Monday, December 4, 2023
বাড়িSliderআওয়ামী লীগ ও পদ্মা সেতু

আওয়ামী লীগ ও পদ্মা সেতু

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু নানারকম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র বাংলাদেশের উন্নয়নকে মেনে নিতে পারেনি। উন্নয়নের গতিধারা স্তব্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

প্রফেসর আবদুল খালেক: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে আওয়ামী লীগের জন্ম। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে নানারকম প্রতিকূলতার সাথে কঠোর সংগ্রামের মাধ্যমে হিমালয়ের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। পাকিস্তান সরকার যুদ্ধে পরাজয়কে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। পালিয়ে যাওয়ার সময় অর্থনৈতিকভাবে দেশটিকে প্রায় পঙ্গু করে রেখে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গরতœ শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। করোনাকালীন দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশের উন্নয়ন থেমে থাকেনি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গরতœ শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। কাজেই তার শাসনকালকে ইতিহাস আওয়ামী লীগের শাসনকাল বলেই বিবেচনা করবে। শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী শাসনকালে দেশের যে উন্নয়ন ঘটেছে, তা অতুলনীয়। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ আওয়ামী লীগ সরকারের এক অসাধারণ অর্জন বলেই বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বঙ্গরতœ শেখ হাসিনা এবং পদ্মা সেতু একে অপরের পরিপূরক, কাউকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দেওয়া লাখ লাখ প্রাণের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণে নিষ্পেষিত বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে তার নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সমগ্র বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তিনি, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সেই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে।
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু নানারকম পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র বাংলাদেশের উন্নয়নকে মেনে নিতে পারেনি। উন্নয়নের গতিধারা স্তব্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন বলে তারা বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে শুরু হয় সামরিক শাসন। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে দ্বিতীয় পাকিস্তানে রূপান্তরিত করেন। ১৯৭২ সালের সংবিধানকে পাল্টে ফেলা হয়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং মানুষের দুর্গতি দেখে ভারতে নির্বাসিত থাকা বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা বিচলিত হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আধিপত্য থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। দেশে ফিরেই তিনি শুরু করেন সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন। দেশের সর্বস্তরের মানুষ সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানায়, যার ফলে ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়নের নীতিকে এগিয়ে নেওয়ার সাহসী যাত্রা শুরু করেন। দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ২০০১ সালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে আবারও উন্নয়নের যাত্রায় ক্ষণিকের ছন্দপতন ঘটে। তবে সাহসী জাতি আবারও ২০০৮ সালে জাতির পিতার কন্যাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিযাত্রায় নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দিতে ভুল করেনি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন যুগান্তকারী রূপকল্প-২০২১। আর ঐ রূপকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম গ্রহণ। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সকল সূচকে যোগ্যতা অর্জনের কারণে জাতিসংঘ মার্চ ২০১৮ সালে বাংলাদেশকে প্রাথমিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এ-ধারা বজায় থাকলে বাংলাদেশ ২০২৪ সালে চূড়ান্ত স্বীকৃতি লাভ করবে।

২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যখন দেশের মানুষকে দিনবদলের পালার কথা বলা হয়েছিল, অথবা ২০১৩ সালের নির্বাচনের সময় যখন ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তখন এসব বিষয় নিয়ে দেশের মানুষের মনে নানারকম সংশয় কাজ করেছিল; কিন্তু এখন সে সংশয় অনেকটাই কেটে গেছে। দিনবদলের পালা বা ডিজিটাল বাংলাদেশ সবকিছুর মূল কথা ছিল দেশের সার্বিক উন্নয়ন। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। ১৯৭১ সালে যে দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ নানারকম খাদ্য সংকটে ভুগেছে, সেই দেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৮ কোটি। কিন্তু কোনোরকম খাদ্য সংকট নেই দেশে। দেশের কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে বলেই দেশ আজ খাদ্য সংকটমুক্ত। শুধু কৃষি খাত নয়Ñ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মৎস্য, পোশাক শিল্প, পর্যটন শিল্প, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগসহ নানা খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ সমগ্র বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে সড়ক পথ, রেলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশকে মহা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা বলতে গেলেই উঠে আসে যমুনা সেতু এবং পদ্মা সেতুর কথা।

বাংলাদেশের যমুনা নদী এবং পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা যাবে, পাকিস্তান আমলে তা কখনও ভাবা যায়নি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের শাসনভার হাতে নেওয়ার পরপরই সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইলে যমুনা সেতুর বিষয়টি পরিকল্পনায় এসে যায়। শুধু যমুনা নদীতে নয়, পদ্মা নদীতেও যাতে সেতু নির্মাণ করা যায়, সে-লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সবাইকে কাজ করতে বলেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ফলে দেশের অগ্রযাত্রা থেমে যায়। বাংলাদেশ অনেকটা মিনি পাকিস্তানে রূপান্তরিত হয়।
তবে দেশের মুক্তিকামী মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী সামরিক ব্যক্তিদের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হতে দেয়নি। ১৯৯৬ সালে ভোটবিপ্লবের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু-কন্যা বঙ্গরতœ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পরপরই নতুন করে দেশের উন্নয়ন যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের মধ্যেই যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ এবং চালু করা সম্ভব হয়। পদ্মা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের বিষয়টি শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় ছিল; কিন্তু ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় নতুন এক ষড়যন্ত্রের শিকার হন বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচনে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় বিএনপি-জামাত জোট সরকার। এই সরকার পাকিস্তানের পুতুল সরকার হিসেবে দেশ শাসন করতে থাকে। এতে দেশের অগ্রযাত্রা আবার থেমে যায়। দেশে পুনরায় সামরিক ব্যক্তিদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রাধান্য লাভ করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুরু হয় আন্দোলন। তার আন্দোলনের কাছে শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে হয় স্বৈরশাসনকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে পুনরায় শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিয়ে আসে। দেশ পুনরায় উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে থাকে। শেখ হাসিনা দেশের অন্যান্য উন্নয়নের পাশাপাশি পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পাল্টে দেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কীর্তিনাশা পদ্মায় সেতু নির্মাণের উচ্চাভিলাষী উদ্যোগ গ্রহণ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ার পালা। ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া প্রান্তে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তখনকার সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তবে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলে থমকে যায় পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের আশা জাগানিয়া উদ্যোগ। বিপরীতে চলতে থাকে স্থান নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক। সেই বিতর্ক থেকে প্রতীয়মান হয়, জামাত-বিএনপি জোট সরকার চায়নি শেখ হাসিনার হাতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত পদ্মা সেতুটি বাস্তবায়িত হোক। জামাত-বিএনপি জোট সরকার কৌশলে পদ্মা সেতুর বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি অগ্রাধিকার পায়। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র ছয় মাসের মাথায় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায় পদ্মা সেতুর নকশা। পদ্মা বহুমুখী সেতুর নকশা এইসিওএম (AECOM)-এর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে গঠিত হয় একটি দল। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। উক্ত প্যানেল সেতুর নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, নকশা পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করে।
পদ্মা সেতুর প্রাথমিক নকশায় কোনো রেলপথ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে রেলপথ সংযোজনের নির্দেশ দেন ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে। তার নির্দেশে সেতুর ডিজাইন বা নকশা পরিবর্তন করা হয়। উপরে মোটরযান সড়ক এবং নিচে রেলপথ অর্থাৎ দোতলা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উপরে চার-লেনের মোটরযান সড়ক এবং নিচে এক-লেনের রেলপথের ব্যবস্থা রেখে নকশা তৈরি হয়।
পদ্মা সেতুতে সড়ক ও রেলপথ ছাড়া আরও আছে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অপটিক্যাল ফাইবার লাইন পরিবহন সুবিধা। সেতুর জন্য ৯১৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পদ্মার দুই পারের জমির মালিক ও জনগণের অবদান অপরিসীম। সবাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ হবে। সে-লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের ১২০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা চুক্তি সই হয়। ১৮ মে জাইকার সঙ্গে, ২৪ মে আইডিবি’র সঙ্গে এবং ৬ জুন এডিবি’র সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জনসাধারণ যখন পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, আকস্মিকভাবে অভিযোগ ওঠে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অভিযোগটি উত্থাপিত হয়। অর্থাৎ ২০১১ সালের জুন মাসে এডিবি’র সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার চার মাসের মাথায় অভিযোগটি পাওয়া যায়। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগে বলা হয়, ‘কানাডার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এসএনসি লাভালিন (SNC Lavalin) কাজ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের মন্ত্রী, সেতু সচিব, সেতু প্রকল্পের পিডি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়েছে। তারা জোর দাবি করে তাদের কাছে দুর্নীতির যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে। বিশ্বব্যাংক থেকে দাবি করা হয় কথিত দুর্নীতির সাথে যারা সম্পৃক্ত রয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেটি না করলে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল হবে। বিশ্বব্যাংক শুধু শাস্তির দাবি তুলে বসে থাকেনি, বাংলাদেশ সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করল, তা সরেজমিনে দেখার জন্য একটি প্রতিনিধি দলও পাঠায় বাংলাদেশে।
বিশ্বব্যাংকের অব্যাহত চাপ, মিডিয়ার অপপ্রচার এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও কথিত সুশীল সমাজের কিছু লোকের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এমন আবহ তৈরি করা হয়েছিল যে, দেশের কিছু মানুষের মধ্যে নানারকম বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছিল। মানুষের বিভ্রান্তি দূর করা শেখ হাসিনা সরকার অনেকটা নৈতিক দায়িত্ব বলেই মনে করে। সরকার কোনো পদক্ষেপ না নিলে মনে হতে পারে সরকার দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করতে চাচ্ছে। বাধ্য হয়ে সরকার এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল, যদিও দুর্নীতির কোনো প্রমাণ সরকারের হাতে ছিল না। তৎকালীন মন্ত্রী আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে বললে তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে বদলি করা হয়। প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান টিম গঠন করে। পরে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলার ফলে সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেফতারও করা হয় এবং তাকে বেশ কিছুদিন কারাগারে আটক রাখা হয়।
বাংলাদেশ সরকার এতসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বিশ্বব্যাংক এসব ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হয়নি। বরং বিশ্বব্যাংক ২০১২ সালের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে ঋণচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়। বিশ্বব্যাংককে অনুসরণ করে জাইকা, এডিবি ও আইডিবি ঋণচুক্তি বাতিল করে। বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা ছিল ২০১১ সালের প্রথম দিকে সেতুর কাজ শুরু করে ২০১৩ সালের দিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করে ফেলবে; কিন্তু বিশ্বব্যাংক থেকে একতরফাভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মারাত্মক রকমের বিঘœ ঘটে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের এত বড় অন্যায়কে মেনে নিতে পারেননি। তার আত্মবিশ্বাস ছিল, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনোরকম দুর্নীতি হয়নি। বিদেশি ঋণ না নিয়েও তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে সমর্থ হবেন। বিশ্বব্যাংককে খানিকটা চ্যালেঞ্জ করে শেখ হাসিনা দেশবাসীকে জানিয়ে দেন ‘পদ্মা সেতু অবশ্যই হবে এবং তা হবে নিজস্ব অর্থায়নেই। অন্যের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা এনে পদ্মা সেতু করব না। আমাদের জনগণের টাকায়ই পদ্মা সেতু নির্মিত হবে।’ এরপর শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণের নতুন ধারার পরিকল্পনা। দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের সাথে পরামর্শ করে নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, বর্ধিত দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে আবার নতুন বাজেট তৈরি করতে হয়, এতে খানিকটা সময় লাগে। চীন এই পর্যায়ে BOT (Build Own Transfer) ভিত্তিতে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সে-পথে যায়নি। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে পদ্মা সেতু নির্মিত হবে বলে সরকার টেন্ডার আহ্বান করে। খোলা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড পদ্মা সেতুর কাজ পায়। ১৭ জুন ২০১৪-তে সেতু কর্তৃপক্ষ ‘চায়না ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি’কে সেতু নির্মাণের জন্য ঠিকাদার হিসেবে নির্বাচন করে। তারা ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে।
৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ও ১৮.১০ মিটার প্রস্থের পদ্মা বহুমুখী সেতু বাংলাদেশ তথা পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর ওপর সবচেয়ে বৃহৎ সেতু। সেতুটি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এবং শরীয়তপুরের জাজিরাকে সংযুক্ত করেছে। পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট। মোট পিলার ৪২টি। প্রতিটি পিলারের জন্য পাইলিং ৬টি। পাইলিংয়ের সংখ্যা ২৬৪। পাইলিং গভীরতা ৩৮৩ ফুট। প্রথম দিকে পদ্মা নদীর তলদেশের মাটি খুঁজে না পাওয়ার জন্য বেগ পেতে হয় সেতু নির্মাণকারী প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের। তলদেশে স্বাভাবিক মাটি পাওয়া যায়নি। সেতুর পাইলিং কাজ শুরুর পরে সমস্যা দেখা দেয়। প্রকৌশলীরা নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটির বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাঁথার চেষ্টা করে। স্ক্রিন গ্রাউটিং নামের এ পদ্ধতিতে বসানো হয় পদ্মা সেতুর পিলার। এ-রকম পদ্ধতি ব্যবহারের নমুনা বিশ্বে তেমন একটা নেই। এ প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে পাইপের ছিদ্র দিয়ে কেমিক্যাল নদীর তলদেশে পাঠিয়ে মাটির শক্তিমত্তা বাড়ানো হয়েছে। তারপর ওই মাটিতে গেঁথে দেওয়া হয়েছে পিলার। এমন পদ্ধতির প্রয়োগ বাংলাদেশে এই প্রথম। এ পদ্ধতিতে পাইলের সঙ্গে স্টিলের ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেওয়া হয়। পাইপের ভেতর দিয়ে এক ধরনের কেমিক্যাল পাঠিয়ে দেওয়া হয় নদীর তলদেশের মাটিতে। কেমিক্যালের প্রভাবে তখন তলদেশের সেই মাটি শক্ত রূপ ধারণ করে। একপর্যায়ে সেই মাটি পাইলের লোড বহনে সক্ষম হয়ে ওঠে। তখন আর পাইল বসাতে কোনো বাধা থাকে না। আমরা এ পর্যায়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়ক্রমের দিকে একটু দৃষ্টিপাত করতে পারি।

পদ্মা নদীর গতি-প্রকৃতির ইতিহাস আমাদের অজানা নয়। পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রমত্তা পদ্মার খামখেয়ালি চরিত্র। একে বাগে আনা ছিল কঠিন কাজ। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান নদীর পর পদ্মাই হলো সবচেয়ে খরস্রোতা ও গভীরতম নদী। নদীতে স্রোতের গতিপথ বারবার পরিবর্তিত হওয়ায় সেতুর
নির্মাণকাজ এবং ডিজাইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হয়।

নানারকম জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা শেষে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করলেও সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি একটি স্মরণীয় ঘটনা। সেতুর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর। পদ্মা নদীকে কীর্তিনাশা বলে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। এই নদীর গতিবিধি বুঝে নিতে ইঞ্জিনিয়ারদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। পিলার তৈরির ক্ষেত্রে যেমন নতুন নতুন প্রযুক্তির কথা ভাবতে হয়েছে, পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর কাজটি আরও জটিল। স্প্যান ঠিকমতো বসাতে না পারলে তাদের সমস্ত পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যাবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পদ্মা সেতুতে পিলারের ওপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে এই স্প্যান বসানো হয়। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ তৃতীয় স্প্যানটি বসানো হয় ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের ওপর। ১৩ মে চতুর্থ স্প্যান বসানো হয় ৪০ ও ৪১ পিলারের ওপর। ২৯ জুন সেতুর পঞ্চম স্প্যান বসানো হয় শরীয়তপুরে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকায়। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে জাজিরা প্রান্তের তীরের দিকের ষষ্ঠ স্প্যান বসে। পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যানটি বসাতে অনেক সময় নিতে হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের ওপর দ্বিতীয় স্প্যানটি বসানো হয়। মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় সপ্তম স্প্যান।
২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ অনেক বেশি গতিশীল হয়। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাজিরা প্রান্তে ৩৬ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় অষ্টম স্প্যান, ২২ মার্চ ৩৫ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় নবম স্প্যান, ১০ এপ্রিল মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় দশম স্প্যান, ২৩ এপ্রিল শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর পিলারের ওপর ১১তম স্প্যান স্থাপন করা হয়। এছাড়া একই বছর ১৭ মে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের মাঝামাঝি স্থানে ২০ ও ২১ নম্বর পিলারের ওপর ১২তম স্প্যান, ২৫ মে ১৪ ও ১৫ নম্বর পিলাপের ওপর ১৩তম স্প্যান ৩-বি বসানো হয়, ২৯ জুন বসানো হয় ১৪তম স্প্যান, ২২ অক্টোবর জাজিরা প্রান্তে ২৪ ও ২৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ১৫তম স্প্যান, ২৭ নভেম্বর মাওয়া প্রান্তে ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের ওপর ১৬তম স্প্যানটি। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর পিলার ২২ ও ২৩-এর ওপর মূল সেতুর ১৭তম স্প্যানটি স্থাপিত হয়। ১১ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১৮তম স্প্যান বসানো হয়। ১৮ ডিসেম্বরে ১৯তম, ৩১ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে ১৮ ও ১৯ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় ২০তম স্প্যান।
এবার আমরা ২০২০ সালের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে পারি। ১৪ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পিলারে বসানো হয় ২১তম স্প্যান, ২৩ জানুয়ারি মাওয়া প্রান্তের ৫ ও ৬ নম্বর পিলারে ২২তম, ২ ফেব্রুয়ারি ২৩ম, ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ২৪তম, ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে ২৫তম, ১০ মার্চ ২৬তম, ২০ এপ্রিল ২৭তম, ২১ এপ্রিল তারিখে ২৮তম, ৪ মে ২৯তম, ৩০ মে ৩০তম, ১০ জুন ৩১তম, ১১ অক্টোবর ৩২তম, ২০ অক্টোবর ৩৩তম, ২৫ অক্টোবর ৩৪তম, ৩১ অক্টোবর ৩৫তম, ৬ নভেম্বরে ৩৬তম, ১৩ নভেম্বর ৩৭তম, ২১ নভেম্বর ৩৮, ২৭ নভেম্বর ৩৯তম, ৪ ডিসেম্বর ৪০তম, ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩তম পিলারের ওপর বসানো হয় ৪১তম স্প্যানটি। এর ফলে পুরো পদ্মা সেতুটি সবার কাছে পুরোটা দৃশ্যমান হয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনা সরকারকে নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। প্রথম চ্যালেঞ্জ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা। পদ্মা সেতু নির্মাণের গোড়াতেই বিশ্বব্যাংক থেকে অভিযোগ ওঠে সেতু নির্মাণ প্রকল্প তৈরিতে মারাত্মক দুর্নীতি হয়েছে। অভিযোগের সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই বিশ্বব্যাংক যখন ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয়, তখন শেখ হাসিনার বুঝতে অসুবিধে হয়নি ‘ষড়যন্ত্রের শিকড় অনেক গভীরে’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যারা চায়নি, পদ্মা সেতু নির্মাণে তারা বাধা দেবে, এটাই স্বাভাবিক। দুর্নীতির অভিযোগ একটি খোঁড়া অজুহাত মাত্র। দুর্নীতির অভিযোগ বিশ্বব্যাংক প্রমাণ করতে পারবে না, এ সম্পর্কে শেখ হাসিনার মনে কোনোরকম সংশয় ছিল না। তবে এ নিয়ে সময় অপচয় করার পক্ষপাতি তিনি ছিলেন না, তিনি বিকল্প পথ খুঁজতে থাকেন। ২০১২ সালের ৮ জুলাই মহান জাতীয় সংসদ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন বাংলাদেশ তার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। সে-সময় পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের প্রাক্কলন ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। ওই টাকা সংগ্রহের রূপরেখাও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতা সংস্থার ঋণচুক্তি বাতিলের কঠোর সমালোচনা করেন। শেখ হাসিনা তাদের বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিই এবং আমরা তা সুদে আসলে পরিশোধ করি। আমরা তাদের কাছে ভিক্ষা চাই না। বাংলাদেশ যাতে দরিদ্র থাকে, সে-লক্ষ্যে তারা নানারকম পরামর্শ দেয়। কৃষিতে ভর্তুকি দিতে নিষেধ করে, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিতে নিষেধ করে। তাদের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করলে দেশ কখনও অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে না, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না।’ তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তা এবং সাহসিকতার সাথে ঘোষণা দেন ‘পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নেই নির্মিত হবে।’ উক্ত সংসদে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি স্থগিত করার পেছনে ড. ইউনূসকে দোষারোপ করেছিলেন। পরবর্তীকালে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ মেলে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাত ১৯ জুলাই ২০১২ সালে ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু : জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির সুযোগ’ শিরোনামে এক সেমিনারের আয়োজন করেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধে ড. আবুল বারাকাত অর্থের বিভিন্ন উৎসের বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন- ‘সরকার চার বছরে ১৪টি উৎস থেকে ৮৯ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পারে। তা দিয়ে ৪টি পদ্মা সেতু তৈরি করা সম্ভব হবে।’ দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদগণের পরামর্শ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু হয়। এ লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে সম্পদ বৃদ্ধির জন্য করারোপ এবং অনেক নতুন খাতকে ভ্যাটের আওতাভুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষভাবে বিবেচনা করতে হয়েছে, যাতে শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত না হয়। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান স্বাভাবিক রাখার বিষয়টিও সরকারকে বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে অর্থ আহরণের এ প্রচেষ্টায় সাফল্য অর্জন করেছে। সর্বস্তরের জনগণের সহায়তা না পেলে একা সরকারের পক্ষে হয়তো এই অর্থ সংগ্রহে বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হতো। আনন্দের কথা তেমনটি ঘটেনি।
পদ্মা নদীর গতি-প্রকৃতির ইতিহাস আমাদের অজানা নয়। পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রমত্তা পদ্মার খামখেয়ালি চরিত্র। একে বাগে আনা ছিল কঠিন কাজ। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান নদীর পর পদ্মাই হলো সবচেয়ে খরস্রোতা ও গভীরতম নদী। নদীতে স্রোতের গতিপথ বারবার পরিবর্তিত হওয়ায় সেতুর নির্মাণকাজ এবং ডিজাইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হয়। স্রোত এবং গভীরতার কারণে ২২টি পিলারে পাইলিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
এ-কথা সবারই জানা আছে, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য দাতা সংস্থা দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে ঋণ প্রত্যাহার করায় পদ্মা সেতু নির্মাণে নানারকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। সেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। এতে পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচের মাত্রা বেড়ে যায়। এই বিলম্বের ফলে আর্থিক ক্ষতি হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে দুটো অমূল্য সম্পদ উপহার দিয়েছেনÑ ১. আত্মমর্যাদা অর্জন, ২. পদ্মা সেতুতে রেলপথ সংযোজন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে পারলে হয়তো ১৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত, তবে সেখানে ট্রেন চলাচলের কোনো সুযোগ থাকত না। শুধু ট্রেন নয়, বিদ্যুৎ, গ্যাস, অপটিক্যাল ফাইবার লাইন যুক্ত করায় পদ্মা সেতু অতি আধুনিক একটি সেতুতে রূপান্তরিত হয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচ ৩০ হাজার ১৯০ কোটি টাকার। এই অতিরিক্ত খরচের জন্য আমরা দায়ী করতে পারি বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য দাতা সংস্থাকে, যারা দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে পদ্মা সেতু নির্মাণের পথ চিরতরে রুদ্ধ করে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শী পদক্ষেপের ফলে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংক এবং দাতা সংস্থাগুলো পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের ঋণের টাকা বন্ধ করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে জব্দ করতে চেয়েছিল, দেশের মানুষের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিল; কিন্তু শেখ হাসিনা দেশের টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বব্যাংক এবং দাতা সংস্থাগুলোকে জব্দ করে দিয়েছেন। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির বিষয়ে কানাডার আদালতে একটি মামলা হয়েছিল। কানাডার আদালত সূত্রে জানা গেছে, এক নম্বর তথ্যদাতা পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যে তথ্য দিয়েছেন, তা মূলত ‘গুজবের’ ওপর ভিত্তি করে। একটি দলিলের উদ্ধৃতি দিয়ে আদালত বলেছেন, ওই দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘বাছাই করা ৫টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব মূল্যায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতির গুজবের কথা আমরা শুনেছি।’ পাঁচ বছরের বেশি সময়ের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত স্পষ্ট রায় দিয়েছেন, ‘এই মামলায় যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা অনুমানভিত্তিক, গালগল্প এবং গুজবের বেশি কিছু নয়।’ কানাডার আদালতের এই রায়ের ফলে শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয়, সারাবিশ্বের বিবেকবান মানুষদের কাছে বিশ্বব্যাংক এবং দাতা সংস্থাগুলো মিথ্যাবাদী ও ষড়যন্ত্রকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, দেশপ্রেম এবং সাহসিকতার কাছে বিশ্বব্যাংক এবং দাতা সংস্থাগুলো লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়েছে।
শেখ হাসিনার সাহসিকতা নিয়ে কোনো এক অনুষ্ঠানে বিদেশি রাষ্ট্রনায়করা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘What is the magic of your leadership in achieving such a high stack of economic growth index?’ শেখ হাসিনার উত্তর- ‘It is the people of Bangladesh, I know them, I trust them, I know their demands, I know what they want to do. They also know me, my vision and they have trust on me.
বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে ২০ হাজার কর্মী পদ্মা সেতুতে কাজ করেছে। এরপর কাজের চাপ কমে যাওয়ায় কর্মীর সংখ্যাও কমতে থাকে। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মাসে সাড়ে ৪ হাজার কর্মী কাজে লিপ্ত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ হাজার কর্মীই বাংলাদেশের। বাকি ৫০০ কর্মী ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের ২২টি দেশের নাগরিক। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, কলম্বিয়া, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নেপাল এবং আফ্রিকার দেশ তানজেনিয়া। বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে চীন দেশের। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ যাতে ভ-ুল হয়ে যায় সে-লক্ষ্যে শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এবং বিএনপি সমর্থক বুদ্ধিজীবীরাও অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার বাণীবদ্ধ বক্তৃতায় স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারবে না, করলেও তা জোড়াতালি দিয়ে করবে, ওটি টিকবে না, অল্পদিনের মধ্যেই তা ভেঙে যাবে।’ পদ্মা সেতুর অবকাঠামো যে অত্যন্ত মজবুত এবং পদ্মা সেতু যে দীর্ঘস্থায়ী হবে, এ ব্যাপারে বিশ্বমানের প্রকৌশলীদের মনে কোনোরকম সংশয় নেই। বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য যে কতটা হাস্যকর, অল্পদিনের মধ্যেই তা প্রমাণিত হবে।
সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২৫ জুন ২০২২ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গরত্ন শেখ হাসিনা সড়কপথে চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুর পথ খুলে দেবেন বা উদ্বোধন করবেন। কাজেই বলা যায়, ২৫ জুন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষের জীবনে নতুন সূর্যোদয় ঘটবে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে এক বিশাল জনগোষ্ঠী। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কৃষকের উৎপাদিত পণ্য আর খামারিদের দুধ পৌঁছে যাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পদ্মা সেতু রাখবে এক বিরাট ভূমিকা। তাছাড়া দেশে দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দরটি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পদ্মা সেতুটি হবে এশিয়ান হাইওয়ে A-h-1 এর অংশ। এই সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। সরকার কর্তৃক ঘোষিত ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে সার্বিক জিডিপি’র সাথে আরও ১.২৩ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি পাবে বলে অর্থনীতিবিদগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
দেশের সর্বস্তরের সকল মানুষের পদ্মা সেতু নির্মাণের আকাক্সক্ষা আজ পূর্ণ হয়েছে। পদ্মা সেতুর স্বপ্নটা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। আর তা বাস্তবায়ন করলেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গরতœ শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু শুধু একটি অবকাঠামো মাত্র নয়, এটি দেশের সক্ষমতার প্রতীক, আত্মমর্যাদার প্রতীক। বিশ্বের মহাশক্তিধর দেশসমূহ এবং তাদের অনুচরবৃন্দ যখন পদ্মা সেতু নির্মাণে নানারকম ষড়যন্ত্র এবং প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে থাকে, সেই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলিষ্ঠকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘বাঙালি জাতি কারও কাছে কখনও মাথা নত করেনি, করবেও না।’ শেখ হাসিনা আরও বলেছিলেন, ‘আমরা পারি, আমরা তা দেখাব।’ দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে শেখ হাসিনা আজ বিশ্ববাসীকে তা দেখিয়ে দিয়েছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের ফলশ্রুতিতে বিশ্বব্যাংক আজ বাংলাদেশের কাছে নতজানু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার ও গৌরবের প্রতীক। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাঙালির গর্বের আরেকটা নতুন সংযোজন পদ্মা সেতু। আমরা জানি পদ্মা সেতুর রূপকার আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গরত্ন শেখ হাসিনা। কাজেই পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ গর্ব করতেই পারে।

লেখক : সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং উপাচার্য, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; সাবেক উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগের ৭৩ বছর
পরবর্তী নিবন্ধ­­­দিনপঞ্জি : মে ২০২২
আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য