সম্পাদকের কথা
বিদ্যুৎ + শ্রমশক্তি = শিল্পায়ন। কথাটি উচ্চারিত হয়েছিল গত শতাব্দীর তৃতীয় দশকে। তখনও পশ্চাৎপদ রাশিয়ার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে। আখেরে অন্য কারণে রুশ বিপ্লব ব্যর্থ হলেও একটি পরাশক্তি হিসেবে রাশিয়ার উত্থানÑ এ-কথাই সত্য প্রমাণিত করেছে।
গত ২১ মার্চ দক্ষিণের সমুদ্র তীরে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ শিল্প বিপ্লবের প্রধান শর্তটি পূরণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করে প্রথমত বাংলাদেশকে বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন, দ্বিতীয়ত তিনি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছেন।
শিল্পায়ন ও উন্নয়নের প্রধান শর্ত প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের প্রাক্কালে সেই শর্তটি পূরণ করে খুলে দিয়েছে আমাদের দেশের শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হওয়ার অপার সম্ভাবনার স্বর্ণ দুয়ার। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এখন একমাত্র দেশ যে তার বিদ্যুৎ চাহিদার শতভাগ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশে প্রতিটি জনবসতি, প্রতিটি গ্রাম-জনপদ ও ঘরে এখন বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে। এখন প্রয়োজন প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ। সরকার দেশকে ১৯৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার যে অঙ্গীকার করেছে, সে অঙ্গীকার পূরণের অন্যতম হাতিয়ার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। সুতরাং দৃঢ়ভাবে আমরা বলতেই পারি বাংলাদেশ অবশ্যই তার নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছবে।
বাংলাদেশে আরও কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। তার মধ্যে রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অন্যতম। রুশ সাহায্যে নির্মিতব্য এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রয়েছে দুটি ইউনিট। ২০০-৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রয়েছে দুটি ইউনিট। আশা করা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশের সাফল্য বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করবে। বর্তমানে ভারত থেকে যে শতাধিক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে, এর আর প্রয়োজন থাকবে না।
তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাফল্য বা আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনই শেষ কথা নয়। প্রয়োজন এই বিদ্যুৎ দিয়ে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা নির্মাণ এবং কৃষিতে এর বাস্তব প্রয়োগ। সরকার সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এখন দ্রুততার সাথে এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিকল্পিত শিল্প স্থাপন সম্পন্ন করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ। উৎপাদন সক্ষমতাকে বাস্তব কাজে লাগানোই হচ্ছে আমাদের অগ্রাধিকার। সক্ষমতা যেন বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় সে-ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রায়শ অভিযোগ ওঠে যে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা আমাদের দেশে বিনিয়োগের প্রধান অন্তরায়। আমরা বিশ্বাস করি, জননেত্রী শেখ হাসিনা এই আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটাতে সক্ষম হবেন। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও ঔষধ শিল্পে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করেছি। আমরা অবশ্যই পথের সকল অন্তরায় দূর করে শিল্পোন্নত বাংলাদেশ গড়তেও সক্ষম হব। আমাদের রয়েছে আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।