প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি বিএনপি-জামাত জোটের অতীতের সকল অপকর্ম দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। আওয়ামী লীগ প্রতিবার ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে, কখনও পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে বলেই দেশ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছেÑ দেশের এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে চায়। আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আওয়ামী লীগ কোথায় ব্যর্থ হয়েছে? সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানই নির্বাচনে প্রহসন ও ভোট কারচুপির কালচার শুরু করে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনও ভোটে পেছনে ছিল না। ভোটপ্রাপ্তির পারসেন্টেজও বেশি ছিল। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ভোটে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এই ষড়যন্ত্রের মধ্যেও আওয়ামী লীগ এগিয়েছে।
গত ৭ মে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সভাপতির সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা সবাই ক্ষমতায় থাকতে মানুষকে হত্যা করেছে, অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়ারা শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
আজকে নির্বাচনে যতটুকু উন্নতি হয়েছে সেটা আওয়ামী লীগই করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদেরই দাবি ছিল, স্বচ্ছ ব্যালট বক্স, ছবিসহ ভোটার তালিকা এবং এখনকার ইভিএম। অর্থাৎ মানুষ শান্তিতে ভোট দেবে সঙ্গে সঙ্গে ভোটের রেজাল্ট পাবে। যাতে মানুষের ভোটের অধিকারটা বলবত থাকবে। তিনি বলেন, মানুষ যদি আমাদের ভোট দিতে না চায়, দেবে না। আমরা আসব না ক্ষমতায়। কিন্তু জনগণের ভোট প্রয়োগ সত্ত্বেও অতীতে বারবার চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, এই সংগঠন মাটি ও মানুষের সংগঠন এবং এই সংগঠন মাটি ও মানুষের জন্যই কাজ করে তা আজকে প্রমাণিত।
বিএনপির নেতৃত্ব কোথায় এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির নেতৃত্ব কোথায়? দলটির প্রধান দুজনই তো (খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান) সাজাপ্রাপ্ত। এদের সঙ্গে কিছু ডান ও অতি বাম এসে যুক্ত হয়েছে। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়া এদের ক্ষমতা ছিল ক্যান্টনমেন্টে। এরা পাকিস্তানি স্টাইলে মিলিটারি ডিক্টেটরশিপ চালু করেছিল। কিন্তু আমরা পরাধীনদের অনুসরণ করব না। নিজস্বভাবে দেশের উন্নয়ন করব, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলব।
দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর পর ৭ মে সাড়ে ৫টায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ বৈঠক শুরু হয়। সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের শুরুতেই তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর চিকিৎসার জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাধা উপেক্ষা করেই ওই বছরের ৭ মে দেশে ফিরেছিলেন তিনি। সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিরোধিতার নামে দেশের বিরোধিতাকারীদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, অনেকেই আছেন যারা অতিজ্ঞানী হলেও কম বোঝেন। তারা তাকিয়ে থাকেন কখন তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে। বসে থাকেন কখন বিদেশ থেকে সিগন্যাল আসবে। বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করলেই বিদেশ থেকে যেন এসে তাদের ক্ষমতায় বসাবে! কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত, এখনকার বাংলাদেশ সেটা নয়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
এবারের ঈদ যাত্রায় স্বস্তির কথা উল্লেখ করে এজন্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ এবার ঈদে নির্বিঘেœ বাড়ি গেছে ও ফিরছে। মানুষ গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঈদের উৎসব করেছে, এতে গ্রামে অর্থ সরবরাহ বাড়ে। মানুষ ঈদে বাড়ি যায়। কিন্তু বিশ্বে অনেক দেশে এটা কমে গেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত হয়েছে। কারণ আমরা তৃণমূল থেকে উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। গ্রামের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছি।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় এগিয়ে এসেছে জানিয়ে এখন থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করতে দলের নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের আগেই কিছু কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিএনপি-জামাতের অতীত ও বর্তমানের কুকর্মগুলো মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিয়মিত দলের সম্মেলন করি। জাতীয় সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। সম্মেলনের আগে আমরা কিছু কাজ করি। দলের ঘোষণাপত্রের অনেক কিছু আমরা বাস্তবায়ন করেছি। আমরা চাই দেশের গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকুক, উন্নয়নের ধারাটাও অব্যাহত থাকুক। বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশ সেবার সুযোগ প্রদানের জন্য দেশের মানুষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়েছে, টানা তিনবার তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, আমরা চাই এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত থাকুক।
দলকে তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিএনপি-জামাতের অতীতের কুকর্মগুলো মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান আর্মি রুলস এবং সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে এদেশে ভোট কারচুপির কালচারটা শুরু করে। আর এভাবেই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে সব সময় ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ভোটের পার্সেন্টেজের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কখনও পেছনে ছিল না। কিন্তু বারবার ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে পেছনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আর শক্ররা কখনও ক্ষতি করতে পারে না যদি না ঘরের শক্র বিভীষণ না পায়, এটা হলো বাস্তবতা। আর আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এটা সব সময়ই দেখা গেছে। যেটা সব থেকে দুর্ভাগ্যের বিষয় ও দুঃখজনক।’
গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঠিকানা প্রদানের তার অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে একটা মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। ঈদের আগে আমরা ৩৩ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে ঘর করে দিয়েছি, জুলাই মাসে আরও ৩৪ হাজার মানুষকে ঘর দেব। বাকি থাকবে ৪৫ হাজার পরিবার, তা দিয়ে দিলে দেশে ভূমিহীন কেউ থাকবে না। দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন বা ঠিকানাহীন থাকবে না, আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।