Thursday, November 30, 2023
বাড়িSliderআওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে

আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে

উত্তরণ প্রতিবেদন: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার বিশাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আধুনিক উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একপর্যায়ের দল হয় কীভাবে এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে অনেক কথা বলেন, দুই দল। আবার কেউ কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা করেন। বিএনপি নিজেদের দলের গঠনতন্ত্র মানে না, আইন মানে না। বিএনপি জনগণের কল্যাণ চায় না, তারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আর আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল, জনগণের কল্যাণে কাজ করে। তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তুলনা হতে পারে না। বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা হয় কীভাবে? যারা ওই দুই বড় দল বলবেন তারা ভুল করবেন।
কোটালীপাড়ার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গারহাট এলাকায় তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ এদেশের মাটি ও মানুষের সংগঠন। এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দল গড়ে উঠেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপি, জাতীয় পার্টি বা জামাতসহ অন্য যে দলগুলো আছে এরা কারা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়া সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করেছে। উচ্চ আদাতের রায় আছে। ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল তৈরি করেছিল, সেই দল হচ্ছে বিএনপি। এরা মানুষের কল্যাণও চায় না, মঙ্গলও চায় না। এরা মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। কাজেই এদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা চলে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং স্বাধীনতার সুফল আজকে বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে, ইনশা আল্লাহ্ পৌঁছাবে।
এর আগে সমাবেশস্থলে প্রায় চার বছর পর নিজের নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন এবং অন্য ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে কোটালীপাড়ায় যান। জনসভায় ভাষণ প্রদান শেষে প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন। পরে তিনি নিজ বাড়িতে কিছু সময় বিশ্রাম শেষে সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া জনসভায় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে বলেন, একটি কথা বলতে চাই, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ সিটের মধ্যে মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। আর আওয়ামী লীগ মহাজোট করেছিল, তারা পেয়েছিল বাকি সবগুলো আসন। তাহলে এই দুই দল একপর্যায়ের হয় কীভাবে? তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, ৬৩ জেলার ৫০০ জায়গায় একযোগে বোমা হামলা, দেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওরা মানুষকে কিছু দেয়নি; বরং মানুষের অর্থকড়ি সব লুটপাট করে বিদেশে নিয়ে গেছে। তারা এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা নিজেরা নিজেদের গঠনতন্ত্রও মানে না।
নিজের এই আসন থেকে সাতবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রেই আছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতা হতে পারে না। আর বিএনপি আজকে একজন নেতাও কি পায় না যে অন্তত সাজাপ্রাপ্ত আসামি নন। খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে (তারেক রহমান) দুজনেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। খালেদা জিয়ার ছেলে যাকে নেতা বানিয়েছে সে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।
কোটালিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহম্মদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাবউদ্দিন আজম, গোপালগঞ্জ পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন, কোটালিপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস, আওয়ামী লীগ নেতা এসএম হুমায়ুন কবীর, মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোটালিপাড়া পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরা প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন কোটালিপাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ।
জনসভায় উপস্থিত লাখ লাখ মানুষের উদ্দেশ্যে আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের মাঝেই তো আমি ফিরে পাই আমার হারানো বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের এই স্নেহ-ভালোবাসাই আমার একমাত্র শক্তি। আপনাদের জন্য সবসময় দোয়া করি, আপনারাও দোয়া করবেন। এ বাংলাদেশকে যেন উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে যেন গড়ে তুলতে পারি। বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে, ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের সুফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া আসতে ২২ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত স্টিমারে বা লঞ্চে। এখন মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আমরা এখানে পৌঁছে গেছি। কোটালীপাড়াবাসীকে আগে শুধু পানি, খাল-বিল, বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজকে এখানে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ করে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থিক সুবিধা করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য করতে আসিনি, জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। তাই কেউ যখন মিথ্যা অপবাদ দেয় সেই অপবাদ নিতে আমি রাজি না। তিনি বলেন, আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি বলেই এত দ্রুত এই গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়ায় আসতে পারছি। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনৌকা মার্কায় ভোট দিন
পরবর্তী নিবন্ধতোমার পথ কোথা হে পথিক
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য