Wednesday, October 4, 2023

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নারী

অধ্যাপক ড. জেবউননেছা

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘নারী’ কবিতায় লিখেছিলেন, “জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান/মাতা, ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান/কোন রণে কত খুন দিল নর, লেখা আছে ইতিহাসে/কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে।” সভ্যতার শুরু থেকে নারী তার ত্যাগ-তিতিক্ষা দিয়ে গৃহস্থালী কাজকর্ম থেকে শুরু করে চাষাবাদ, যুদ্ধ, রাজনীতিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। শত শত নারী বিভিন্ন আন্দোলনে, শিক্ষা সংস্কারে ভূমিকা রেখেছে। কারও ইতিহাস লেখা হয়েছে, কারওটা নয়। ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, ব্রিটিশ ভারতে নারীরা ছিল ভীষণ বিদ্যোৎসাহী এবং সাহসী। নারীরা প্রথমে বিভিন্ন আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে এক সময় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন শুরু করে।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামে রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে বেশিরভাগ ক্ষমতা চলে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে। পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের বেশ কিছু নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংকুচিত করার উদ্যোগ পূর্ব বাংলার কেউই ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারিনি।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আন্দোলনকারী নারীদের মধ্যে আনোয়ারা খাতুনের ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। যিনি ৪০ সদস্যবিশিষ্ট রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একমাত্র মহিলা সদস্য ছিলেন। তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির বর্বরতার খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকার অভয় দাস লেনের এক সভায় বেগম সুফিয়া কামাল, নূরজাহান মুরশিদ, দৌলতুন্নেসা খাতুনসহ আরও অনেকের নেতৃত্বে মিছিলে গুলি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠিত করার বিষয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে মুসলিমদের সংরক্ষিত আসনে সেলিনা বানু, শামসুন্নাহার মাহমুদ, বদরুন্নেসা আহমাদ, দৌলতুননেসা খাতুন, রাজিয়া বানু, তফতুন্নেসা, মেহেরুনন্নেসা খাতুন এবং নেলী সেনগুপ্তাসহ ১৪ নারী আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে তিনজন ছিলেন সংখ্যালঘু প্রতিনিধি। শিক্ষা আন্দোলনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ‘ইস্ট পাকিস্তান স্টুডেন্টস ফোরাম’-এর ব্যানারে ইডেন গার্লস স্কুল সক্রিয় ছিল। ১৯৬৪ সালে পুনরুজ্জীবিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের খসড়া ম্যানিফেস্টোতে বলা হয়েছিল, “নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বীকৃত প্রতিটি মৌলিক অধিকার ভোগের অধিকারী। আইনের চোখে সকলে সমান বলে গণ্য হবে।” ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জন আন্দোলনে নারীদের নেতৃত্ব প্রদান করেন মতিয়া চৌধুরী। ১৯৬৪ সালে শিক্ষা দিবসের কর্মসূচিতে আজিমপুর গার্লস স্কুলের পিকেটিংয়ে অংশ নেওয়ার অপরাধে শেখ হাসিনা, নাসিমুন আরা হক মিনু, সুলতানা কামালসহ ১০ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়।
১৯৬৬ সালের ৬-দফা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমেনা বেগমকে মনোনয়ন করতে চাইলে দলের অনেকে আপত্তি তোলে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “নারীদেরও পুরুষদের মতো সমান অধিকার এবং তা রাজনীতির ক্ষেত্রেও। ১৯৬৯ সালে ১১-দফা আন্দোলনে ১৯ মার্চ পুলিশ ছাত্রী মিছিলে লাঠিচার্জ করে। বিভিন্ন সময়ে তারা আন্দোলন করে এবং ১৮ জন নারী প্রতিনিধি গণতন্ত্রের জন্য একসাথে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। ময়মনসিংহে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের মিছিলে নেতৃত্ব দেন সোফিয়া করিম। এছাড়াও এ আন্দালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নারীরা। ১৯৬৯-এ বেগম সুফিয়া কামাল গড়ে তোলেন মহিলা সংগ্রাম পরিষদ। পরবর্তীতে এই সংগঠন ১৯৭০ সালের ৪ এপ্রিল রূপান্তরিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদ’। কবি বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে ঢাকা ও সারাদেশে মহিলাদের সংগঠিত করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন নারীনেত্রী মালেকা বেগম, মুনিরা খান, আয়েশা খানম, বেলা নবী, ডা. ফাওজিয়া মোম্মেন, ডা. মাখদুমা নার্গিস, ডা. নাজমুন নাহার প্রমুখ তরুণ নারী নেত্রীগণ।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের ৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদে ১০টি আসনে অপ্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন ১৭ নারী প্রতিনিধি। ১৯৬৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ফুলার রোডে আওয়ামী লীগের একটি সভায় মহিলা আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। সভাপতি হন বেগম বদরুন্নেসা আহমাদ এবং সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ নারীদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। ২৫ মার্চের পূর্বেই ‘মহিলা সংগ্রাম কমিটি’ গঠিত হয়। ঐ কমিটির তত্ত্বাবধানে ঢাকা শহরের বেশ কিছু পাড়ায় আসন্ন মুক্তিসংগ্রামের প্রস্তুতি হিসেবে মহিলাদের সংগঠিত করা হয়। ঐসব সংগঠনে ছাত্রী, রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য মা-বোন এবং সাধারণ নারীরাও যোগ দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে এক পর্যায়ে প্রথমে ওপারে ছাত্রলীগের রাইফেল ট্রেনিংয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের ট্রেনিংয়ে মার্চপাস্টে নেতৃত্ব দেন কাজী রোকেয়া সুলতানা, ড. নেলী ও রোকেয়া প্রমুখ ছাত্রী নেতৃবৃন্দ। ছাত্রলীগের মার্চপাস্ট ও ট্রেনিং বিশেষ ভূমিকা পালন করেন মমতাজ বেগম প্রমুখ। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কলাবাগানের ‘মরিচা হাউসে’ মিসেস টিএন রশিদের পরিচালনায় প্রায় ২০০ মহিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৩ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ২৩ মার্চ মার্চপাস্ট করে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর হাতে মানচিত্র খচিত পতাকা তুলে দেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম দিকে মুজিবনগর সরকার ভারত সরকারের সমর্থনে কলকাতার পদ্মপুকুর এলাকার গোবরাতে ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেন। নূরজাহান মুরশিদকে ১৯৭১-এ বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকারের ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করলে তিনি ভারতের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার করে বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য সমর্থন আদায়ে প্রচেষ্টা চালান। রাফিয়া আক্তার ডলি অস্থায়ী সরকারের দেওয়া দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন কর্মীদের সাথে রাজনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করে সভা-সমিতির আয়োজন করেন। তিনি কলকাতার পার্ক সার্কাসে ‘খাইরুননেসা কল্যাণ সমিতি’ গঠন করেন। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সহায়ক কমিটির আহ্বায়িকা ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক অঞ্জলী লাহিড়ী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধ সফল করার জন্য দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ইতিহাসে সকল নারীর নাম হয়তো উঠে আসেনি। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে নারীরা নিজে সংগঠিত হয়ে সকল নারীকে সংগঠিত করার প্রয়াস চালিয়েছে। শুধু দেশেই নারীরা সংগঠিত হয়নি। নারীরা প্রবাসেও চেষ্টা করেছে তাদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানানোর জন্য।
বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে পূর্ববাংলা থেকে ‘পিছ কনফারেন্স অব দ্য এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক রিজিওন্স’-এ যোগদানের উদ্দেশে চীন সফর করেছিলেন। সেই সফর নিয়ে তিনি লিখেছিলেন ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থ। উক্ত গ্রন্থে এক পর্যায়ে তিনি লিখেছেন, “আজ নয়াচীনে সমস্ত চাকরীতে মেয়েরা ঢুকে পড়েছে, পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছে। প্রমাণ করে দিয়েছে পুরুষ ও মেয়েদের খোদা সমান শক্তি দিয়েই সৃষ্টি করেছে। সুযোগ পেলে তারাও বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক, ডাক্তার, যোদ্ধা সকল কিছুই হতে পারে।” বঙ্গবন্ধুর কথার সূত্র ধরে যদি বর্তমান বাংলাদেশকে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যায়Ñ তারই কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যিনি ছায়া হয়ে পাশে ছিলেন, তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনিও একজন নারী রাজনীতিবিদ।
১৯৭১ সালে নির্যাতিত নারীদের বঙ্গবন্ধু ‘বীরাঙ্গনা’ খেতাবে ভূষিত করেন। নির্যাতিত নারীদের পিতার নামের স্থানে তিনি শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাড়ির ঠিকানা ধানমন্ডি ৩২ দিতে বলেন। তারই ধারাবাহিকতায় তার স্বপ্নের পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু নারীর অগ্রযাত্রাকে স্থায়ীরূপ প্রদান করতে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে মাত্র ৯ মাসের মধ্যেই ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন করেন। সেই সংবিধান কমিটির একমাত্র মহিলা সদস্য ছিলেন বেগম রাজিয়া বানু। সংবিধানের ১৭, ১৯, ২৮, ২৯-সহ অনুচ্ছেদে সমাজের সর্বস্তরে নারীর অশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধু নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সালে গঠন করেন ‘নারী পুনর্বাসন বোর্ড’। ১১ জন প্রখ্যাত শিক্ষক নারীনেত্রী ও রাজনৈতিক কর্মী উক্ত বোর্ডের সদস্য ছিলেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৭৩-১৯৭৮) স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের প্রাধান্য প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে ১৫ জন জাতীয় সংসদে নারী সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালে মন্ত্রিসভায় অধ্যক্ষ বদরুন্নেসা আহমাদ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং অধ্যাপক নূরজাহান মুরশিদ সমাজকল্যণ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে সাভারে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ৩৩ বিঘা জমির ওপর চালু করা হয় কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি। বাংলাদেশ গার্লস গাইড এসোসিয়েশনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এছাড়াও নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
১৯৭৪ সালে অধ্যাপক ড. নীলিমা ইব্রাহিম বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নারীদের জন্য সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় এবং নারীদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত আসনেরও ব্যবস্থা করা হয়। মুসলিম নারীদের বৈবাহিক জীবন ও মর্যাদা অধিকার নিশ্চিতে ১৯৭৪ সালে প্রণীত হয় ‘মুসলিম ম্যারেজ অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’। ১৯৭৪ সালে নারী উন্নয়ন বোর্ডকে পুনর্গঠন করে সংসদে অ্যাক্টের মাধ্যমে ‘নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ রূপান্তর করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম নারী সংগঠন জাতীয় মহিলা সংস্থার ভিত্তি রচনা করেন বঙ্গবন্ধু।
১৯৭৭ সালের এপ্রিল মাসে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দ্বিতীয় দিনে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট সাংগঠনিক কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। ১৯৭৮ সালে কাউন্সিল অধিবেশনে জোহরা তাজউদ্দীন জানান, তিনি ৫৭টি সাংগঠনিক জেলার দলীয় কর্মী সমাবেশে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে ১৭ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা দলের হাল ধরেন। এক ধরনের বৈরী পরিবেশে তিনি দলকে সংগঠিত করতে থাকেন। নানা চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ১৯৯৭ সালের ৮ মার্চ ‘জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি’ প্রণয়ন করেন।
বঙ্গবন্ধু তার ‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, “নয়াচীনের উন্নতির প্রধান কারণ পুরুষ ও মহিলা আজ সমানভাবে এগিয়ে এসেছে দেশের কাজে। সমানভাবে সাড়া দিয়েছে জাতি গঠনমূলক কাজে। তাই জাতি আজ এগিয়ে চলেছে উন্নতির দিকে।” পঞ্চাশ দশকে বঙ্গবন্ধু নারী ও পুরুষের সমানভাবে কাজ করার দিকে যে জোর প্রদান করেছিলেন, তারই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে গত চার দশক ধরে যিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনায়। যিনি শত বাধাবিপত্তিতে থমকে যাননি। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা। তবে এত অর্জনের পরও রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ নয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেত্রী, স্পিকার, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি নারী। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এটি নারী রাজনীতিতে একটি শুভ সংবাদ। স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণও আশাব্যঞ্জক। বিশ্বে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে সপ্তম স্থান অর্জন করেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির আহ্বানে নারী নেতাদের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারী নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোকে পর্যাপ্ত রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এ ধরনের প্রচেষ্টায় সহায়তার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। নারীর সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণের জন্য নারীকেই সচেতনভাবে অগ্রসর হতে হবে। নারীর সকল ক্ষমতায়নের সাথে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নও জরুরি। এ সমাজে বারেবারে বেগম রোকেয়ার মতো নারী ফিরে আসুকÑ এটাই প্রার্থনা। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে সচেতনভাবে। আর সমাজ নারীকে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন অর্জনে স্বাগত জানাবে। তাহলেই সমাজ ও রাষ্ট্র শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার এই দেশে নানা সংগ্রামে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সম্পৃক্ততা বিশেষভাবে স্মরণীয়। একদিকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, অন্যদিকে সমাজের দেয়াল ভেঙে বাইরে আসার যুদ্ধ প্রতিনিয়ত নারীকে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন করেছে। তথাপি সকল ধরনের বাধা উপেক্ষা করে নারীরা ইতিহাসের স্তরে স্তরে তাদের গৌরবোজ্জ্বল অবদান রেখেছে।

লেখক : লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য