সম্পাদকের কথা: বিংশ শতাব্দী শেষ হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর বিপ্লবের সূচনা করে। একুশ শতকে এই প্রযুক্তি-বিপ্লব এখন নতুন স্তরে উন্নীত হয়েছে। বাঙালি জাতির সৌভাগ্য, শেখ হাসিনার মতো বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক ও দূরদর্শী নেতা পাওয়ায় বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে। আজ বিশ্বব্যাপী করোনা সংকট যে অভিনব পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তা মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা আমাদের অনিবার্য ধ্বংসের হাত থেকে বহুলাংশে রক্ষা করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে না উঠলে, আমাদের দেশ, সমাজ, অর্থনীতি এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান আজ চরম অচলাবস্থার মধ্যে পড়ত।
স্মর্তব্য যে, ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাগ্রহণের পরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ বিকাশের পথ উন্মুক্ত করে দেন। সে-সময় ‘সিটিসেল’ নামে বিএনপি-র এক প্রভাবশালী নেতার মালিকানায় একমাত্র মোবাইল কোম্পানির মালিকানা দেওয়া হয়েছিল। একটি মোবাইলের দাম তখন দেড় লাখ থেকে ২ লাখ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সেই ‘মনোপলি’ ভেঙে দেয়। সকলের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে আবার ‘মাদারীর খেইল’ দেখান প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তার মধ্যযুগীয় মানসিকতার উপদেষ্টারা/মন্ত্রীরা বিনা পয়সায় আন্তর্জাতিক ক্যাবল সংযোগের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেশকে কয়েক বছর পিছিয়ে দেয়। খালেদা যুক্তি দেখান ভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ক্যাবল লাইন নেওয়ার সুযোগ দিলে ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের’ প্রতি হুমকি সৃষ্টি হবে। এই মুর্খদের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের জন্য নিজেদের গাঁটের-পয়সা খরচ না করে আন্তর্জাতিক ক্যাবল লাইনের সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হই। পরে অবশ্য শেখ হাসিনার আমলে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ ক্যাবল লাইনের সাথে সংযুক্ত হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। তিনি ঘোষণা করেন, দেশের সব কয়টি ইউনিয়নকে পর্যায়ক্রমে ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে সকল প্রকার বাধা-নিষেধ তুলে নেওয়া হয়। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে নতুন করে আইন প্রণয়ন করা হয়। অন্যদিকে কম্পিউটারের আমদানি শুষ্ক রেয়াত দেওয়া হয়। দেশে যাতে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সফটওয়্যার শিল্প গড়ে ওঠে, সে লক্ষ্যে গাজীপুরে আইসিটি নগরী গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন সফটওয়্যার রপ্তানি করছে। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে বাংলাদেশের নিজস্ব ভূ-উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট’ উদ্বোধনের ভেতর দিয়ে। বাংলাদেশ এখন মহাকাশ যুগে প্রবেশ করেছে। স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপায়িত হয়েছে।
সারাদেশে এখন ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিপ্লবকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের উদ্যোগের ফলে বর্তমান করোনা সংকটকালে ইন্টারনেটের সুবাদে সরকারি অফিস-আদালত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও সমাজের চালিকা প্রতিষ্ঠান ঘরে বসেও সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে। জীবনহানির আশঙ্কায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হলেও ছাত্রদের শিক্ষা-জীবন যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে যেমন দৈনন্দিন রাষ্ট্রকর্ম পরিচালনা করছেন, তেমনি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে মিলিত হচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের ‘পাবলিক ফাংশন’ বন্ধ করে দেওয়া হলেও অনলাইনে অনুষ্ঠান হচ্ছে। অনলাইনে উদ্যাপিত হচ্ছে পয়লা বৈশাখ। বদলে গেছে ভার্চুয়াল জগৎ। প্রতিদিন অনলাইনে মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার ব্যবহার করে শত শত সংগীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি ও প্রশিক্ষণসহ বিচিত্র ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকা- চলছে। করোনা কিছু মূল্যবান জীবনের অবসান ঘটাতে পারলেও মানুষের অদম্য সৃজনশীলতা এবং জীবনকে অচল করে দিতে পারেনি। ডিজিটাল বাংলাদেশে গড়ে উঠছে ভার্চুয়াল সংস্কৃতি। বন্ধ করতে পারেনি আমাদের অগ্রযাত্রার শকট। জীবনজয়ে ব্রতী বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বর্তমান সংকট কাটিয়ে করোনামুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোর সামনে ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা চতুর্থ বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছি। যুগের সাথে তাল মিলাতে হলে এই বিপ্লবকে আমাদের দ্রুত আত্মস্থ করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সবকিছু বদলে দিচ্ছে; আমাদেরও বদলে যেতে হবে। আমরা পারব। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজটা শুরু হয়েছে।
