সম্পাদকের কথা: বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং ‘উত্তরণ’-এর দ্বাদশ বর্ষে পদার্পণ একই মাসে। ঘটনাটি কাকতালীয় মনে হতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের জন্য শ্লাঘার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের সহজাত পত্রিকা ছিল বটে আওয়ামী লীগের। মুজিবনগর সরকারের সময়ই আওয়ামী লীগের মুখপত্র রূপে নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’। স্বাধীনতার পর দৃশ্যপট বদলে যায়। একাধিক দৈনিক কাগজ বঙ্গবন্ধুর সরকারের দেশ গড়ার স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগী হয় এবং সাংবাদিকতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। পাকিস্তানি আমলের ধারাবাহিকতায় একাধিক সংবাদপত্র, যেমনÑ ‘দৈনিক বাংলা’ (পূর্বতন দৈনিক পাকিস্তান) এবং ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’ নতুন করে প্রকাশিত হতে শুরু করে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সমর্থক ‘দৈনিক সংবাদ’, ‘দৈনিক বাংলার বাণী’, ‘বাংলাদেশ টাইমস’ ও ‘দি পিপলস’ পাঠকের চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসে।
সে-সময় দেশ গঠনে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের হয়তো আলাদা করে কোনো সাপ্তাহিকের প্রয়োজন অনুভূত হয়নি। তারপর ১৯৭৫- এক নদী রক্ত, বেদখল স্বাধীনতা ও আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার আড়ালে চলেছে পাকিস্তানিকরণ। পাষাণের মতো চেপে বসেছে সামরিক-অসামরিক স্বৈরশাসন। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পালে নতুন হাওয়া লাগলো।
সেই দুঃসময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা একদিকে আওয়ামী লীগকে পোক্ত গণভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন, অন্যদিকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য গণ-আন্দোলন গড়ে তোলায় আত্মনিয়োগ করেছেন। এতদ্সত্ত্বেও নব্বইয়ের দশকে তিনি চেষ্টা করেছেন একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা দাঁড় করাতে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ রেহানার সম্পাদনায় নতুন আঙ্গিকে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক বিচিত্রা। তবে নতুনভাবে প্রকাশিত বিচিত্রা এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। তারপর নতুন শতাব্দীর সূচনায় সভানেত্রী নিজে উদ্যোগী হয়ে একটা বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেই বুলেটিন সময়ের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট ছিল না। বিপুল আত্মত্যাগ ও লড়াইয়ের পটভূমিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়।
নতুন যুগের পরিপ্রেক্ষিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা অনুভব করেন একটা নতুন দলীয় মুখপত্রের। প্রকাশিত হয় ‘মাসিক উত্তরণ’। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয় গণভবনে। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশনা উন্মোচন করেন।
আজকের এই দিনে আমরা বিশেষভাবে স্মরণ করছি শেখ হাসিনার অবিস্মরণীয় অনুপ্রেরণা ও অনন্য অবদানের কথা। ইতোমধ্যে ১১টি বছর কেটে গেছে। দ্বাদশ বর্ষে পদার্পণের মুহূর্তে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে-সময়ের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও তৎকালীন প্রচার উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান প্রয়াত এইচ টি ইমামের পবিত্র স্মৃতি। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ‘উত্তরণ’ সম্পাদকম-লী ও ‘উত্তরণ’ পরিবারের সকল সদস্যকে। ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি ‘উত্তরণ’-এ যারা প্রবন্ধ, প্রতিবেদন, গল্প ও কবিতা দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। ‘উত্তরণ’ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে সে-সময় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে, যারা ‘উত্তরণ’-এ বিজ্ঞাপন ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। সর্বোপরি আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছিÑ আমাদের অগণিত পাঠককে।
এটা তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগ। কেবল প্রিন্ট মিডিয়া দিয়ে এ যুগের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। আমরা তাই প্রথম শ্রেণির সংবাদপত্রের মতো মাসিক পত্রিকা ‘উত্তরণ’-এর মুদ্রিত সংস্করণের পাশাপাশি তার অনলাইন ভার্সনও প্রকাশ করছি। এছাড়া ‘উত্তরণ দিবারাত্রি’ নামে একটি অনলাইন পত্রিকাও আমরা নিয়মিত প্রকাশ করছি। তবে আমাদের সামর্থ্য সীমিত। আমরা ইচ্ছে করলেও পত্রিকাটির প্রচারসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেতনভুক স্থায়ী সংবাদকর্মী এবং আনুষঙ্গিক উপকরণ সংগ্রহ করতে পেরে উঠিনি। আমাদের পত্রিকাটি প্রকাশিত হচ্ছে মূলত স্বেচ্ছাসেবীদের অবদানের ভিত্তিতে। বেতনভুক কর্মীদেরও মানসম্মত সম্মানী আমরা দিতে পারি না। প্রত্যেকেই কাজ করেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশপ্রেমের প্রেরণায়। রাজনৈতিক দলের পত্রিকা বলেই এটি সম্ভব হচ্ছে।
আমাদের প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকার ছিল- আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধুর পথনির্দেশ মেনেই চলব। বস্তুনিষ্ঠতা, দলের ভাবাদর্শগত অবস্থান সমুন্নত রাখা এবং দলীয় পত্রিকা বলে কোনো সংকীর্ণতা ও কুৎসা রটনার হাতিয়ার হতে দেব না। ‘উত্তরণ’ কথা রেখেছে। আমরা অক্লেশে বলতে পারি- ‘উত্তরণ’ গত ১১ বছরে দেশের রাজনৈতিক মহলে, সুধী সমাজে এবং পাঠক সমাজে যে সম্মান ও মর্যাদার আসন প্রতিষ্ঠা করেছে, নিঃসন্দেহে তা নিয়ে আমরা গৌরব করতে পারি। একটি পরিচ্ছন্ন ও উন্নত রুচির রাজনৈতিক জার্নাল বাংলাদেশে রাজনৈতিক সাহিত্যে নিজের একটি স্থায়ী আসন করে নিতে সক্ষম হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণা এবং ‘উত্তরণ’-এর সঙ্গে জড়িত সকলের সমবেত প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ও দৃঢ় অঙ্গীকারÑ ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।