০৯ আগস্ট : জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার মাত্র ছয় দিন আগে ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট ডাচ্-রয়্যাল বহুজাতিক তেল গ্যাস কোম্পানি শেল অয়েল-এর কাছ থেকে ৪৫ লাখ পাউন্ড স্টার্লিংয়ে (তখনকার ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা) ৫টি গ্যাসক্ষেত্র কিনে রাখেন। গ্যাসক্ষেত্রগুলো হচ্ছেÑ তিতাস, রশিদপুর, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ এবং কৈলাসটিলা। এই গ্যাসক্ষেত্রগুলো পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার বড় নির্ভরস্থল হয়ে ওঠে। দেশের জ্বালানি খাতে এই সিদ্ধান্তকে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বর্তমান সরকার (আওয়ামী লীগ) ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট এক পরিপত্রে ৯ আগস্টকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
০৯ আগস্ট : আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস
International Day of the World’s Indigenous Peoples, বাংলাদেশে যা ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। প্রতিবছর ৯ আগস্ট পালন করা হয় এই দিবস। আদিবাসীদের অধিকার, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সুরক্ষা প্রদানের স্বার্থে দিবসটি পালন করার জন্য উদ্যোগ নেয় জাতিসংঘ। বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় দিবসটি।
১২ আগস্ট : আন্তর্জাতিক যুব দিবস
যে কোনো দেশের যুব সমাজ সেই দেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। গ্রেটা থানবার্গ থেকে শুরু করে মালালা ইউসুফজাই, এই যুব সমাজ বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং এমন কী বর্তমান মহামারির মতো বিভিন্ন ঘটনায় পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। অপার সম্ভাবনাময় দেশে দেশে বিদ্যমান যুবশক্তিকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার প্রয়াসে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে আন্তর্জাতিক যুববর্ষ ঘোষণা করে। সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে যুব সমাজের এই অবদানের জন্য প্রতিবছর ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়।
১৫ আগস্ট : জাতীয় শোক দিবস
শোকাবহ ১৫ আগস্ট। বাঙালি জাতির শোকের দিন। ইতিহাসের কলঙ্কিত কালো দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল এ কলঙ্কিত অধ্যায়। ৪৬ বছর আগে এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ কুচক্রী মহল।
সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এ জঘন্যতম হত্যাকা- থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও মেয়ে বেবি, সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনর্বাসিত হতে থাকে। তারা এ দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানা পাঁয়তারা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল মোশতাক সরকার। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়। বিচার শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি সেই কলঙ্ক থেকে জাতির মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওই দিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর অনেক পরে খুনি ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদকে ২০২০-এ ফাঁসি দেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকায় আরও কয়েকজন খুনির সাজা এখনও কার্যকর করা যায়নি।
১৪ ও ১৫ আগস্ট : ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টি
২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের মুক্তি মেলে ১৯৪৭ সালে। ওই বছর ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত ভাগের মাধ্যমে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি দেশের জন্ম হয়। তখন থেকে ১৫ আগস্টকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস এবং ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
– ফারুক শাহ