Monday, October 2, 2023
বাড়িSliderউন্নয়নটা তাদের চোখে পড়ে না সব সময় অপপ্রচারে ব্যস্ত

উন্নয়নটা তাদের চোখে পড়ে না সব সময় অপপ্রচারে ব্যস্ত

উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সহিংসতার দিকে ইঙ্গিত করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ইচ্ছা করেই এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে এবং অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশকে আর কখনও কেউ পেছনে টানতে পারবে না। তবে কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটছে, ঘটানো হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হচ্ছে, সেটা আপনারা নিজেরাই টের পান। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সেই সঙ্গে অপপ্রচারও চালানো হচ্ছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যতই উন্নতি করি, ভালো কাজ করি, একটা শ্রেণিই আছে বাংলাদেশের বদনাম করতে তারা ব্যস্ত। তারা কী চায়? এদেশে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক সেটা তারা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলে তাদের একটু কদর বাড়ে, সেজন্য তারা দেশের এই উন্নয়নটা দেখে না; বরং ধ্বংসই তারা করতে চায় সবসময়, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ২৪ অক্টোবর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফোর-লেনের দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন স্বপ্নের ‘পায়রা সেতু’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান ও পরামর্শ দেন। তিনি একই অনুষ্ঠানে ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ ছয়-লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, এক সময় অনেকেই বলত, দেশ স্বাধীন হয়ে কি হবে বা দেশ বোধহয় এগিয়ে যাবে না। কিছু মানুষের এমন মনোভাবের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর যারা অবৈধভাবে সরকারে এসেছে, তারা দেশের উন্নয়নকে থামাতে চেয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বে একটা মর্যাদা পাবে, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বে যে মাথা উঁচু করে চলতে পারবেÑ এটাই যেন তাদের কাম্য ছিল না, এটাই যেন তারা চাইত না।
আর সে-কারণে বিদেশে ‘জল, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা আর দুর্ভিক্ষের দেশ’ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি। এখন পর্যন্ত দীর্ঘ সময় থাকার ফলে আজকের বাংলাদেশকে কেউ আর হেয় করে দেখতে পারে না। আজকে বাংলাদেশের নাম বললেই সবাই সম্মান করে এবং বাংলাদেশ আজকে সারাবিশ্বে একটা মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এই পায়রা সেতু। সেতুটি চালু হওয়ায় বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সঙ্গে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত সড়ক পথ ফেরিবিহীন হয়ে গেছে। অতীতে বরিশাল থেকে মহাসড়ক পথে কুয়াকাটা পৌঁছাতে হলে ৬টি স্থানে ফেরি পার হতে হতো। এর আগে ৫টি সেতুর পর এখন ৬ নম্বরে এই পায়রা সেতু নির্মিত হওয়ায় এ অঞ্চলে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো।
অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি বক্তব্য রাখেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম প্রকল্পগুলোর ওপর প্রেজেনটেশন উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রকল্পগুলোর ওপর পৃথক ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়। প্রকল্প উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী এবং সিলেট প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত প্রশাসন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপি, সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
বরিশাল অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের এই সেতুটি উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বরিশাল এবং পটুয়াখালীর সংযোগ সৃষ্টিকারী হবে এই পায়রা সেতু। আর নদীর নামে একটা সেতু হলে নদীটারও একটা পরিচয় পাওয়া যাবে। যে কারণে এই নামটাই আমি পছন্দ করেছি। আর পায়রা শান্তির প্রতীক। কাজেই, এই সেতু হওয়ার পর এই অঞ্চলের মানুষের যে আর্থিক উন্নতি হবে তার ফলে মানুষের মনে একটা শান্তি আসবে এবং মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ফলে তারা ভালোভাবে বাঁচতে পারবে, সেই সুযোগ সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, খাল, বিল, নদী-নালার এই বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। কাজেই, এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যত দ্রুত আমরা করতে পারি ততই এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের সহায়ক হবে। ফলে, এর একটা বিরাট প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়বে এবং দেশটাকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।
সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকারের প্রথম মেয়াদে সর্বপ্রথম লাউকাঠি নদীতে পটুয়াখালী সেতু নির্মাণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে কীর্তনখোলা নদীর ওপর শহিদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতু), খেপুপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ওপর শহিদ শেখ কামাল সেতু, হাজীপুরে সোনাতলা নদীর ওপর শহিদ শেখ জামাল সেতু এবং মহিপুরে খাপড়াভাঙ্গা নদীর ওপর শহিদ শেখ রাসেল সেতু নির্মিত হয়েছে। আর আজ পায়রা নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন পায়রা সেতু নির্মিত হলো। এর ফলে এখানে পর্যটনের সুযোগ যেভাবে বৃদ্ধি পাবে, তেমনি তার সরকার পায়রায় যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হবে। আর সমগ্র বাংলাদেশেও একটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির আগামী বছর পদ্মাসেতু চালুর ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদ্মাসেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর কষ্ট থাকবে না। যে কারণে অন্য সেতুগুলোও আমরা সঙ্গে সঙ্গে করে ফেলছি। আধুনিক প্রযুক্তি তৃণমূলের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ায় তার সরকার উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে ঘরে বসেও মানুষ কাজ করে খেতে পারে, স্বাবলম্বী হতে পারে।
এদেশের যতটুকু উন্নয়ন সেটা আওয়ামী লীগ সরকারই করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশে একটি যোগাযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য ’৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেই আওয়ামী লীগ সরকার ‘ধরলা সেতু’ নির্মাণ করে। যমুনা নদীর ওপর রেল যোগাযোগসহ বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই করা।
বর্তমান সরকারের আমলে দক্ষিণাঞ্চলে করা উন্নয়নের খ-চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বরিশাল বিভাগে কেবল সুন্দর রাস্তাই আমরা করিনি, এখানে আমাদের ক্যান্টনমেন্ট নির্মাণ হয়েছে (লেবুখালি), একটি নৌঘাঁটি ও বিমান ঘাঁটি হচ্ছে। সেইসঙ্গে কোস্টগার্ডের প্রশিক্ষণের জন্য কোস্টগার্ড ঘাঁটিও এখানেই করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, গলাচিপায় বীজ গবেষণা কেন্দ্র করা হয়েছে এবং পায়রা বন্দর করা হয়েছে। এভাবেই পুরো বরিশাল নিয়েই একটি বড় কর্মযজ্ঞ চলছে। লেবুখালি প্রান্তে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, পটুয়াখালীর ৪টি সংসদীয় আসনের নির্বাচিত চার এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, দুই জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগসহ সড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকবিতা
পরবর্তী নিবন্ধধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য