Wednesday, October 4, 2023
বাড়িSliderআর কোনো আগস্টের পুনরাবৃত্তি নয়

আর কোনো আগস্টের পুনরাবৃত্তি নয়

সম্পাদকের কথা: প্রতিটি আগস্ট আমাদের এই একই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায় : আমরা, বাঙালি জাতি, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল, অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন এবং লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা- যারা মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে বুকের রক্ত ঢেলে দিতে দ্বিধা করিনি, তারা কেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে রক্ষা করতে পারলাম না, এমনকি পৃথিবীর নৃশংসতম হত্যাকা-টি সংঘটিত হওয়ার পর ঢাকার রাজপথে দাঁড়িয়ে একটি প্রতিবাদী স্লোগান পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারলাম না?
’৭১-এ বিজয়ী জাতি ’৭৫-এ ভীরু, কাপুরুষের মতো পরাজিত হলাম। পিতাকে রক্ষা করতে পারিনি, জাতি হিসেবে এ আমাদের সম্মিলিত পাপ! সে পাপের মূল্য তিলতিল করে আমরা দিয়েছিÑ আজও দিচ্ছি।
বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে যে দেশ আশির দশকেই উন্নয়নশীল দেশের সীমানা পেরিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের দিকে পা বাড়াত, আমাদের পাপের ফলে তা হয়নি। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও অর্জনগুলো এতদিনে পূরণ হতো- সুরক্ষিত হতো।
১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বদেশের বুকে পা দিয়ে বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, কবিগুরু তুমি বলেছিলে : “সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি, তোমার এই কথা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দেখ তোমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে।”
মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় এদেশের জনগণ প্রমাণ করল, তারা এখনো পরিপূর্ণ মানুষ হয়নি, খাঁটি বাঙালিও হয়নি। বঙ্গবন্ধু মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, তাকে কোনো বাঙালি মারতে পারবে না। না, তিনি পাপ করেন নি। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ। বাঙালির প্রতি তার ছিল নিখাদ ভালোবাসা। অনেক মূল্য দিয়ে আমরা এখন তা কিছুটা বুঝতে পারছি।
আত্মবিশ্বাস ও সাহস হারানো এই জাতিকে নতুন করে আত্মবিশ্বাস ও সাহস ফিরিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার- বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু-কন্যা আজ বঙ্গবন্ধুকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন স্বমহিমায়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন রূপায়ণে জীবন বাজি রেখে তিনি লড়াই করে চলছেন। একটা একটা করে বিজয় ছিনিয়ে আনছেন। বাংলাদেশ আজ আবার বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু-হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। জঙ্গিদের বুকে ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে। ’৭২-এর সংবিধান পুনরুদ্ধার হয়েছে। খাদ্যে আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশে মাথাপ্রতি আয় প্রায় ২ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হয়েছে। নিজ অর্থায়নে পদ্মসেতু নির্মাণ, বিদ্যুতে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ওঠা এবং মহাকাশ জয়, সমুদ্র জয়Ñ সব কিছুই সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর উন্নয়শীল দেশগুলোর সামনে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা সংকট বিশ্বব্যাপী। এই নিদারুণ মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় জননেত্রী শেখ হাসিনা অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন।
পিতার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করা এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এসব অর্জনের জন্যও তাকে জেল-জুলুম-অত্যাচার ভোগ করতে হয়েছে। ১৯ বার পরাজিত শক্তি তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। এই আগস্ট মাসেই, ২০০৪ সালের ২১ তারিখে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামাত গোষ্ঠী তাকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে হত্যার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা করেছিল। বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আহত হলেও আল্লাহর অসীম কৃপায় অলৌকিকভাবে তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন।
আগস্ট এলে আমরা ওদের সেই প্রতিশোধ স্পৃহার কথা, গণহত্যার কথা স্মরণ করি। ওরা ব্যর্থ হয়েছে বটেই। কিন্তু ষড়যন্ত্র বন্ধ করেনি। আমরা যেন মুহূর্তের জন্যও ভুলে না যাই, সুযোগ পেলেই বিএনপি, জামাত এবং ক্ষমতালোভী বাম-ডান ও বাংলাদেশ-বিরোধী শক্তি আবার মরণ আঘাত হানতে পারে। ওদের টার্গেট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাতাসে নানা গুজব ছড়াচ্ছে। জনৈক অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল সেনাবাহিনীর নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে সামাজিক গণমাধ্যমে সরকার, প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন, রাষ্ট্রবিরোধী কথা বলেছেন, যা ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে। কক্সবাজারে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যকে সম্প্রতি হত্যা করা হয়েছে। হত্যার অভিযোগে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন ঐ অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, যাকে সকল ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সে এত সাহস পায় কোথা থেকে, কে তার মদতদাতা? আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি কথাই বলব, ভুলে যাবেন না, এটা ১৯৭৫ বা ২০০৪ সাল না। জনগণ যে কোনো অপচেষ্টা গুঁড়িয়ে দেবে। বাংলাদেশের মানুষ বুক আগলে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষা করবে। তারপরও বলব, সাবধানের মার নেই। সার্বক্ষণিক সতর্কতা নিয়ে আমাদের নেত্রীর নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। আমরা আর কোনো পাপের ভাগী হতে চাই না। আর কোনো আগস্টের পুনরাবৃত্তি নয়।
প্রিয় নেত্রী, তুমি আছ তুমি থাকবে সূর্যের মতো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আলো হাতে দেদীপ্যমান হয়ে।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য