অনিন্দ্য আরিফ দিব্য: আফসোস নাগালে পেয়েও শ্রীলংকাকে হোয়াইটওয়াশ করতে না পারা। আর সাকিবের আফসোস ১ উইকেটের। বাংলাদেশ যেভাবে সিরিজের প্রথম ২ ম্যাচে শ্রীলংকাকে উড়িয়ে দিয়েছিল; তাতে ওই দুই ঘটনাই ঘটার অপেক্ষায় ছিল অধীর আগ্রহে ছিল ক্রিকেট আমোদীরা। কিন্তু বিধিবাম; শেষ ম্যাচ হয়নি নিজেদের মতো। ২-১ সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশ। এটাই শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়। ক্রিকেট বর্ষের সূচনা সুবিধা পেয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ আইসিসি’র সর্বশেষ র্যাংকিংয়ের পরিসংখ্যানক্রমে স্পর্শ করেছে ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ।
সুপার লিগে ৮ ম্যাচে ৫ জয়ে বাংলাদেশের এখন অর্জিত পয়েন্ট ৫০। ৪০ পয়েন্ট নিয়ে রানরেটের ব্যবধানে পরের স্থানে যথাক্রমে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং অস্ট্রেলিয়া। রানরেট বিবেচনায় নিউজিল্যান্ড, আফগানিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩০ পয়েন্ট করে নিয়ে যথাক্রমে পাঁচ, ছয় এবং সাতে রয়েছে। বিরাট কোহলির ভারত ২৯ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে আট নম্বরে। ৯ এবং ১০ নম্বরে থাকা জিম্বাবুয়ে এবং আয়ারল্যান্ডের পয়েন্ট ১০ করে। ৯ পয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকা রয়েছে ১১ নম্বরে। সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে শ্রীলংকার পয়েন্ট ৮। নেদারল্যান্ডসের এখনও পয়েন্ট শূন্য।
শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ জিতে নতুন এক মাইলফলক সৃষ্টির অনন্য ইতিহাস গড়ার কারিগর হিসেবেÑ মুশফিক, তামিম, মিরাজদের ভূমিকা অনবদ্য। তবে এই আসরকে ঘিরে বাড়তি আতশি চোখ ছিল ব্যাটে-বলে ‘নাম্বার ওয়ান’ সাকিবের ওপর। ৩ উইকেট নিয়ে মাইলফলক ছুঁয়ে দেখা হলেও নতুন করা হয়নি। এই সিরিজেই সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তজার সমান ২৬৯ উইকেট স্পর্শ করেছেন সাকিব। একটি মাত্র উইকেট পেলেই এককভাবে দুটি রেকর্ডের মালিক হয়ে যেতেন সাকিব আল হাসান। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হতে বাকি ছিল একটি উইকেট। মাশরাফি ২১১ ও সাকিব ২১৮ ম্যাচ খেলে ওই মাইলফলকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পাশাপাশি এক ভেন্যুতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের সুযোগ ছিল সাকিবের সামনে। পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরামকে ছাড়িয়ে যেতে প্রয়োজন ছিল একটি উইকেট। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৭৭ ম্যাচে ১২২ উইকেট নিয়েছেন আকরাম। আর মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৮৪ ম্যাচে ১২২ উইকেট পূর্ণ করেছেন সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই। কিন্তু হয়নি সাকিবের সেই স্বপ্ন পূরণও। শ্রীলংকার বিপক্ষে চলমান ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুটিতে ৩ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ১ উইকেট নিতে পারলেই নতুন দুটি রেকর্ডের মালিক হতেন তিনি।
প্রথম দুই ম্যাচের জয়ের আবেশ নিয়ে খেলতে নেমে বেধড়ক পিটুনি খেয়েছেন বোলাররা। একমাত্র সফলের খাতায় নাম লিখিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ; নিয়েছেন ৪ উইকেট। বাকি দুইয়ের একটি শরিফুলের অন্যটি রান আউট। শ্রীলংকার ২৮৬ রানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ব্যাটিং করে তুলেছিল মাত্র ১৮৯। দুই হাফ সেঞ্চুরির একটি মাহমুদউল্লার; অন্যটি মোসাদ্দেকের। ৯৭ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নিয়েছে শ্রীলংকা। এর আগে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ ৩৩ রানের ব্যবধানে। মুশফিকের ৮৪ রানের সঙ্গে মাহমুদউল্লার ৫৪ এবং তামিমের ৫২ রানে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৫৭। জবাবে মিরাজ, মোস্তাফিজ এবং সাইফউদ্দিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শ্রীলংকা ২২৪ রানে অল-আউট হয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচ বৃষ্টি আইনে জয়ের ব্যবধান বাংলাদেশের পক্ষে ১০৩ রানের। মুশফিকের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ তুলেছিল ২৪৬ রান। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ এই ম্যাচেও করেছিলেন ৪১। জবাবে বৃষ্টিকবলিত ম্যাচে (টার্গেট ২৪৫/৪০) শ্রীলংকা তুলতে পেরেছিল ১৪১/৯ রান। এই ম্যাচে মিরাজ, মোস্তাফিজ ও সাকিবের বোলিংয়ে ভর করে বাংলাদেশ বড় জয় পেয়েছিল।
এই সিরিজেই বাংলাদেশের অফ-স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ আইসিসি ওডিআই বোলিং র্যাংকিংয়ে দুইয়ে উঠেছেন। শীর্ষ দশে ওঠা বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তিনি এই অর্জনে নাম লিখিয়েছেন। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩০ রানে ৪ উইকেট এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পর তিন ধাপ উন্নতি হয়েছে মিরাজের। ২০০৯ সালে সাকিব আল হাসান প্রথমবারের বিশ্ব র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে উঠেছিলেন। ২০১০ সালে আবদুর রাজ্জাক শীর্ষ দুইয়ে নাম লিখিয়েছিলেন। এই সিরিজে দারুণ উন্নতি হয়েছে কাটার মোস্তাফিজুর রহমানেরও। আট ধাপ এগিয়ে এখন ৯ নম্বরে তিনি।
শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ জয়ের উচ্ছ্বাস থাকলেও আক্ষেপ পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট না পাওয়ায়। সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে কঠিন সব বৈতরণী। অপেক্ষায় সুপার লিগের আরও ৫টি সিরিজ। ১৩ দলের এই সুপার লিগ চালু হয়েছে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব হিসেবে। স্বাগতিক ভারত ও সুপার লিগের অন্য শীর্ষ সাত দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে। সুপার লিগের তলানির পাঁচ দলের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে না। আইসিসি সহযোগী ৫টি দেশের সঙ্গে বাছাইপর্ব খেলতে হবে তাদের। সেই ১০ দলের বাছাই থেকে উঠে আসবে বিশ্বকাপের বাকি দুটি দল। চ্যালেঞ্জ তাই সেখানেও বেশ কঠিন। সেই অনিশ্চিতাকে পেছনে ফেলে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ জয় দারুণ এক সূচনা। সুপার লিগের জন্য প্রতিটি দলকেই খেলতে হবে ৮টি করে সিরিজ। দেশে ও বিদেশে সমান ৪টি করে সিরিজ। প্রতি সিরিজে ম্যাচ ৩টি করে। ২৪টি ম্যাচের ফলাফল থেকে নির্ধারিত হবে দলগুলোর ভাগ্য। প্রতিটি জয়ের জন্য পয়েন্ট ১০, টাই বা পরিত্যক্ত ম্যাচে পয়েন্ট দুই দলের সমান ৫ করে। আইসিসির ভবিষ্যৎ সফরসূচির সময় দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছে কে কার বিপক্ষে কোথায় খেলবে। বাংলাদেশের যেমন সুপার লিগের খেলা নেই ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে।
টেবিলের শীর্ষে বাংলাদেশের পরের চ্যালেঞ্জ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আগামী জুলাইয়ে সেই সফরের সিরিজ। এরপর বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সেই সিরিজটি দেশের মাঠে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। এটিও দেশের মাঠে। কিন্তু যথারীতি, আরেকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। সুপার লিগে দেশের মাঠে আফগানিস্তান সিরিজই বাংলাদেশের শেষ। এরপর সফর দক্ষিণ আফ্রিকায় ও আয়ারল্যান্ডে।
বাংলাদেশ যেমন সিরিজ ধরে ধরে সম্ভাব্য পয়েন্টের কিছু লক্ষ্য ঠিক করেছে, প্রতিপক্ষরাও একইরকম ছক সাজাচ্ছে। সব দলই যতটা সম্ভব সর্বোচ্চ পয়েন্টের জন্য বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে চাইবে। সেভাবেই তারা প্রস্তুতি নেবে।
শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সর্বশেষ ১০ ম্যাচে জয় পায়নি বাংলাদেশ। সেই দলের কাছে নাকাল হওয়ায় জয়াসুরিয়া খুবই ব্যথিত হয়েছেন। শ্রীলংকাকে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জেতানো ওপেনার সনাথ জয়াসুরিয়া টুইটারে হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘একজন সাবেক খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের কাছে প্রথম সিরিজ হার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার।’