Friday, September 22, 2023
বাড়িউত্তরণ প্রতিবেদনঅমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন

উত্তরণ প্রতিবেদন: মায়ের ভাষা বাংলার প্রতি গভীর অনুরাগ আর নিজস্ব জাতিসত্তা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, কৃষ্টি, জীবনযাপনের স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ে গত ২১ ফেব্রæয়ারি পালিত হয়েছে অমর একুশে।
বায়ান্নর অবিনাশী চেতনার উজ্জ্বলতম দিনে পূর্ব পুরুষের গৌরব বুকে নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচার শপথ নিয়েছে বাঙালি। মৌলবাদ ধর্মান্ধতার কাছে মাথা নত করা কৌশলী রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি উদার অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থা গড়ে তোলার জোর দাবি জানিয়েছে। একইদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয়েছে ইউনেস্কো ঘোষিত ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে।
প্রতিবারের মতো এবারও একুশের ডাকে জেগে উঠেছিল বাংলাদেশ। তন্দ্রাচ্ছন্ন জাতিকে জাগিয়ে দিতে এসেছিল অমর একুশে। এদিন মায়ের ভাষার জন্য আত্মত্যাগ করার গৌরব আর অর্জনের আনন্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সাদা-কালো রঙের পোশাকে সেজে বের হন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। প্রভাতফেরি, প্রভাতফেরি/আমায় নেবে সঙ্গে,/বাংলা আমার বচন, আমি/জন্মেছি এই বঙ্গে…। নগ্নপায়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নেন বঙ্গ সন্তানেরা। সব বয়সী মানুষ কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গায় : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রæয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি…।
মহান শহিদ দিবসে বরকত রফিক শফিক জব্বারদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। লাল সবুজের পতাকার পাশাপাশি ওড়ানো হয় শোকের কালো পতাকা। অনেকে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেন। এর বাইরে প্রায় সারাদিন শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।
একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শহিদ বেদিতে ফুল দেন। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্থান ত্যাগ করার পর সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের দীর্ঘ সারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় ছাড়িয়ে নীলক্ষেত ও ইডেন কলেজের সামনে গিয়ে ঠেকে। বিভিন্ন সভা সমিতি সংঘের নামে ভাগ হয়ে আসা মানুষের হাতে ছিল ফুলের স্তবক। অনেকে স্ত্রী-সন্তানসহ আসেন। তাদের হাতে ছিল এক গুচ্ছ গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা বা গ্যাডিউলাস। সারারাত ধরে চলে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন। সকাল বেলায় জনস্রোত আরও বড় হয়। হাজার হাজার মানুষ ফুল হাতে শহিদ মিনারের পানে এগিয়ে যান।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের অংশ হয়েছিলেন অনেক বিদেশি নাগরিকও। তারাও ফুল দিয়ে ভাষা শহিদদের প্রতি ভালোবাসা জানান।
ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতির মিনার। অর্ঘ্যরে ফুলে শহিদ মিনারকে চমৎকার সাজিয়ে নেন স্বেচ্ছাসেবীরা। বিএনসিসি, রেডক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউট সদস্যরা ফুল দিয়ে বাংলা বর্ণমালা তৈরি করেন। প্রশস্ত সিঁড়িতে আঁকেন বাংলাদেশের মানচিত্র। সাজানো শহিদ মিনার দূর থেকে প্রত্যক্ষ করার জন্যও বহু মানুষ ভিড় করেন। সারাদিন এ ভিড় লক্ষ করা গেছে।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার যে স্ফুরণ ঘটেছিল তা-ই পরবর্তীতে বাঙালির জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় মনস্তাত্তি¡ক ও সাংস্কৃতিক প্রেরণা জোগায়। নিজ মাতৃভাষার প্রতি সম্মান জানানোর বিশেষ অনুপ্রেরণা হয়ে আসে ২১ ফেব্রæয়ারি। ভাষার অধিকারের পক্ষে লড়ার পাশাপাশি, ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে একুশ ছিল বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ। শহিদ মিনারে আসা জনস্রোত প্রতিরোধের আগুন জ্বালিয়ে রাখার আহŸান জানায়।
সারাদেশের মহানগর, জেলা, থানা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অগুনিত শহিদ মিনারে ভাষা শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ।

আরও পড়ুন
spot_img

জনপ্রিয় সংবাদ

মন্তব্য