Monday, December 4, 2023
বাড়িSliderআসুন, আমরা শান্তির পথে চলি

আসুন, আমরা শান্তির পথে চলি

সম্পাদকের কথা: শান্তি ও উন্নয়ন অবিভাজ্য। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যেমন, তেমনি প্রতিবেশী দেশগুলোরও অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী। ভারতের সাথে আমাদের রয়েছে দীর্ঘতম সীমান্ত। পাকিস্তানের উত্তরাধিকার হিসেবে আমাদের ছিল অভিন্ন সীমান্তে কিছু জায়গা চিহ্নিত করা এবং ছিটমহল সমস্যা। এমন কী সমুদ্রসীমা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে বিরোধ ছিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে দুই দেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সীমান্ত সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কেবল সমুদ্রসীমার বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তবে দীর্ঘদিন ভারতীয় পার্লামেন্টের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষার কারণে চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে দুই দেশের মধ্যে একটা অবিশ্বাস জিইয়ে ছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। ভারত সরকারও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে। ২০১৫ সালে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হয়। দুই দেশের মধ্যে শান্তির সীমান্ত গড়ে ওঠে। আন্তর্জাতিক আদালতের মধ্যস্থতায় ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ও বাস্তবায়িত হয়। প্রমাণিত হয় পরস্পরের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকলে এবং শান্তিতে উভয় দেশের স্বার্থ থাকায় ভারতের সাথে আমাদের সীমান্ত সমস্যার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে।
পক্ষান্তরে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের কোনো সীমান্ত বিরোধ না থাকা সত্ত্বেও আমাদের সীমান্তে শান্তিভঙ্গের কারণ ঘটেছে। আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের সমুদ্রসীমার বিরোধও শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে। অথচ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ জাতিগত সমস্যার জন্য বাংলাদেশকে প্রচ- সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ-কথা সর্বজনবিদিত যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত নিপীড়ন-নির্যাতনের জন্য লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের শত শত বছরের ভিটেমাটি ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছে। গত কয়েক দশক যাবত এ সমস্যা চললেও, বর্তমান সরকারের প্রথম দশকের শুরুতে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি থেকে উৎখাত হয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছে। গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং বন্দুকের জোরে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের উৎখাত করেছে। ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে মিয়ানমারের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণভাবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়েছে। মিয়ানমার তত্ত্বগতভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ঐকমত্যও প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে একাধিকবার প্রস্তাবও গ্রহণ করেছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। একজন রোহিঙ্গাও স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেনি। কারণ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ জীবনের কোনো পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে। সমস্যা সমাধানে তারা যে আন্তরিক নয়, সেটিই প্রতিভাত হয়েছে।
সম্প্রতি সীমান্ত সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। শোনা যায়, মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী সেদেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশও মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আর এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা দমনের নামে আরাকানে বস্তুত এক যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকাজুড়ে পদাতিক বাহিনী, বিমান বাহিনী প্রভৃতিকে নিয়োগ করে প্রায় সমস্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। তাদের বিমান বাহিনী যেমন বাংলাদেশের সীমান্তরেখা অতিক্রম করেছে, তেমনি আর্টিলারি বাহিনীর নিক্ষিপ্ত মর্টার, গোলাবারুদ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ছে। বাংলাদেশ অস্ত্রের জবাব অস্ত্রে না দিয়ে, সীমান্তে এই সকল তৎপরতা বন্ধের জন্য মিয়ানমারকে বারবার অনুরোধ করেছে। তারপরও মিয়ানমারের এই তৎপরতা বন্ধ হয়নি। মিয়ানমার যা করছে, তা আমাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের শামিল। তা সত্ত্বেও চরম ধৈর্য নিয়ে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারকে এই হঠকারিতা থেকে নিরস্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
মিয়ানমার আমাদের ধৈর্যকে যদি দুর্বলতা মনে করে, তাহলে ভুল করবে। এই উসকানির জবাব দেওয়ার সামরিক সামর্থ্য বাংলাদেশের রয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের উসকানিতে পা দেব না। আমরা মনে করি, শান্তিতে উভয় দেশের স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশ রক্তক্ষয়ের পথে যাবে না। কিন্তু বারবার সীমান্ত সীমা লঙ্ঘন করলে বাংলাদেশ যে ধৈর্যের পথ পরিহার করে সমুচিত জবাব দিতে প্রস্তুত আছে, এই সহজ সত্যটা মিয়ানমারকে বুঝতে হবে। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। আমাদের দুর্বল ভাবার অবকাশ নেই। তবে মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের আহ্বান, অবিলম্বে এই পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার। মিয়ানমার তার অভ্যন্তরীণ সমস্যার দায় বাংলাদেশের ওপর চাপালে পরিস্থিতি কেবল জটিলই হবে। তাই আমাদের আহ্বান : আসুন, আমরা শান্তির পথে চলি। শান্তির কোনো বিকল্প নেই। রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, তাই এই সমস্যার সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য