস। অটিজমে আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ৬২/১৯৯ ধারা অনুযায়ী মনোনয়ন লাভ করে দিবসটি। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ প্রস্তাবটি পাস হয়। একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২ এপ্রিল দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এর পরের বছর ২০০৮ থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
একসময় অটিজম ছিল একটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যু। এ-সম্পর্কে সমাজে নেতিবাচক ধারণা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও স্কুল সাইকোলজিস্ট সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ২০০৭ সালে এ বিষয়ে দেশে কাজ শুরু করেন। সায়মা ওয়াজেদ এ অবহেলিত জনস্বাস্থ্য ইস্যুতে তার বিরাট অবদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি পেয়েছেন। বিশ্ব অটিজম দিবস স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত জাতিসংঘের ৭টি দিবসের মধ্যে অন্যতম।
০৩ এপ্রিল : জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস
৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)-এর প্রতিষ্ঠা দিবসও। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তদানীন্তন শিল্প-বাণিজ্য, দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী থাকাকালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) গঠনের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সেদিনের সেই সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের ফলে এই এফডিসি প্রতিষ্ঠিত হয়। চলচ্চিত্র নির্মাণের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) প্রতিষ্ঠার এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ঐতিহাসিক ৩ এপ্রিলকে ২০১২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ঘোষণা করেন। এরপর থেকে প্রতি বছর এই দিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। একই সাথে সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা এবং বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে নতুন ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
০৭ এপ্রিল : বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস
স্বাস্থ্যসেবা কোনো দাবি নয়, বরং সবার অধিকার। জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র জন্মদিন ৭ এপ্রিল ১৯৪৮। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার দু-মাস পর ২৪ জুন ১৯৪৮ সালে এই সংস্থার প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল জেনেভায়। সে-সময় সারাবিশ্বের ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সম্মেলন থেকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে প্রতি বছর নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করার উদ্দেশে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ১৯৭২ সালের ১৯ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে।
১২ এপ্রিল : মানুষের মহাশূন্যে উড্ডয়ন দিবস
জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতি বছর ১২ এপ্রিল মানুষের মহাশূন্যে উড্ডয়নের আন্তর্জাতিক দিবস (International Day of Human Space Flight) পালন করা হয়। ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন নম্বর এ/আরএস/৬৫/২৭১-এর অনুবলে প্রতি বছর ১২ এপ্রিল দিবসটি পালনের ঘোষণা প্রদান করা হয়। মহাশূন্যে অভিযানের প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব, মানব জাতির উন্নয়নে মহাশূন্যে অভিযানের ভূমিকা, বিশ্বের উন্নয়নে মহাশূন্যে অভিযানের ফলপ্রসূতা, এতদসংক্রান্ত গবেষণা, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কল্যাণে এরূপ অভিযানের অনিবার্যতা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য।
মূলত দিবসটি মহাশূন্যে মানুষের প্রথম যাত্রা স্মরণে। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউরি গ্যাগারিন (Yuri Gagarin) মহাকাশে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিভ্রমণ করেন। মহাকাশে তিনিই হলেন প্রথম মানব অভিযাত্রী।
২২ এপ্রিল : বিশ্ব ধরিত্রী দিবস
বিশ্ব ধরিত্রী দিবস বা ওয়ার্ল্ড আর্থ ডে। ধরিত্রী শব্দটি এসেছে ধরণী বা ধরা থেকে, যার অর্থ হলো পৃথিবী। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সর্বসম্মতভাবে ধার্য করা একটি দিবস। সর্বপ্রথম এই দিনটি পালন করা হয় ১৯৭০ সালে। মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন এই ধরিত্রী দিবসের প্রচলন করেন। প্রতি বছরের ২২ এপ্রিল দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালন শুরু হয় ১৯৯০ সালে। আর্থ ডে নেটওয়ার্কের আয়োজনে বিশে^র ১৯৫টির অধিক দেশ এই দিবস এখন পালন করে থাকে। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে বসন্তকালে আর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলোতে শরতে ধরিত্রী দিবস পালিত হয়।
২৩ এপ্রিল : বিশ্ব বই দিবস
বিশ্ব বই দিবস। ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো, বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো। বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল মারা যান স্পেনের আরেক বিখ্যাত লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস। আন্দ্রেস ছিলেন তার ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। এরপর দাবি ওঠে প্রতি বছরই দিবসটি পালন করার। অবশ্য সেই দাবি তখন নজরে আসেনি কারও। বহুদিন অপেক্ষা করতে হয় দিনটি বাস্তবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। অবশেষে ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পালন করতে শুরু করে। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে বই দিবস পালিত হয়ে আসছে।
২৯ এপ্রিল : আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস
বিশ্ব নৃত্য দিবস। নৃত্য হচ্ছে মানুষের মনোজাগতিক প্রকাশভঙ্গি। কেননা নৃত্য ও এর ভাষা কাজ করে একসূত্রে। সারাবিশ্বে প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল নানা উৎসব-আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়। দিবসটি উদযাপন করা হয় ব্যালে নৃত্যের স্রষ্টা জন জর্জেস নোভেরের জন্মদিনে। প্যারিসের প্রত্যন্ত গ্রামে ১৭২৭ সালের ২৯ এপ্রিল বিশ্ব নৃত্য সংস্কারক জন জর্জেস নোভেরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৭৫৪ সালে ব্যালে নৃত্য আবিষ্কার করেন। এরপর ১৭৬০ সালে রচনা করেন ‘লেটারস অন দ্য ড্যান্স’ গ্রন্থ। এ গ্রন্থে ব্যালের ব্যাকরণ ও উপস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা স্থান পেয়েছে। ‘ব্যালের শেক্সপিয়ার’ হিসেবে পরিচিত নোভেরের মোট কম্পোজিশন ১৫০টি। ওই সময় তার কম্পোজিশন পৃথিবীব্যাপী আলোড়ন তুলেছিল। নোভেরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যালের মধ্যে রয়েছে- অ্যাডমিটেড অ্যারসেট, লে মোট দ্য হারক্লি, মিড ইট জ্যাসন, দ্য পাস্ট অব হিউম্যান, ডিয়ার লেস অ্যাজামনুন, অ্যাপলস ইট ক্যাম্পপেসপে প্রভৃতি। ১৮১০ সালের ১৯ অক্টোবর নোভেরের প্রয়াণ ঘটে।
তার অবদানকে স্বীকৃতি এবং জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৮২ সালে আন্তর্জাতিক থিয়েটার সংস্থা (আইটিআই)-র সহযোগিতায় ইউনেস্কো তার প্রায়োগিক সৃজন শিল্পী সমন্বয় কমিটি ২৯ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব নৃত্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯২ সালে দিবসটি ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করে। বিশ্বের ১৯৫টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে এ দিবস।