খেলার মাঠে সবসময় চিন্তায় রাখতে হবে আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি; আমরা বিজয়ী জাতি। হারজিত খেলায় আছে এটা ঠিক; কিন্তু মাথায় এটা রাখতে হবে যেÑ আমাকে জিততে হবে।’
আরিফ সোহেল: আমাকে জিততে হবে- প্রধানমন্ত্রীর এই অনুপ্রেরণামূলক ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে নারী ফুটবলাররা করে দেখালেন। ঠিক যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই নারী ফুটবলাররা মনে রেখে কাজের কাজটি করে দেখালেন। সংবর্ধনা প্রদানের সপ্তাহ না পেরুতেই বাংলাদেশের মেয়েরা ৬১ ধাপ এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে নাস্তানাবুদ করে সিরিজ জিতেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘খেলার মাঠে সবসময় চিন্তায় রাখতে হবে আমরা যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি; আমরা বিজয়ী জাতি। হারজিত খেলায় আছে এটা ঠিক; কিন্তু মাথায় এটা রাখতে হবে যেÑ আমাকে জিততে হবে।’
ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ জুলাই আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনা ক্রীড়াবিদদের মাঝে সম্মাননার চেক বিতরণ করেছেন। অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় প্রথম সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন দলের নারী ফুটবলারদের আর্থিক অনুদান এবং সম্মাননা দেওয়া হয়। সেই মেয়েরা বাজিমাত করে প্রধানমন্ত্রীর ইস্পাতদৃঢ় অনুপ্রেরণায় পাখির ডানার চড়ে আলো ছড়িয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খেলাধুলাকে এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দেশে বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদ তৈরিতে বর্তমান সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বন্যাও আমরা মোকাবিলা করব এবং খেলাধুলাও আমাদের চলবে- সবই আমাদের চলবে। এটাই আমাদের জীবন, এটাকেই মেনে নিতে হবে।’ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাফ-২০২১ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের ৩৩ সদস্যসহ মোট ৮৮ ক্রীড়াবিদকে আর্থিক সম্মাননা দেওয়া হয়। এর মধ্যে মুজিববর্ষ ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজ ২০২০-এর ৩৩ জন এবং বঙ্গবন্ধু চার-জাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২২-এর বিজয়ী ২২ খেলোয়াড় রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সাফ-২০২১ চ্যাম্পিয়ন মহিলা অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দা, খেলোয়াড় মনিকা চাকমা এবং প্রধান প্রশিক্ষক গোলাম রব্বানী ছোটন, বাংলাদেশ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ফয়সাল খান এবং জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার হাতে আর্থিক সম্মানীর চেক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি (বাফুফে) কাজী মো. সালাহউদ্দিন এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নজরুল ইসলামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদী পদ্মায় সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসা নানা বাধা সফলভাবে মোকাবিলা করার কথাও উল্লেখ করে বলেন, অনেকটা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েই বলেছি, আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করব। অর্থাৎ বাংলাদেশ যে পারে, কারও কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা চেয়ে নয়, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে, সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। কাজেই আমরা মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলব। কারণ, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি এবং বিজয়ী জাতি হিসেবেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব।
প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতায় সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘খালি ব্যবসা করবেন আর ইন্ডাস্ট্রি করবেন আর পয়সা বানাবেন সেটা তো হয় না। দেশের জন্য তো কিছু করতে হবে। এটাই আমি চাই। এই ম্যাসেজটা আমাদের ব্যবসায়ীদের দিয়ে দেওয়া উচিত। খেলোয়াড়দের যদি ব্যবসায়িরা নিয়োগ দিয়ে রাখে, তাহলে তারা খেলাধুলার দিকে সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ দিতে পারে। জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করার প্রয়োজন হয় না। খেলোয়াড়রা কেবল খেলাধুলাই করবে এবং দেশে যত বেশি ক্লাব হবে, যত বেশি প্রতিযোগিতা হবে, খেলাধুলায় তত বেশি উৎকর্ষতা বাড়বে।’
গ্রামীণ খেলাধুলার প্রচার এবং প্রসারে আরও জোর দেওয়ার জন্য তার সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কান্ট্রি গেমস এসোসিয়েশনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি এ সময় সারাদেশের উপজেলা পর্যায়ে নির্মাণাধীন মিনি স্টেডিয়ামের কাজ আরও দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। যেসব জায়গায় স্টেডিয়াম নির্মাণে জমি পাওয়া যাবে না সেখানে প্রয়োজনে জমি কিনে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের এক সময় বোঝা মনে করা হলে, সুযোগ পেলে তারাও যে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারে, তারা আজকে তা প্রমাণ করেছে। তারা প্রমাণ করেছে যে, তারা দেশের সম্পদ।
উল্লেখ্য, ২৩ জুন র্যাংকিংয়ে ৬১ ধাপ এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে আবারও আলোচনায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। দ্বিতীয় ম্যাচে গোলশূন্য ড্রয়ে ফিফা প্রীতি সিরিজ জয় সাবিনাদের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি নতুন এক পালক। যে সাফল্যের বেশির ভাগই বয়সভিত্তিক পর্যায়ে, জাতীয় দলেও সেই ধারা বয়ে নিতে প্রয়োজন সারাদেশে খেলা ছড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু নারী ফুটবলের ভিতটা ভীষণ নড়বড়ে আজও। পাইপলাইনে যথেষ্ট ফুটবলার নেই। বাংলাদেশের মেয়েদের এই সাহসী সিরিজ জয়; নারী ফুটবলকে আরও এগিয়ে নেবে। ফিফা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ দুটি অনুষ্ঠিত হয়েছে কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তাফা কামাল স্টেডিয়ামে। আগের ম্যাচে মালয়েশিয়া নারী দলকে ৬ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ নারী দল। দ্বিতীয় ম্যাচে পুরোপুরি রক্ষণাত্মক খেলে বাংলাদেশকে রুখে দিয়েছে। ম্যাচে একচেটিয়া প্রাধান্য ছিল বাংলাদেশের। একের পর এক আক্রমণ হেনে প্রতিপক্ষকে রেখেছে তটস্থ। কিন্তু কাক্সিক্ষত গোল আসেনি। এমন কী ১৭টি কর্নারও বিফলে গেছে।
লেখক : সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, উত্তরণ