রায়হান কবির
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে স্থানীয় সরকারসহ অন্যান্য নির্বাচনে সংগঠন যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তার পক্ষেই তথা নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকারের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরে নির্বাচনে দলের বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদসহ সকল নির্বাচনে দল যাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
একই সাথে তিনি বলেছেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে আগামীতে তারা দলের কোথাও মনোনয়ন পাবে না। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে সংগঠনের ত্যাগী-পরীক্ষিত আদর্শিক নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা নৌকার পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে অগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে দলীয় নেতা-কর্মীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন এবং ভোটারদের কাছ থেকেও সন্তোষজনক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী সারাদেশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকারের গৃহীত ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ নীতির আলোকে গ্রামীণ জনপদে উন্নত নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, একটি বাড়ি একটি খামার, কমিউনিটি ক্লিনিক, ডিজিটাল সেন্টার, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, গ্রামীণ সড়ক যোগাগের উন্নয়ন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, আশ্রয়ণ প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, কৃষির আধুনিকায়ন, কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও যান্ত্রিকীকরণসহ গ্রামীণ জীবনে দিনবদলের যে হাওয়া বইছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তার ছোঁয়া লেগেছে। ফলে সরকারের উন্নয়নের পক্ষে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৮৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদে এবং ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ হাজার ৩১০ প্রার্থী। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য পদে ৯ হাজার ১৬১ প্রার্থী এবং সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন প্রার্থী। একইভাবে তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও প্রার্থীরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। তৃতীয় ধাপে মনোনয়পত্র দাখিল ২ নভেম্বর, বাছাই ৪ নভেম্বর এবং প্রত্যাহার ১১ নভেম্বর। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন জমে উঠেছে। প্রার্থীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন এবং ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি বেশ কিছু পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপের এসব ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৪ হাজার ৪৫৮ জন এবং তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৫ হাজার ৪৭৬ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করেন। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রেরিত রেজুলেশনের তালিকা এবং আবেদনকারীদের প্রদত্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও মাঠ জরিপের ভিত্তিতে এসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে পুনর্বিবেচনার সুযোগ প্রদানের মধ্য দিয়ে বেশ কিছু ইউনিয়নে প্রার্থী পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ।
দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৬ ইউনিয়ন পরিষদে ৪ হাজার ৭৫ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনই ৩১টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী হন এবং পরবর্তীতে ৫৭২ প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ৮১ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৮১টি বাদে বাকি ৭৬৫ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ হাজার ৩১০ প্রার্থী। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৯৩ জন তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ভোটের মাঠে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৯ হাজার ১৬১ প্রার্থী। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ৭৬ জন। একইভাবে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ২৮ হাজার ৭৪৭ জন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ১ হাজার ৬৬৪ জন। এ পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৩০ হাজার ৮৮৩ জন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ২০৩ জন। বাকিদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাতিল হয়েছে।
তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : ১৪ অক্টোবর তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী মনোনয়পত্র দাখিল ২ নভেম্বর, বাছাই ৪ নভেম্বর এবং প্রত্যাহার ১১ নভেম্বর এবং ২৮ নভেম্বর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়েছে- ‘সংগঠনের নীতি-আদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী যে কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি সাংগঠনিক নির্দেশনা প্রদান করছি। অন্যথায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারা অনুযায়ী সকল বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারী আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর সহযোগী সংগঠনসমূহ স্ব-স্ব সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনুরূপ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
লেখক : গবেষণা সহকারী, উত্তরণ