Monday, December 4, 2023

আমাদের শক্তি হলো বাংলার জনগণ

মালপত্র থাকা সত্ত্বেও বাজারে না এনে যারা জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করে, এদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎপাদন এতটুকু কমেনি। সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে আমরা কিনে নিয়ে আসছি।

উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধ হবার এবং সতর্ক থাকার জন্য তার দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, বিএনপি-জামাত নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং মানুষের ভোটের অধিকার যা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত সেই অধিকার যাতে নিশ্চিত থাকে, মানুষ যেন তার ভোট শান্তিপূর্ণভাবে দিতে পারে- সেই পরিবেশ রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৩ নভেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন।
বিএনপি-জামাত নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের পিছনে অনেকের হাত রয়েছে এবং তারা অনেক উপায়ে চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, আমাদের শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ।
নির্বাচনে আসলে ক্ষমতায় যেতে পারবে না ভেবে নেতৃত্ববিহীন দল বিএনপি সারাদেশে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-জ্বালাও-পোড়াও করতে মেতে উঠেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান আগুন সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, জাতীয় চারনেতা জীবন দিয়েছেন, সেই আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ঐ সমস্ত দুষ্কৃতিকারী কয়েকজনের লাফালাফি এদেশে কোনোদিনও নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ওরা জানে (বিএনপি) যে নির্বাচন করলে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। আর ওদের অপকর্মের জন্য মানুষ তো আরও ওদের প্রতি বিমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আসলে সিট পাবে না দেখে নির্বাচন করবে কী না সন্দেহ। আর নির্বাচনে আসলেও আসবে ঐ নমিনেশন বাণিজ্য করার জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা নির্বাচন কাকে নিয়ে করবে? নির্বাচন করলে ওদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? বিএনপির চেয়ারপারসন (খালেদা জিয়া) এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত, মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। সে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আর রাজনীতি করবে না বলে মুচলেখা দিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায়। শোনা যায়, লন্ডনে বসে জুয়া খেলে না-কি কোটি কোটি পাউন্ড কামাই করে। এটাই তার সোর্স অব ইনকাম। আর সেখানে বসে তার করে দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে জ্বালাও-পোড়াওয়ের নির্দেশ দেয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, দলের কার্যনির্বাহী সদস্য এবং হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম কন্যা ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী ও উত্তর সভাপতি শেখ বজলুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি এবং উপ-প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম স্মরণসভাটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহিদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। ইতিহাসের আরেকটি কলঙ্কজনক দিন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসে তাদের বীভৎস চেহারা বেরিয়ে এসেছে। তারা পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করে। একজন নিরীহ পুলিশ সে চাকরি করছে, তার কী অপরাধ ছিল যে তাকে ঐ অমানবিকভাবে হত্যা করল? এটা শুধু একবারই নয়, ২০১৩ সালে, ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচালের জন্য এবং ২০১৫ সালেও একই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। কিন্তু তারপরেও নির্বাচন থামাতে পারে নাই। সরকারপ্রধান বলেন, হাজার হাজার মানুষ হত্যা, মানুষকে আগুনে পোড়ানো, যানবাহন, স্কুল-অফিস-আদালত, রেল, লঞ্চ, গাছ ধ্বংস, রাস্তা কেটে একটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। এই বাংলাদেশের জনগণ যখন প্রতিরোধ করেছে তখনই তারা থেমেছে। তিনি বলেন, আজকেও আমি বলব, এখন সময় এসে গেছে এই অগ্নিসন্ত্রাসী যে যেখানেই থাকুক, যারাই এভাবে আগুন দেবে, জনগণের ওপর অত্যাচার করবে এবং গাড়ি-বাস-ট্রাকসহ যানবাহনে আগুন দেবে, সাথে সাথে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এখানে কারও ওপর নির্ভর করলে হবে না। জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস যারা করে, তাদের ধরে যে হাতে আগুন দেয় ওই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যেমন কুকুর তেমন মুগুর। তা না হলে তাদের শিক্ষা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু এই ঢাকা শহর নয়, প্রত্যেক এলাকায় এই প্রতিরোধ গড়তে হবে। যেখানেই তারা অগ্নিসন্ত্রাস করবে সেই এলাকায় কত বিএনপি বা জামাত আছে খুঁজে বের করতে হবে। সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে হবে। আর মানুষের জানমালের যেন ক্ষতি করতে না পারে তাদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে, এটাই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। কারণ আমাদের আর কিছু নাই, আমাদের কোনো মুরুব্বি নাই। আমাদের আছে বাংলাদেশের জনগণ। সেই জনগণ নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
এদের আবার অনেকে মদদ দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে খুন-সন্ত্রাস ছাড়া এরা অন্য কিছু জানে না। দেশের এত উন্নয়ন ও অর্জনগুলো এরা ধ্বংস করে দিতে চায়।
প্রতি ছয় মাস পরপর প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় তার নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও হিসাব-নিকাশ রাখার উল্লেখ করে দলের আগামীর মনোনয়ন সম্পর্কে দলটির সভাপতি বলেন, ‘যে সিদ্ধান্ত দেব সে সিদ্ধান্ত মানতে হবে।’ ‘দাঁড়ালে মনে হয় জিতেই যাব। আর একটা সিট না পেলে কী হবে, বাকি সিট তো পাবে, সরকার গঠন করবে- এই চিন্তা যেন কারও মাথায় না থাকে। কারণ এই চিন্তাই সর্বনাশ ডেকে আনবে’ সতর্ক করেন তিনি।
দ্রব্যমূল্য নিয়ে নানাভাবে চক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব কিছুর উৎপাদন বেড়েছে তাহলে কীসের অভাব হবে। এগুলোর পেছনে কারা আছে? মজুদ করে রেখে দেবে কিন্তু বাজারে আনবে না। না এনে দাম বাড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে। মালপত্র থাকা সত্ত্বেও বাজারে না এনে যারা জনগণের পকেট কাটার চেষ্টা করে, এদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎপাদন এতটুকু কমেনি। সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে আমরা কিনে নিয়ে আসছি। কিন্তু সেটা মানুষের কাছে পৌঁছাবে না কেন?
৩ নভেম্বরের শহিদ জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনা বলেন, আসুন আজকের দিনে সকলে মিলে এই প্রতিজ্ঞা করি, যে রক্ত দিয়ে লাখো শহিদ আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন সেই লাখো শহিদ এবং আমাদের লাখো নির্যাতিতা মা-বোন, ’৭৫-এ জাতির পিতা ও বঙ্গমাতাসহ সকল শহিদ, দেশের সকল গণ-আন্দোলনের শহিদ এবং অগ্নিসন্ত্রাসে নিহত ও নির্যাতিতদের কথা স্মরণে রেখে শপথ নিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা গ্রহণ করি। যাতে এই দেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ ব্যাহত করতে না পারে।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য