আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। দেশের মানুষের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, জাতির পিতার স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ্ আমরা পূরণ করব।
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন: গত ২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারাদেশ থেকে আগত নেতাকর্মী, সমর্থক, সুধীসমাজ, কূটনীতিক ও বিশিষ্টজনদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে একাধারে দশমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জননেতা ওবায়দুল কাদের এমপি।
আওয়ামী লীগের সুবিশাল-দৃষ্টিনন্দন ও সুশৃঙ্খল ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরে দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে তার সংকল্পের কথা জাতির সামনে তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপি। একইসঙ্গে নিজের জীবন থাকতে বাংলাদেশের স্বার্থ নষ্ট হবে না জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী। দেশের মানুষের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে যাবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, জাতির পিতার স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ্ আমরা পূরণ করব।
২২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার সরকারের সদিচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ভোট চুরির দুরভিসন্ধি যদি থাকত, তাহলে আমরা নতুন নির্বাচন কমিশন আইন করলাম কেন? খালেদা জিয়ার মতো ওই ‘আজিজ মার্কা’ নির্বাচন কমিশন করতে পারতাম। সেটা আমরা করি নাই। কারণ দেশের জনগণের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাস নিয়েই আমরা চলি।
তিনি বলেন, আঘাত আসবে, ষড়যন্ত্র আসবে কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবে। সেটাই আমরা চাই। আমরা সকল বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে আজকে বিরামহীন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।
সকাল সাড়ে ১০টায় শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর আগে সম্মেলন মঞ্চে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’Ñ এই সেøাগানে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের কাউন্সিল। সম্মেলনে লিয়াকত আলী লাকীর নির্দেশনায় এবং আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপির তত্ত্বাবধানে আধা ঘণ্টার মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হয়। এ-সময় সংগীত ও নৃত্যের তালে তালে তুলে ধরা হয় আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য।
ধর্মগ্রন্থসমূহ পাঠের মাধ্যমে শুরু হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। শোক প্রস্তাবের পর সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতাও পালন করেন। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি এবং উপ-প্রচার সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
প্রথম অধিবেশন শেষে বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন কমিটি নির্বাচন করা হয়। সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা।
বর্ণিল সাজে সজ্জিত ও কানায় কানায় পরিপূর্ণ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলীয় প্রতীক নৌকা এবং স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে তৈরি ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট প্রস্থের বিশাল মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ১০টায় এসে যখন উপস্থিত হন, তখনই পাল্টে যায় সম্মেলনের দৃশ্যপট। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ সেøাগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। মঞ্চে উঠেই বিশাল মঞ্চের দু-পাশে হেঁটে হেঁটে হাত নেড়ে কাউন্সিলর, ডেলিগেটস, আমন্ত্রিত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শীতের সকালে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সকাল ৮টা থেকেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল প্যান্ডেলে আসতে থাকেন কাউন্সিলর, ডেলিগেট, আমন্ত্রিত অতিথি ও সারাদেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টার মধ্যেই কানায় কানায় ভরে ওঠে সুবিশাল প্যান্ডেল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকা। প্রধানমন্ত্রী আসার পরও অনেক কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও বিভিন্ন পেশার আমন্ত্রিত অতিথিদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে দেখা যায়। প্যান্ডেলে জায়গার সংকুলান না থাকায় প্যান্ডেলের বাইরে মাইকের সামনে দাঁড়িয়েই হাজার হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের সুশৃঙ্খল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করে।
বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। দেশের উন্নয়ন অর্জন করতে হলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। আগুন-সন্ত্রাস মোকাবিলা করতে আওয়ামী লীগ প্রস্তুত। ভোট চুরি, দুর্নীতি, ভোট জালিয়াতি, লুটপাট, অর্থপাচার, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা হবে, আবারও হবে, নির্বাচনে হবে, আন্দোলনে হবে। আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ-কথা বলেন তিনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু পরিবারকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিরাপদে বিদেশে পাঠিয়েছেন এবং দায়মুক্তি দিয়েছেন। বহু মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ৩ নভেম্বরের মাস্টারমাইন্ড জিয়া। আর ২১ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড তার সন্তান তারেক রহমান যিনি মুচলেকা দিয়ে চলে গেছেন রাজনীতি করবেন না বলে। এসব ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সবার চেতনায় বঙ্গবন্ধু, আমাদের সবার নিঃশ্বাসে বঙ্গবন্ধু, আমাদের বিশ্বাসে বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু নেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষরা হিংসায় জ্বলে, মনে বড় জ্বালা, বড়ই অন্তরজ্বালা, পদ্মা সেতু করে ফেললেন, মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন। এই জ্বালা আর সইতে পারে না। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষরা জানে যে নির্বাচন করলে শেখ হাসিনার সঙ্গে পারবে না। তাই সরকার হটাবে। শেখ হাসিনাকে হটাতে পারলে ময়ূর সিংহাসন পাবে বলে ভাবছেন তারা। কিন্তু তা পাবে না। ১০ ডিসেম্বর পারেনি, অশ্বডিম্ব পেয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের জয়গান করেন। গত ৪৭ বছরে সবচেয়ে সৎ রাজনীতিক ও জনপ্রিয় নেতা তিনি। দুনিয়ার কাছে দেশের সামর্থ্য ও সক্ষমতা তুলে ধরেছেন তিনি।